আগরতলা, ২৯ নভেম্বর : শিশুরাই আগামী দিনে দেশের দিশারী। তাই শিশুদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করার লক্ষ্যে রাজ্যের বর্তমান সরকার বিভিন্ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। আজ আগরতলা রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তর এবং জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের সহযোগিতায় আয়ুষ্মান ভারত স্কুল হেলথ মিশনের সূচনা করে মুখ্যমন্ত্রী প্রফেসর (ডা.) মানিক সাহা একথা বলেন।
তিনি বলেন, আয়ুষ্মান ভারত স্কুল স্বাস্থ্য মিশনটি শিশুর সর্বোত্তম শারীরিক এবং মানসিক সুস্থতা অর্জন সুনিশ্চিত করার লক্ষ্যে চালু করা হয়েছে। তিনি বলেন, এই মিশনটি ৬টি মুখ্য স্তম্ভের উপর ভিত্তি করে চালু করা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রম (আরবিএসকে), মেনস্ট্রুয়াল হাইজিন প্রোগ্রাম, সাপ্তাহিত আয়রণ অ্যান্ড ফলিক অ্যাসিড সাপ্লিমেন্টেশন প্রোগ্রাম, জাতীয় কৃমিনাশক দিবস, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রন কর্মসূচি এবং আয়ুষ্মান ভারত স্কুল স্বাস্থ্য ও সুস্থতা কর্মসূচি।
তিনি বলেন, আজকের এই প্রকল্পটি পাইলট প্রকল্প হিসাবে প্রাথমিকভাবে ত্রিপুরায় ১২৫টি বিদ্যাজ্যোতি স্কুলে চালু করা হচ্ছে। প্রায় ৯০ হাজার শিক্ষার্থী সরাসরি এই কর্মসূচির মাধ্যমে উপকৃত হবে। এর সফল রূপায়নের পর রাজ্যের অন্যান্য সরকারি এবং সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলিতে প্রসারিত করা হবে।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, ছাত্রছাত্রীরা তাদের বেশিরভাগ সময় বিদ্যালয়গুলিতে কাটায়। তাই শিক্ষালয়ে ছাত্রছাত্রীদের সুস্থ পরিবেশ এবং তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার পর্যবেক্ষণের ক্ষেত্রে এই কর্মসূচি অনেক ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে। পাশাপাশি ছাত্রছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অভিভাবকদেরও সুস্থ শারীরিক এবং মানসিক স্বাস্থ্য গড়ে তোলার ক্ষেত্রে সম্যক ধারণা প্রদানে সহায়ক হবে। কারণ সুস্থ শরীর, সুস্থ মানসিকতা এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশেই শিক্ষার পরিবেশ গড়ে উঠে। পঠন-পাঠনেও মনোযোগী হওয়া সম্ভব হয়।
তিনি ছাত্রছাত্রীদের উদ্দেশ্যে বলেন, শুধুমাত্র শিক্ষিত হলেই চলবেনা, শারীরিক, মানসিক এবং আধ্যত্মিকভাবেও নিজেকে গড়ে তোলা প্রয়োজন। যা আয়ুষ্মান ভারত স্কুল হেলথ্ মিশনের মূল লক্ষ্য। মুখ্যমন্ত্রী এই মিশনের সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।
অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য দপ্তরের সচিব কিরণ গিত্যে বলেন, রাজ্যের বর্তমান সরকার রাজ্যবাসীর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ করে চলছে। রাজ্যের বিদ্যালয়গুলিতে ছাত্রছাত্রীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় চালু কর্মসূচিগুলি আরও সক্রিয় করার উদ্দেশ্য নিয়েই আয়ুষ্মান ভারত স্কুল হেলথ মিশন সূচনা করা হয়েছে। নীতি আয়োগের মার্গ দর্শন এবং রাজ্য সরকারের উদ্যোগে এই কর্মসূচি ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করবে বলে সচিব আশা প্রকাশ করেন।
অনুষ্ঠানে নীতি আয়োগের সদস্য ডা. ভি কে পাল বলেন, সমাজের মূল স্তম্ভের মধ্যে অন্যতম শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য। সমাজকে গড়ে তোলার মূল নীতি তৈরী হয় বিদ্যালয়গুলিতে শিক্ষক- শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রীদের মাধ্যমে। তাই তাদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। আগামীদিনে বিকশিত ভারত গড়ার ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীদের বিরাট ভূমিকা রয়েছে। আয়ুষ্মান ভারত স্কুল হেলথ মিশন ছাত্রছাত্রীদের মানসিক এবং শারিরিক সুস্বাস্থ্য গড়ার ক্ষেত্রে সহায়ক হবে। বিদ্যালয়গুলিতেও শিক্ষার ইতিবাচক পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শিক্ষা দপ্তরের বিশেষ সচিব রাভাল হেমেন্দ্র কুমার। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন নীতি আয়োগের স্টেট নোডাল অ্যাডভাইসর রাজিব সেন প্রমুখ। উল্লেখ্য, অনুষ্ঠানে রাজ্যে রাষ্ট্রীয় বাল স্বাস্থ্য কার্যক্রমে (আরবিএসকে) উল্লেখযোগ্য অবদানের জন্য বিভিন্ন জেলা, পিএইচসি, সিএইচসি ইত্যাদিগুলিকে পুরস্কৃত করা হয়।
মুখ্যমন্ত্রী সহ উপস্থিত অতিথিগণ বিভিন্ন জেলা এবং পিএইচসি, সিএইচসি থেকে আগত প্রতিনিধিদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন। অনুষ্ঠানে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের তৈরীকরা একটি তথ্যচিত্র প্রদর্শিত হয় এবং এই মিশন সম্পর্কিত একটি পুস্তিকার আবরণ উন্মোচন করেন উপস্থিত অতিথিগণ।