আগরতলা, ১৯ ডিসেম্বর : কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার কৃষকদের কল্যাণে কাজ করছে। কৃষকরা হলো অন্নদাতা। কৃষকদের স্বনির্ভর করে তোলার লক্ষ্যে বিভিন্ন প্রকল্পে সহায়তা করা হচ্ছে। আজ জিরানীয়ার মাধববাড়ি খাদ্য গুদামে ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় কর্মসূচির সূচনা করে কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী রতনলাল নাথ একথা বলেন।
খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক এবং কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সহযোগিতায় এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ভারত কৃষি প্রধান দেশ। কৃষকরা স্বনির্ভর হলে এক ত্রিপুরা শ্রেষ্ঠ ত্রিপুরা যেমন গড়ে উঠবে তেমনি এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত। কৃষকদের কল্যাণে রাজ্য সরকার বছরে দুবার ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় করছে। বর্তমান সরকার গঠিত হবার পরই কৃষকদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয়ের যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। ২০১৮-১৯ সালে রাজ্য সরকার কৃষকদের কাছ থেকে কেজি প্রতি ১৭.৫০ টাকা দরে ধান ক্রয় শুরু করে। প্রতি বছর তা বাড়িয়ে চলতি রবি মরসুমে প্রতি কেজি ধান ২৩ টাকা দরে ক্রয় করা হবে। গত মরসুমে প্রতি কেজি ধান ক্রয় করা হয়েছিল ২১ টাকা ৮৩ পয়সা দরে। এবছর রাজ্যে ২৩ টাকা সহায়ক মূল্যে ২১,৩১৫ মেট্রিক টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, রাজ্যে কৃষি সামগ্রীর উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য বিজ্ঞানসম্মত চাষাবাদের উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। এজন্য কৃষকদের অত্যাধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতিও ভর্তুকি মূল্যে দেওয়া হচ্ছে। কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করার জন্য সরকার গুরুত্ব দিয়েছে। এজন্য রাজ্যের বিভিন্ন কৃষি মহকুমায় কৃষি বাজার গড়েতোলা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারের লক্ষ্য কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করা। কৃষকদের সহায়তায় রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় কৃষি গুদাম, হিমঘর, কৃষক জ্ঞানার্জন কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। রাজ্যের অর্থনৈতিক বিকাশে কৃষি ও কৃষি সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলির উপর সবচেয়ে বেশি অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে।
অনুষ্ঠানে খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতাস্বার্থ বিষয়ক মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, সম্প্রতি বন্যার ফলে কৃষকদের বিরাট ক্ষতি হয়, তখন কৃষি দপ্তর কৃষকদের পাশে দাড়িয়েছে। ফলে এখন ধান ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে। কৃষকদের অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করার জন্য পূর্বে এরূপ কর্মসূচি ছিলনা। মূলত: কৃষকদের আয়কে দ্বিগুণ করা এবং তাদের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য প্রদান করে অর্থনৈতিক বুনিয়াদকে শক্তিশালী করে তুলতেই রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকার এই উদ্যোগ নিয়েছে। তিনি বলেন, আজ থেকে সারা রাজ্যে ৫১টি জায়গায় কৃষকদের কাছ থেকে সহায়ক মূল্যে ধান ক্রয় কর্মসূচির সূচনা হয়েছে।
বিগত বছরগুলিতে যখন অন্নদাতারা তাদের উৎপাদিত ধানের সঠিক বাজার মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছিলেন, ঠিক তখনই ২০১০৮-১৯ ইং থেকে রাজ্যে সরকার কৃষকদের কাছ থেকে কেজিঃ প্রতি ১৭.৫০ টাকা হিসাবে ধান কেনার সূচনা করেন।গত পাঁচ-ছয় বছরে তা বেড়ে, চলতি রবি মরশুমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ টাকা প্রতি কেজি। রাজ্যের খাদ্য ও জনসংভরণ দপ্তর তথা কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের যৌথ উদ্যোগে অন্নদাতাদের জন্য এই পরিকল্পনা রাজ্য কৃষিতে এক নূতন দিগন্ত বলা যেতে পারে।সূচনা লগ্ন থেকে এখন পর্যন্ত রাজ্যে মোট ২ লক্ষ ১১ হাজার ১শত ৬৬ মেঃ টন ধান ক্রয় করা হয়েছে, যার আর্থিক মূল্য ৪১২ কোটি ১১ লক্ষ ৪০ হাজার ৭ শত ২৪টাকা, যা কৃষকদের ব্যাঙ্ক একাউন্টে সরাসরি প্রেরণ করা হয়েছে, এবং মোট ১ লক্ষ ৭ হাজার ৭শত ৭০ জন অন্নদাতা এই পরিকল্পনার আওতাভুক্ত হয়েছেন।রাজ্যের অন্যান্য মহকুমার মতো জিরাণীয়া কৃষি মহকুমাতেও চলছে উন্নয়নের জোয়ার। সরকারের এই ইতিবাচক ও কৃষিমুখী পরিকল্পনার বাস্তবায়নে কৃষককূল অঙ্গীকার বদ্ধ এবং রাজ্য সরকারের কাছে অত্যন্ত কৃতজ্ঞ। বিগত কয়েক বছরে, এই মহকুমায় মোট ৭ হাজার ৪শত ১৩ মেঃ টন ধান ক্রয় করা হয়েছে, যেখানে ৪হাজার ১ শত ৭৯জন কৃষক সরাসরি যুক্ত ছিলেন এবং প্রায় ১৪ কোটি ৪৮ লক্ষ ৯৯ হাজার ৪ শত ৫০ টাকা সরকারি ব্যাঙ্ক একাউন্টে প্রেরণ করা হয়েছে, যা রাজ্য কৃষিতে এক দিগন্তকারী ঘটনা।
অনুষ্ঠানে ছয়জন কৃষককে পুষ্পস্তবক ও শালের চাদর দিয়ে সম্মাননা জানানো হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন খাদ্য, জনসংভরণ ও ক্রেতা স্বার্থ বিষয়ক দপ্তরের অধিকর্তা সুমিত লোধ। তাছাড়া বক্তব্য রাখেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের অধিকর্তা শরদিন্দু দাস, জিরানীয়া পঞ্চায়েত সমিতির চেয়ারম্যান প্রীতম দেবনাথ। উপস্থিত ছিলেন রাণীরবাজার পুর পরিষদের ভাইস চেয়ারপার্সন প্রবীর কুমার দাস, জিরানীয়া মহকুমার মহকুমা শাসক শান্তি রঞ্জন চাকমা, অধিকর্তা এগ্রি মার্কেটিং দীপক কুমার দাস, বিশিষ্ট সমাজসেবী গৌরাঙ্গ ভৌমিক, পার্থ সারথী সাহা প্রমুখ। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিগণ ২০ জন কৃষককে সরকারি ভর্তুকি মূল্যে বিভিন্ন কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান করা হয়। তাছাড়া দুইজন কৃষককে পুকুর খননের জন্য অনুমোদনপত্রও তুলে দেওয়া হয়। আজকের অনুষ্ঠানে ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন জিরানীয়া নগরপঞ্চায়েতের চেয়ারপার্সন রতন কুমার দাস।