ঘিলাতলীর লুট কীর্তনে রক্তাক্ত সংঘর্ষ, আহত ৮, এলাকা জুড়ে উত্তেজনা

কল্যাণপুর, ১৫ জানুয়ারি : খোয়াই জেলার অন্তর্গত কল্যাণপুর থানা এলাকার ঘিলাতলীর পালপাড়ায় মকর সংক্রান্তি ও পৌষ পার্বণের লুট কীর্তন উৎসব চরম সংঘর্ষে রূপ নিল। ঐতিহ্যবাহী এই লুট কীর্তন, যা একসময় গ্রামের সম্প্রীতি ও আনন্দের প্রতীক হিসেবে পরিচিত ছিল, এ বছর রক্তাক্ত সংঘর্ষের কারণে এক ভয়াবহ অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে থাকল।

লুট কীর্তন বাংলার গ্রামীণ সংস্কৃতির এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। সাধারণত পৌষ মাসে অনুষ্ঠিত এই অনুষ্ঠান কৃষিজীবী সমাজের ঐক্য ও আনন্দের প্রতীক। পুরাণ মতে, মকর সংক্রান্তি হলো দেবতাদের কাছে দান ও পুন্য করার একটি দিন। কিন্তু এ বছর এই উৎসবের শান্তি নষ্ট হয়ে চরম সংঘর্ষে পরিণত হয়। মঙ্গলবার পালপাড়ার লুট কীর্তন চলাকালীন দুই পক্ষের মধ্যে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। কথার ঝগড়া ধীরে ধীরে সংঘর্ষে রূপ নেয়। সংঘর্ষে দা, কুড়াল, খনতি, ও সাবলের মতো ধারালো অস্ত্র ব্যবহার করা হয় বলে অভিযোগ।

এই সহিংসতার ফলে ৮ জন গুরুতর আহত হন তারা হলেন মিঠুন সরকার (৩৮), বন্ধন বিশ্বাস (৩২), বিশ্বজিৎ সরকার (৩৮), রঞ্জিত সরকার (৩৮), সঞ্জিত সরকার (৩৮), গোপাল সরকার (৪৭), হরিবল সরকার (৫৫), পরিমল সরকার (৫৯) আহতদের মধ্যে কয়েকজনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর বাড়ি পাঠানো হলেও, গুরুতর আহতদের আগরতলার জিবি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।

ঘটনার খবর পেয়ে কল্যাণপুর থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। রাতে বিশাল পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয় এবং বুধবার দিনভর টহল জারি ছিল এই টহলদারি। কল্যাণপুর থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক তাপস মালাকার জানান, “ঘটনার বিষয়ে তদন্ত শুরু হয়েছে এবং যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।” সংঘর্ষে আহতদের পক্ষ থেকে থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তবে অপর পক্ষ থেকেও পাল্টা মামলা করা হয়েছে। ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়েছে। ঐতিহ্যবাহী লুট কীর্তন সাধারণত ধর্মীয় এবং সামাজিক সম্প্রীতির প্রতীক। গ্রামের মানুষ একত্রিত হয়ে মিষ্টি ও প্রসাদ ভাগ করে নেন।

তবে গত কয়েক বছরে কিছু অঞ্চলে এই উৎসবের মধ্যে পারিবারিক বা ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ঢুকে পড়েছে, যা সহিংসতার সৃষ্টি করছে। এ ধরনের ঘটনা রাজ্যে বিরল হলেও এই বছর পালপাড়ার ঘটনাটি লুট কীর্তনের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায় হয়ে রইল। ঘটনার পর গোটা পালপাড়া এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। অনেকে এই ঘটনা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং ভবিষ্যতে এই ধরনের উৎসবের সময় পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন। এই ধরনের ঘটনা শুধু একটি উৎসবের গুরুত্বকেই ক্ষুণ্ণ করে না, বরং গ্রামীণ সম্প্রীতি ও ঐতিহ্যকেও প্রশ্নের মুখে দাঁড় করায়। প্রশাসনের উচিত এ বিষয়ে কড়া পদক্ষেপ নেওয়া এবং লুট কীর্তন অনুষ্ঠানের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। লুট কীর্তনের মতো আনন্দমুখর অনুষ্ঠান সহিংসতায় পরিণত হওয়া আমাদের সংস্কৃতির উপর একটি গভীর আঘাত। এটি শুধুমাত্র একটি উৎসবের ক্ষতি নয়, বরং সমাজের শান্তি ও সম্প্রীতির উপরও প্রভাব ফেলেছে। এখন দেখার বিষয় প্রশাসন এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *