স্বচ্ছতাই সেবা পক্ষে চলছে ব্ল্যাক স্পট সাফ করা, সাফাই মিত্রদের জন্য শিবির, ওয়েস্ট টু আর্ট কার্যক্রম
আগরতলা, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪: পরিস্কার পরিচ্ছন্ন থাকা ও রাখা একটি অভ্যাস। এমন অভ্যাস একদিনে গড়ে তোলা যায় না। এর জন্য প্রয়োজন ব্যক্তি ও সমষ্টিগতভাবে অভ্যাস ও অনুশীলন। এই অভ্যাস গড়ে তুলতে জাতির জনক মহাত্মা গান্ধী যে প্রয়াস শুরু করেছিলেন তা গত ১০ বছরে বেগবান হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদীর উদ্যোগে। ২০১৪ সালে ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র শ্রী মোদী স্বচ্ছতা অভিযান এর আহবান দিয়ে এক আলোড়ন সৃষ্টি করেন দেশবাসীর মনে। প্রধানমন্ত্রী শ্রী মোদী নিজে ঝাড়ু হাতে পথে নেমে জনগনকে উদ্বুদ্ধ করেন স্বচ্ছতা নিয়ে। তারপর প্রতিবছর এই উদ্যোগ চলছে। দেশবাসী এখন অনেক বেশি সচেতন পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা সম্বন্ধে । এখন আমরা সবাই লক্ষ্য করি আমাদের রাস্তা ঘাট, স্কুল, কলেজ, যার যার কর্মস্থল, বাজার হাট অনেক বেশি পরিছন্ন। এক পরিবর্তন এসেছে মানুষের মনে ও স্বভাবে । অর্থাৎ গত ১০ বছর ধরে স্বচ্ছতা অভিযানের মাধ্যমে পরিছন্ন পরিবেশ গড়ে তোলার এক অভ্যাস গড়ে উঠছে। এবছরের স্বচ্ছতাই সেবা কর্মসূচীর মূল ভাবনা ‘স্বভাব স্বচ্ছতা, স্ংস্কার স্বচ্ছতা’। এর পেছনে যে ভাবনা তৈরির চেষ্টা হচ্ছে, তা হল স্বচ্ছ থাকার স্বভাব গড়ে তোলা ও আচার আচরন সংস্কারের মধ্যেই যেন স্বচ্ছ থাকার মনোভাব গড়ে ওঠে। ত্রিপুরায় স্বচ্ছতাই সেবা কর্মসূচীর রাজ্য নোডাল অফিসার ও নগরোন্নণ দপ্তরের অধিকর্তা রজত পন্থ আকাশবাণীর সংবাদ বিভাগের সাথে এক সাক্ষাৎকারে এই কথাগুলো বলেন।
নগরোন্নণ দপ্তরের অধিকর্তা শ্রী পন্থ জানান, স্বচ্ছতার দিক দিয়ে ছোট রাজ্যগুলোর তালিকায় ত্রিপুরা পঞ্চম স্থানে উঠে এসেছে বলে শোনা যাচ্ছে। তিনি বলেন, রাজ্য ব্যপি চলছে এই কর্মসূচী, এবং সারা বছর ধারাবাহিকভাবেই চলছে এই কর্মসূচি। গত ১৪ ই সেপ্টেম্বর থেকে শুরু হয়েছে যে কার্যক্রম তা আগামী ১ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে। তারপর ২ অক্টোবর পালিত হবে স্বচ্ছ ভারত দিবস।
এবারের এই স্বচ্ছতাই সেবা কর্মসূচীতে বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে করা হচ্ছে সচেতনতামুলক পদযাত্রা, সাইকেল দৌড় ইত্যাদি। শ্রী পন্থ জানান, নগর উন্নয়ন দপ্তরের উদ্যোগে এবছর ব্ল্যাক ষ্পট উদ্ধার নামে এক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যার মধ্য দিয়ে রাস্তাঘাটে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকা আবর্জনার স্তূপ এবং একেবারে জঞ্জালময় স্থানগুলিকে চিহ্নিত করেও চলছে সাফাই অভিযান। এখন পর্যন্ত এরকম ব্ল্যাক ষ্পট স্থানগুলোর ৬০ শতাংশের উপর জঞ্জালময় এলাকাকে সাফ করা হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন, স্বচ্ছতা অভিযানে জন-ভাগিদারী অর্থাৎ জন অংশগ্রহন আবশ্যক। যে কারণে আহ্বান রাখা হয়েছে স্বচ্ছ স্বভাব ও স্বচ্ছ সংস্কার – স্বচ্ছতাকে নিজের ব্যবহারিক অভ্যাসে পরিণত করতে হবে, তবেই দেশ পরিছন্ন দেশ হবে। প্রধানমন্ত্রীর বিকশিত ভারত গড়ার পরিকল্পনার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত পরিছন্ন ভারত গড়ে তোলার কার্যক্রম।
শ্রী পন্থ জানান, স্বছতাই সেবা কর্মসূচী শুরু হবার আগেই মুখ্যসচিবের পুরোহিত্যে বিভিন্ন দপ্তর সচিব ও অধিকর্তাদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এবং ওই বৈঠকেই বিভিন্ন দপ্তরের স্বচ্ছতা হি সেবা কর্মসূচী কার্যক্রম স্থির করা হয় । সাফাই অভিযানের মধ্যে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডাঃ মানিক সাহা গত ১৭ ই সেপ্টেম্বর গোমতী জেলার উদয়পুরে রাজ্যব্যপি স্বচ্ছতা হি সেবা কর্মসূচীর সূচনা করেন। শ্রী পন্থ জানান, সাফাই অভিযান ছাড়াও এই কর্মসূচী তে রয়েছে ‘এক পেড় মা,কে নাম’ -র আহ্বান অনুযায়ী বৃক্ষ রোপন কর্মসূচি , যা সর্বত্র চলেছে । রাজ্যের প্রতিটি নির্বাচিত পুর ও পঞ্চায়েত সংস্থা, প্রতিটি দপ্তর, স্কুল কলেজ,মন্দির, পর্যটন স্থল হাট বাজার সর্বত্র চলছে এই কর্মসূচী। তেমনি, একবার ব্যবহারের জন্য ব্যবহার্য্য বা সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধেও এই সময়ে ও সারা বছর দপ্তরের উদ্যোগে কার্যক্রম চলছে বলে জানান শ্রী পন্থ। তিনি আরো বলেন, সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার রোধ করার অভিযানের পাশাপাশি বিকল্প থলে, কাপড় ও কাগজের ব্যাগ তৈরী করার ব্যাপারে স্বনির্ভর গোষ্ঠী বা এস এইচ জি -দের উৎসাহিত করা নিয়ে ব্যাপক কাজ হচ্ছে ।
এবারের স্বচ্ছতাই সেবা পক্ষকালের কার্যক্রমে, আরো একটি উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম হলো, সাফাই কর্মীদের জন্য স্থানে স্থানে স্বাস্থ্য শিবির আয়োজন করা ও অন্যান্ন সুবিধা প্রদানে তাদেরকে সহায়তা দেওয়া। শ্রী পন্থ বলেন, সাফাই কর্মী অর্থাৎ সাফাই মিত্রদের স্বাস্থ্যের কথা খেয়াল রেখে সরকার এই কার্যক্রম করার নির্দেশ দিয়েছে। তিনি জানান, পুর সংস্থাদের উদ্যোগে সাফাই মিত্রদের জন্য নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ওষুধপত্র প্রদান সহ তাদেরকে ব্যর্জ ও আবর্জনা পরিস্কার করার জন্য, গ্লাভস, জুতো ইত্যাদি উপকরনও দেওয়া হচ্ছে । নগর উন্নয়ন দপ্তর এবার আরও একটি নতুন উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়ে শ্রী পন্থ বলেন, স্বচ্ছতাই সেবা কর্মসূচীতে শপথ, মানব বন্ধন, সাফাই, পদযাত্রা ছাড়াও এবার স্কুল কলেজের পড়ুয়া এবং শিল্পীদের নতুন এক সৃজনমূলক কাজে যুক্ত করা হচ্ছে। স্কুল কলেজ স্তরে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে হচ্ছে বর্জ্য এবং পরিত্যক্ত সামগ্রী দিয়ে নানা শিল্পকর্ম তৈরী করার প্রতিযোগিতা, যার পোশাকি নাম – ‘ওয়েস্ট তো আর্ট’। তিনি জানান, এই প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের আগামী দোসরা অক্টোবর পক্ষকালব্যাপি স্বচ্ছতা অভিযানের সমাপ্তির পর, স্বচ্ছ ভারত দিবসে তাদেরকে পুরস্কৃত করা হবে। আর্ট কলেজের মাধ্যমে বিভিন্ন বর্জ্য সামগ্রী দিয়ে একটি ভাস্কর্য তৈরি করে আগামী দোষরা অক্টোবর উজ্জ্বয়ন্ত প্যালেজ মিউজিয়াম প্রাঙ্গণে প্রদর্শিত করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান শ্রী পন্থ।