শীতেও মশার দাপটে অতিষ্ঠ জনগণ

বৈদ্যনাথ ভট্টাচার্য

মশাকে দমন করার জন্য নানা প্রকল্প ঘোষিত হয়েছে। মশার বংশ ধ্বংস করার জন্য বাৎসরিক ডিডিটি ছিটানো থেকে শুরু করে বক্তব্য, সেমিনার, সাংবাদিক সম্মেলন সহ নানা কিছু করা হচ্ছে। কিন্তু শীত পড়ার পরেও মশার দাপট কমানো যাচ্ছে না। কিছুদিন ধরে রাজ্যে জাঁকিয়ে শীত পড়ছে। এই সময়ে মশাদের উপদ্রব কমে থাকার কথা। কিন্তু এর ঠিক উল্টো চিত্রই দেখা যাচ্ছে। যেখানে বাড়ির লোকজন সবাই একসাথে বসে শীতের আমেজ অনুভব করার কথা, সেখানে মশার উপদ্রবের বাড় বাড়ন্ত থাকায় মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। এই বিষয়টি শুধুমাত্র শহরাঞ্চলেই নয়, বরং গ্রামাঞ্চলেরও বিভিন্ন এলাকায় মশার সক্রিয়তা চোখে পড়ার মতো।

এদিকে, ধর্মনগর শহরের প্রতিটি ওয়ার্ডেই মশার উপদ্রব চরমে উঠেছে। এই শীতের সময়ে মশার এত বাড়বাড়ন্ত দেখে সবাই অবাক। সকলেই জানেন, মশার কামড়ে ডেঙ্গু, ম্যালে রিয়া, এনকেফেলাইটিস সহ আরও মারাত্মক জটিল রোগ হয়। কিন্তু তারপরও মশার উপদ্রব রুখতে রাজ্য সরকার, প্রশাসন, পুরনিগম সহ স্বাস্থ্যদপ্তরের মধ্যে কারোর হেলদোল নেই। উল্লেখ্য দপ্তরগুলির উদাসীনতায় জনগণের মধ্যে ক্ষোভ অসন্তোষ বাড়ছে।

প্রসঙ্গত, ধর্মনগরের পাশ দিয়েই বয়ে গেছে জুড়ি নদী এবং বেশ কয়েকটি ছড়াও রয়েছে। এই সবগুলিই মৃতপ্রায় অবস্থায় আছে। বর্তমানে এগুলি মশক কুলের বংশ বিস্তারের মৃগয়া ভূমিতে পরিণত হয়েছে। মশার এই ধরনের বাড়বাড়ন্ত যদিও নতুন কিছু নয়, এসব আগেও ছিল। কিন্তু বামফ্রন্ট সরকারের পরিচালনায় ধর্মনগর পুর পরিষদ চলাকালীন বর্তমান ধর্মনগরের কুশিলবরা বাম সরকার পরিচালিত পুর পরিষদের দিকে আঙুল তুলে মশার উপদ্রব বন্ধে চরম ব্যর্থ বলে দাবি করতো। বর্তমানে বাম জমানার অবসান ঘটে রাম রাজত্ব শুরু হলেও মশার উপদ্রব থেকে ধর্মনগরবাসী রেহাই পায় নি।

এদিকে, সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ঝাঁকে ঝাঁকে মশা বাড়ি ঘরে হানা দিচ্ছে। ঘরের ভেতর, বারান্দায়, উঠান, বাড়ির গেটে, গলির রাস্তায় কোথাও বসা বা দাঁড়ানো যাচ্ছে না। সবখানেই মশা ঘিরে ধরছে। কানের সামনে, মুখের সামনে এসে বিরক্তিদায়ক ভন্ ভন্ শব্দ করছে। সন্ধ্যার পর মশা তাড়ানোর জন্য ঘরে ঘরে ধোঁয়া দিলেও কিছুক্ষণ পর আবারো মশা উপদ্রব শুরু করে দিচ্ছে। বিকল্প ব্যবস্থায় সাময়িক সময়ের জন্য হলেও মশা তাড়াতে গৃহকর্তা, গৃহকত্রী দোকান থেকে নানা উপকরণ কিনে আনছেন। তাতে ধনী-দরিদ্র প্রতি পরিবারের প্রতি মাসে প্রচুর টাকা পকেট থেকে খরচ হয়ে যাচ্ছে। তারপরও মশার যন্ত্রণা থেকে রক্ষা পাচ্ছেন না সাধারণ জনগণ।

এদিকে, গত পুর নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার সময় বিজেপি ধর্মনগরসীকে মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। কিন্তু মশার নির্মূল করার প্রতিশ্রুতি বিজেপি ক্ষমতায় আসার পরেও বাস্তবায়িত হয় নি। তাই অসন্তুষ্ট জনগণ প্রতিশ্রুতি মত কবে নাগরিকরা তার বাস্তবায়ন দেখতে পাবেন তা নিয়েও সন্দিহান প্রকাশ করছেন।

মশার কামড়ে নানা মারাত্মক ও জটিল রোগ হওয়া নাগরিকরা গভীর চিন্তায় পড়েছেন। শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে পরিবারের চিন্তা সবচেয়ে বেশি। এদিকে অভিযোগ পুরনিগম নালা, নর্দমা, আবর্জনা, জঞ্জাল ঠিকমতো পরিষ্কার করছে না। পরিষ্কারের জন্য ব্লিচিং পাউডারও ছিটিয়ে দিচ্ছে না। পুর নিগম, স্বাস্থ্য দপ্তর মশার বংশ বিস্তার রোধে ও মশা নির্মূল করার জন্য বিজ্ঞান ভিত্তিক সারা বছর ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও অভিযোগ উঠেছে। এই কারণে শীতের সময়েও মশার উপদ্রব অব্যাহত।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *