নতুন দিল্লি, ১৯ নভেম্বর : আজ গুজরাটের গান্ধীনগরে ৫০ তম সর্বভারতীয় পুলিশ বিজ্ঞান সম্মেলনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র এবং সমবায় মন্ত্রী অমিত শাহ| সন্মেলনে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব গোবিন্দ মোহন এবং ব্যুরো অফ পুলিশ রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের ডিরেক্টর জেনারেল রাজীব কুমার শর্মা সহ অন্যান্য বিশিষ্ট ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, সর্বভারতীয় পুলিশ বিজ্ঞান সম্মেলন ছাড়া আমাদের পুলিশ ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার পরিকাঠামো সঠিক রাখা অসম্ভব। পুলিশ বিজ্ঞান সম্মেলনের উদ্দেশ্য হল অপরাধের বিরুদ্ধে লড়াই অব্যাহত রাখতে পরিকাঠামোগত ব্যবস্থাকে সচল রাখা। শ্রী শাহ বলেন, থানাগুলিতে পুলিশি ব্যবস্থা ঠিক রাখার পাশাপাশি তথ্য সংগ্রহের ব্যবস্থা ও পদ্ধতি সমূহের পরিকাঠামো পদস্থ আধিকারিক থেকে শুরু করে তৃনমূল স্তর পর্যন্ত সার্বিক উন্নয়নের প্রয়োজন রয়েছে। তিনি আরও বলেন, পুলিশি ব্যবস্থার এই দিকগুলি ব্যাপকভাবে পুনর্মূল্যায়ন করার সময় এসেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, যে কোনও ব্যবস্থা ৫০ বছর ধরে অপরিবর্তিত থাকলে তা অপ্রচলিত হয়ে যায়। তিনি উল্লেখ করেন, বিগত কয়েক দশকে দেশ ও বিশ্ব, অপরাধের ক্ষেত্র এবং পুলিশি ব্যবস্থায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন এসেছে। তবে, এই পরিবর্তনগুলির সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পুলিসি ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন হয়েছে কি না, তা নিয়ে তিনি ভাবতে বলেন। শ্রী শাহ আরও বলেন, ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জগুলি না বুঝে এগিয়ে গেলে আমাদের পরিকল্পনা কখনই সফল হতে পারে না।
শ্রী শাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারত প্রতিটি ক্ষেত্রে বিশ্বব্যাপী নেতৃত্বের ভূমিকা নিতে সামনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে| স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের চ্যালেঞ্জ আরও বেড়েছে। তিনি বলেন, ভারতের অর্থনীতি বিশ্বের একাদশতম বৃহত্তম অর্থনীতি থেকে পঞ্চম বৃহত্তম অর্থনীতিতে উন্নীত হয়েছে এবং ২০২৮ সালের মধ্যে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হবে। শ্রী শাহ বলেন, মোদী সরকার ডিজিটাল বিপ্লবের মাধ্যমে বিচার প্রক্রিয়াকে আরও দ্রুত ও স্বচ্ছ করে তুলেছে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী জানান, এই সম্মেলনে নতুন ফৌজদারি আইন, ফরেনসিক বিজ্ঞানের ব্যবহার, দুর্যোগ মোকাবেলায় ব্যবস্থাপনা, ব্লক-চেইন প্রযুক্তির প্রয়োগ, সাইবার জালিয়াতি, স্মার্ট সিটিতে পুলিশ ব্যবস্থা, জনজাতি অঞ্চলে কমিউনিটি পুলিশ ব্যবস্থা এবং কারাগারগুলিতে মৌলবাদের মত বিভিন্ন অপরাধ মোকাবেলার পদক্ষেপের মতো বিষয়গুলি নিয়ে মোট আটটি বিষয় নিয়ে অধিবেশনে আলোচনা হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং ফৌজদারি বিচার ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে।
শ্রী শাহ বলেন, গত দশ বছরে বিগত দশকের তুলনায় আমরা সফলভাবে অপরাধের হার প্রায় ৭০ শতাংশ কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। মোদী সরকারের বিগত ১০ বছরে স্বরাষ্ট্র দপ্তর ৫ লক্ষ ৪৫ হাজার কেজি মাদক বাজেয়াপ্ত করেছে, যার বাজার মূল্য প্রায় ৩৫ হাজার কোটি টাকা| দেখা গেছে, মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার আগে ১০ বছরে বাজেয়াপ্ত পরিমাণের চেয়ে এই সাফল্য প্রায় ছয় গুণ বেশি। তিনি বলেন, এর অর্থ হল গত ১০ বছরে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির সাহায্য নিয়ে বাজেয়াপ্তকরণ প্রক্রিয়াটিকে নতুন করে সাজানোর ফলেই এই সাফল্য অর্জন করা সম্ভব হয়েছে|
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, নতুন ফৌজদারি আইন রূপায়ণের জন্য প্রথম পদক্ষেপ ছিল কম্পিউটারাইজেশন। দেশের একশভাগ পুলিশ স্টেশন, অর্থাৎ ১৭ হাজার পুলিশ স্টেশনকে কম্পিউটারাইজড করা হয়েছে এবং ক্রাইম অ্যান্ড ক্রিমিনাল ট্র্যাকিং নেটওয়ার্ক ও সিস্টেমের (সিসিটিএন) সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, ২২ হাজার আদালত ই-কোর্ট ব্যবস্থার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে এবং দুই কোটিরও বেশি অপরাধীদের তথ্য এখন ই-কারাগার ব্যবস্থার মধ্যে সুলভ। তথ্য অনুযায়ী ই-প্রসিকিউশনের মাধ্যমে দেড় কোটিরও বেশি মামলার তথ্য পাওয়া যায় এবং ই-ফরেনসিকের মাধ্যমে ২৩ লক্ষেরও বেশি ফরেনসিক ফলাফলের তথ্য পাওয়া যায়।
ন্যাশনাল অটোমেটেড ফিঙ্গারপ্রিন্ট আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম বা নাফিস-এর আওতায় ১.৬ এম.ও.টি ব্যবস্থা বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের অধীনে পর্যবেক্ষণের জন্য সন্ত্রাসবাদ সম্পর্কিত ২২ হাজার মামলার তথ্য সরবরাহ করতে সক্ষম। ন্যাশনাল ইন্টিগ্রেটেড ডেটাবেস অন অ্যারেস্টেড নার্কো অফেন্ডার্স এর আওতায় নেশা জাতীয় অপরাধের সাথে জড়িত ৭.৬ লক্ষ অপরাধীর তথ্য রয়েছে |
শ্রী শাহ বলেন, তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন আনার আগেই মোদী সরকার আদালত, প্রসিকিউশন, পুলিশ, জেল এবং ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিগুলিকে সংযুক্ত করার একটি দারুন ব্যবস্থা তৈরি করে। মোদী সরকার প্রবর্তিত তিনটি নতুন ফৌজদারি আইন দেশের নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং সংবিধান দ্বারা প্রদত্ত অধিকার রক্ষার উপর সজাগ দৃষ্টি রেখে চলেছে। তিনি আরও বলেন, ভারতের প্রত্যেক নাগরিককে দ্রুত ও সহজলভ্য ন্যায়বিচার প্রদান মোদী সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারের মাধ্যমে সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্যকে সমন্বিত ও সম্মিলিতভাবে ব্যবহারযোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করা পুলিশ বিজ্ঞান সম্মেলনের অন্যতম দায়িত্ব। তিনি বলেন, আগামী দিনগুলিতে ভারত এবং সমগ্র বিশ্বের সামনে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যার সমাধান খুঁজে বের করার চেষ্টা করা উচিত। এমন ৫ টি ক্ষেত্র রয়েছে যেখানে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলির সর্বদা অপরাধীদের থেকে এগিয়ে থাকা উচিত। তিনি উল্লেখ করেন, এর মধ্যে রয়েছে সাইবার অপরাধ মোকাবেলা, প্রযুক্তির ব্যবহার করে অনুপ্রবেশ রোধ ও সীমান্ত সুরক্ষিত করা, ড্রোনের অবৈধ ব্যবহার বন্ধ করা, মাদক সংক্রান্ত অপরাধের তদন্ত ও সচেতনতায় আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার সর্বাধিক করা এবং ডার্ক ওয়েবের অপব্যবহার রোধ ও সমাধান করা।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী বলেন, আদালত, প্রসিকিউশন, পুলিশ, কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী এবং রাজ্য রিজার্ভ পুলিশ মিলে প্রায় ১০ কোটি মানুষের একটি যৌথ পরিবার রয়েছে যারা আমাদের দেশের ফৌজদারি বিচারব্যবস্থাকে মজবুত রেখেছে। তিনি বলেন, পুলিশ বিজ্ঞান সম্মেলনে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে আলোচনা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক পদ্ধতির মাধ্যমে সমগ্র দেশকে পরিবর্তন করার একটা সম্ভাবনা রয়েছে। পুলিশ বিজ্ঞান সম্মেলনের মাধ্যমে আগামী ১০ বছরের জন্য একটি রোডম্যাপ তৈরি করা উচিত, যার মধ্যে বার্ষিক পর্যালোচনা, পাঁচ বছরের পর্যালোচনা এবং পাঁচ বছর অন্তর পুনর্মূল্যায়ন করার সুযোগ থাকবে|