উত্তর-পূর্বাঞ্চলে ৫০ কোটি টাকার মৎস্য উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও শিলান্যাস করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিং

আগরতলা, ৬ জানুয়ারি : প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনা (পিএমএমএসওয়াই) রূপায়ণের বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখতে আজ উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির একটি বৈঠকের আয়োজন করেছে মৎস্য, পশুপালন ও দুগ্ধ মন্ত্রকের অধীনস্থ মৎস্য দপ্তর। কেন্দ্রীয় মৎস, পশুপালন ও দুগ্ধ মন্ত্রী রাজীব রঞ্জন সিং-এই বৈঠকে পৌরহিত্যে করেছেন। বৈঠকে অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মন্ত্রকের রাষ্ট্রমন্ত্রী জর্জ কুরিয়ান, প্রতিমন্ত্রী এসপি সিং বাঘেল এবং অন্যান্যরা। এদিনের এই বৈঠকে উত্তর পূর্বাঞ্চলের প্রত্যেকটি রাজ্যের মৎস্য দপ্তরের মন্ত্রীগণ উপস্থিত ছিলেন। রাজ্যের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেছেন মৎস্য মন্ত্রী সুধাংশু চৌধুরী।

এদিনের এই বৈঠকে আলোচনা করতে গিয়ে মন্ত্রী সুধাংশু চৌধুরী জানান, ত্রিপুরায় মোট মৎস্য চাষী রয়েছেন প্রায় দু’লক্ষ। ত্রিপুরায় মোট ৩৮ হাজার ৫ ৯৪ হেক্টর জমিকে মৎস্য চাষের জন্য ব্যবহার করা হচ্ছে। রাজ্যে উৎপাদিত মাছের পরিমাণ ৮৫ হাজার মেট্রিক টন। রাজ্যে চাহিদা রয়েছে ১ লক্ষ ১৭ হাজার মেট্রিক টন মাছের। বাকি ৩২ হাজার মেট্রিক টন মাছের চাহিদা পার্শ্ববর্তী রাজ্য এবং পার্শ্ববর্তী রাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে পূরণ করা হয়।

মন্ত্রী আরো জানিয়েছেন, রাজ্যে প্রায় ১২ থেকে ১৫ হাজার মেট্রিক টন জায়গা রয়েছে যেগুলিকে জলাশয় হিসেবে মাছ চাষের জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এই জলাভূমি গুলিকে ব্যবহার করে রাজ্যের বাকি মাছের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব বলেও জানিয়েছেন মন্ত্রী। এর মাধ্যমে মৎস্য চাষে রাজ্যকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব বলে জানান রাজ্যের মৎস্য মন্ত্রী। এছাড়াও মৎস্য চাষে রাজ্যকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কেন্দ্রীয় প্রকল্পগুলি যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে বলেও উল্লেখ করেন।

উল্লেখ্য, উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে (এনইআর) মৎস্য খাতের একটি বড় উৎসাহ হিসাবে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ৫০ কোটি টাকার ৫০টি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তি স্থাপন করেছেন এদিন। এই ৫০ কোটি টাকার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের অংশ থাকবে ৩৮ কোটি ৬০ লক্ষ টাকা। এই উদ্যোগগুলি এই অঞ্চলের মৎস্য পরিকাঠামো, উৎপাদনশীলতা এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়ানোর জন্য চালু করা হয়েছে।

ত্রিপুরায় প্রকল্পগুলির মধ্যে রয়েছে শোভাবর্ধনকারী মাছ পালন ইউনিট এবং ফিনফিশ হ্যাচারি স্থাপন। এই উদ্যোগগুলির লক্ষ্য শোভাবর্ধনকারী মাছ চাষকে জনপ্রিয় করা, দেশীয় মৎস্য সম্পদকে কাজে লাগানো এবং স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা।

আসামে এই প্রকল্পগুলির মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল দারাং জেলায় একটি সুসংহত অ্যাকোয়া পার্ক প্রতিষ্ঠা, যা বছরে ১৫০ মেট্রিক টন মাছ উৎপাদন করবে বলে আশা করা হচ্ছে। পার্কটি ১০-১৫ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করবে এবং ২,০০০ কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করবে। কামরূপ জেলায় একটি বড় মৎস্য খাদ্য কেন্দ্র গড়ে তোলা হবে যাতে বার্ষিক ২০,০০০ মেট্রিক টন খাদ্য উৎপাদন হবে। অন্যদিকে স্থানীয় জলজ চাষকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করতে বিভিন্ন জেলায় হ্যাচারি প্রকল্পগুলিকে সহযোগিতা করা হবে যেখানে প্রতি বছর ৫০ মিলিয়ন স্পন উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে।

মণিপুরের খৌবাল ও ইম্ফল জেলায় মৎস্য উৎপাদন সংরক্ষণ এবং উৎপাদন পরবর্তী ক্ষতি কমানোর জন্য বরফ কারখানা এবং হিমঘর স্থাপন করা হবে। উপরন্তু, স্থানীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ মাছের প্রজাতির জন্য হ্যাচারিগুলিকে সহায়তা করা হবে যেগুলি রাজ্যে জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং মাছের উৎপাদন বৃদ্ধিতে অবদান রাখবে।

মেঘালয়ের প্রকল্পগুলি পূর্ব খাসি পাহাড় জেলায় বিনোদনমূলক মাছ চাষের প্রসারে কাজ করবে। কৌশলগতভাবে একটি জনপ্রিয় পর্যটন এলাকায় অবস্থিত এই উদ্যোগটি দর্শনার্থীদের ও আকৃষ্ট করবে। সেই সাথে প্রকল্পটি স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং এই অঞ্চলের পর্যটন কে বাড়িয়ে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নাগাল্যান্ডের তিনটি প্রকল্পের মধ্যে রয়েছ মোকোকচুং এবং কিফির জেলায় মিষ্টি জলের ফিনফিশ হ্যাচারি নির্মাণ। এই হ্যাচারিগুলি সম্মিলিতভাবে বার্ষিক ২১ মিলিয়ন পোনা উৎপাদন করবে, যা এই অঞ্চলের জলজ চাষকে সমর্থন করবে এবং জনজাতি সম্প্রদায়ের জন্য অর্থনৈতিক সুযোগ বাড়াবে।

সিকিম ২৪টি প্রকল্প রূপায়ণ করবে, যার মধ্যে রয়েছে সুস্থায়ী মাছ চাষের প্রচারের জন্য রিসার্কুলেটরি অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম (আরএএস) প্রতিষ্ঠা, গ্যাংটক এবং অন্যান্য শহরে মাছের দোকান নির্মাণ এবং শোভাবর্ধনকারী মাছ পালন ইউনিটগুলির উন্নয়ন। এই প্রকল্পগুলি স্থানীয় মানুষদের আয় বৃদ্ধি এবং জীবিকার সুযোগ বাড়িয়ে তুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মৎস্য খাত সম্পর্কে উত্তর-পূর্বাঞ্চল (এনইআর) মৎস্য ও জলজ চাষে স্বনির্ভরতার দিকে ভারতের যাত্রার অগ্রভাগে রয়েছে, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়নের পতি সরকারের অবিচল প্রতিশ্রুতির প্রত িফলন। মিষ্টি জলের প্রচুর সম্পদ এবং ব্যতিক্রমী জলজ জীববৈচিত্র্যের কারণে উত্তর পূর্ব কেবল একটি সম্ভাবনাময় অঞ্চলই নয়, সরকারের দূরদর্শী নেতৃত্বে অগ্রগতির একটি গতিশীল কেন্দ্র ও। জীববৈচিত্র্যের হটস্পট হিসাবে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃত, এই উত্তর পূর্ব অর্থনৈতিক বৃদ্ধি এবং জীবিকা বৃদ্ধির জন্য ভারতের কৌশলের মূল ভিত্তি হয়ে উঠেছে।

সরকার নীল বিপ্লব প্রকল্প, মৎস্য ও জলজ চাষ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল (এফআইডিএফ) এবং প্রধানমন্ত্রী মৎস্য সম্পদ যোজনার (পিএমএসওয়াই) মতো ফ্ল্যাগশিপ স্কিমের মাধ্যমে মৎস্যচাষের জন্য ২,১১৪ কোটি টাকার বিনিয়োগের অনুমোদন দিয়েছে। এই উদ্যোগগুলি পরিকাঠামোকে উল্লেখযোগ্যভাবে জোরদার করেছে, উৎপাদনশীলতাকে উন্নত করেছে এবং সুস্থায়ী অনুশীলনগুলিকে শক্তিশালী করেছে। ফলস্বরূপ, এনইআর-এ অভ্যন্তরীণ মাছের উৎপাদন ২০১৪-১৫ সালে ৪.০৩ লক্ষ টন থেকে বেড়ে ২০২৩-২৪ সালে ৬.৪১ লক্ষ টনে দাঁড়িয়েছে, যা ৫ শতাংশের মত আকর্ষণীয় বার্ষিক বৃদ্ধির হার অর্জন করেছে।

এই সাফল্যগুলি সরকারের গতিশীল নীতি এবং লক্ষ্যযুক্ত পদক্ষেপের কার্যকারিতার ফল যা উত্তর পূর্বকে ভারতের নীল অর্থনীতির দৃষ্টিভঙ্গির মূল চালক হিসাবে দৃঢ়ভাবে স্থাপন করেছে। অনুঘটক হিসাবে মৎস্য ও জলজ চাষের অপরিসীম সম্ভাবনাকে স্বীকৃতি দিয়ে মৎস্য অধিদপ্তর (ডিওএফ) এই অঞ্চলের উন্নয়নকে বিশেষ অগ্রাধিকার দিয়েছে। এই উদ্যোগসমূহের মধ্যে রয়েছে আধুনিক অ্যাকুয়াকালচার পার্ক, হ্যাচারি এবং ফিশ প্রসেসিং ইউনিট প্রতিষ্ঠা এবং বায়োফ্লক সিস্টেম এবং রিসার্কুলেটরি অ্যাকুয়াকালচার সিস্টেম (আরএএস) এর মতো উদ্ভাবনী প্রযুক্তির প্রসার করা। মৎস্য চাষিদের উৎপাদনশীলতা বাড়ানো, ভ্যালু চেইনকে শক্তিশালী করা এবং বাজারে প্রবেশাধিকার বাড়ানোই এই প্রচেষ্টার লক্ষ্য।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *