১৩, ১৪, ১৫ জানুয়ারি আন্দোলনের ডাক কলকাতা মেট্রোর মোটরম্যানদের

কলকাতা, ৮ জানুয়ারি (হি.স.): বিভিন্ন নির্দিষ্ট প্রতিবাদে ১৩, ১৪, ১৫ জানুয়ারি বড় আন্দোলনের ডাক দিয়েছে কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে মোটর মেনস ইউনিয়ন। তারা সেদিন থেকে ৭২ ঘণ্টা রিলে অনশন করতে পারেন। সংবাদমাধ্যমে বুধবার একথা জানিয়েছেন কলকাতা মেট্রো রেলওয়ে মেনস ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক সুজিত কুমার ঘোষ।

চালক অর্থাৎ মোটরম্যান সঙ্কটে কলকাতা মেট্রো। কলকাতা মেট্রোয় শেষ মোটর ম্যান নিয়োগ হয়েছিল ২০১০ সালে। তারপর থেকে নানা পদ্ধতিগত জটিলতায় আটকে মোটরম্যান নিয়োগ। অভিযোগ, ১৫ বছর ধরে কলকাতা মেট্রো রেলে কোনও চালক নিয়োগ হয়নি। এর প্রতিবাদে অনশনে যেতে পারে কর্মী ইউনিয়ন।

এই মুহূর্তে শুধুমাত্র ‘ব্লু লাইনে’ মোটরম্যান ঘাটতি ১৮০। বাকি লাইন অর্থাৎ পিঙ্ক ও অরেঞ্জ মিলিয়ে ঘাটতি আরও প্রকট। এখন ব্লু লাইনে মোট মোটরম্যান রয়েছেন ২১৬। দিনে ট্রেন চলে ২৮৮। ৮ ঘণ্টার বদলে ১০ – ১১ ঘণ্টা ধরে কাজ করানো হচ্ছে মোটরম্যানদের। ২০২৫ সালে ৩১ শে ডিসেম্বরের মধ্যে অবসর নেবেন ২১ জন। তখন পরিস্থিতি শোচনীয় হয়ে উঠবে। দাবি কর্মী ইউনিয়নের।

আগে পশ্চিম রেলে দুই ভাবে মোটর ম্যান নিয়োগ হতো। একটা নিয়োগ সরাসরি হতো। আরেকটা আরআরবি অর্থাৎ রেল রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে হতো। যেটা ভারতের সমস্ত রেল জোনে হত। কিন্তু মেট্রো ১৯৮৪ সাল থেকেই সরাসরি মোটর ম্যান নিয়োগ করত। কারণ আরআরবি যেটা নিয়োগ করত সেটা হল এএলপি অর্থাৎ অ্যাসিস্ট্যান্ট লোকো পাইলট। পশ্চিম রেলে এটা নিয়ে ব্যাপক সমস্যা দানা বাঁধে। সিনিয়র জুনিয়র সমস্যা প্রকট হয়। ফলে ২০১২ সালে রেল বোর্ড গোটা দেশের সমস্ত রেল জোনে সরাসরি মোটর ম্যান নিয়োগ বন্ধ করে দেয়।

এতেই মারাত্মক সমস্যায় পড়ে কলকাতা মেট্রো। কারণ এএলপি-দের সরাসরি যাত্রী বহনের ছাড়পত্র নেই। সার্ভিস লাইফের অন্ততঃ প্রথম ১ বছর এএলপি দের আগে পণ্যবাহী ট্রেন চালাতে হয়। পরে যাত্রীবাহী ট্রেন চালানোর অনুমতি মেলে।

এখানেই সমস্যায় পড়ে যায় কলকাতা মেট্রো। কারণ মেট্রোয় পণ্য পরিবহনের কোনও প্রশ্নই নেই। আবার সরাসরি সিনিয়র লোকো পাইলট বা মোটরম্যান নিয়োগ বন্ধ। ফলে ২০১০ সালের পর থেকে আজকের তারিখ পর্যন্ত একজনও নতুন মোটরম্যান নিয়োগ হয়নি কলকাতা মেট্রোয়।

এদিকে মেট্রোর পরিসর বেড়েছে। জোকা থেকে চালু হয়েছে পিঙ্ক লাইন। কবি সুভাষ থেকে রুবি পর্যন্ত চালু হয়েছে অরেঞ্জ লাইন। সেক্টর ফাইভ থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত চালু হয়েছে গ্রিন লাইন। এসপ্ল্যানেড থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত চালু হয়েছে গ্রিন লাইন ২।

ওই একই সংখ্যক মোটরম্যান দিয়ে গোটা পরিষেবা সামাল দিতে হচ্ছে কলকাতা মেট্রোকে। ওভার টাইম ডিউটি করতে হচ্ছে কলকাতা মেট্রো চালকদের। পরপর ছুটি বাতিল হয়ে যাচ্ছে। ইমারজেন্সি বা জরুরি কারণেও ছুটি মিলছে না। অনেকেই মানসিক অবসাদে ভুগছেন। তার ওপর প্ল্যাটফর্মে ট্রেন ঢোকার আগে তারা আতঙ্কিত। যখন তখন যে কোনও স্টেশনে মানুষ ঝাঁপ দিচ্ছেন।

এই চাপ অনেক মোটরম্যান আর নিতে পারছেন না। একই অবস্থা ট্র্যাক রক্ষকদের। তাদের গত সাড়ে ৩ বছর ধরে টানা নাইট ডিউটি করতে হচ্ছে। কারণ দিনের বেলা পরিষেবা চলাকালীন ট্র্যাক রক্ষনাবেক্ষণ সম্ভব নয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *