বিশালগড়ে মিলেট চাষিদের মধ্যে তিন মাসব্যাপী মিলেট ফার্ম স্কুলের শিক্ষাদান সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিনিধি, চড়িলাম, ২৫ সেপ্টেম্বর: ভারত সরকার ২০২৩ সালকে ‘আন্তর্জাতিক মিলেট বর্ষ’ হিসেবে পালন করেছে। তাই সারা ভারতবর্ষের প্রতিটি রাজ্যের সাথে ত্রিপুরাতে ও মিলেট চাষের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যদিও ত্রিপুরার মানুষ দীর্ঘকাল ধরে জুমে অন্যান্য ফসলের সঙ্গে ফক্সটেল জাতের মিলেট চাষ করে আসছেন। যা সবার কাছে কাউন চাল নামে পরিচিত। সারা ত্রিপুরা রাজ্যের সঙ্গে সিপাহীজলা জেলার বিশালগড় কৃষি মহকুমার বিশালগড় সেক্টরের উদ্যোগে পাথালিয়া ও গোলাঘাটি অঞ্চলে মিলেট চাষ করা হয়েছে বিগত কয়েক বছরে।

বর্তমানে আরো কৃষক মিলেট চাষ করতে উদ্যোগী হয়েছেন। বিশালগড় কৃষি বিভাগের উদ্যোগে পাথালিয়া গ্রামে মিলেট চাষের উপর ৩ মাস ব্যাপি ফার্ম স্কুল তথা ক্ষেত্র বিদ্যালয় অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ ২৫ শে সেপ্টেম্বর এই ক্ষেত্র বিদ্যালয় এর শেষ ক্লাস ছিলো। এই ক্ষেত্র বিদ্যালয়ে মিলেট চাষের জন্য জমি তৈরি করা,বীজ রোপণ,সার প্রয়োগ,আগাছা পরিষ্কার, পর্যাপ্ত ঔষুধ দেওয়া, পরিচর্যা ইত্যাদি সমস্ত বিষয়ে এই বিদ্যালয়ে কৃষকদের হাতে কলমে শিখানো হয়েছে।  আজকে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলা কৃষি উপঅধিকর্তা সঞ্জীব দেববর্মা, কৃষি সুপার হিমানিশ লস্কর, সহকারী অধিকর্তা লিপি দাস ।

বিশালগড় কৃষি মহকুমাতে এই মৌসুমে মোট ৪ হেক্টর জমিতে মিলেট চাষ করা হয়েছে। হেক্টর পিছু ১৩০০ কেজি থেকে ১৪০০ কেজি  মিলের উৎপাদন হয়েছে। গত বছরের থেকে এই বছর ভালো ফলন হবে বলে জানিয়েছে কৃষক কানাই সরকার, উত্তম ভৌমিক , সাথী রানি শীল।

মিলেট বীজ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেওয়ার পাশাপাশি হেক্টর পিছু চাষিদের আর্থিক অনুদান দেওয়া হয়েছে জানিয়েছেন কৃষকরা। পাথালিয়া গ্রামের কৃষক কানাই সরকার উত্তম ভৌমিক , হারাধন সরকার জানান যে গ্রীষ্মকালে জলের অভাবে ২ হেক্টরের মতো উঁচু টিলা জমিতে অন্যান্য ফসল করা কঠিন হয়ে পরে । কিন্তু গ্রাম সেবক উজ্জ্বল দেববর্মণ ও সেক্টর অফিসার প্রবীর দত্তের পরামর্শে ওই গ্রীষ্মকালীন অনাবাদি জমিকে মিলেট চাষের অধীনে এনে আর্থিক লাভের উপায় খুঁজে পেয়েছেন। 

সাথী রানি শীল ও কানাই সরকার জানিয়েছে প্রাথমিকভাবে ফসলটি চাষ লাভজনক বলেই মনে হয়েছে। কারণ গত বছর কানি প্রতি ২২৪ কেজি মিলেট উৎপাদন হয়েছে। তার সব গুলি প্রায় ১০০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। কৃষি দপ্তর থেকে মিলেট চুরানোর বা ভাঙ্গানোর জন্য একটি মেশিন প্রদান করা হয়েছে। যাতে করে সহজে উৎপাদিত মিলেট বাজারজাত করা সম্ভব হয়েছে। দপ্তরের কর্মীদের সাথে আলোচনায় উঠে আসে যে , মিলেট বা শ্রীঅন্ন জাতীয় শস্য একসময় এই অঞ্চলে ফলন হলেও এখন এর চাষ কমে গেছে| অথচ জোয়ার, বাজরা, কাওন শস্য, রাগি ইত্যাদি দানাশস্য শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী| একটা সময় সুষম খাদ্যাভ্যাসে এগুলো শামিল ছিল, মাঝে মধ্যে এগুলোর ব্যবহার হত । কিন্তু ক্রমে এর ব্যবহার কমে যাওয়ায় উৎপাদন বা চাষাবাদে আগ্রহ কমে গিয়েছিল| তাই পুনরায় কৃষকদের মধ্যে এই ধরনের খাদ্যশস্য উৎপাদনে আগ্রহ বৃদ্ধি করার জন্য প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো ও কৃষি-বিশেষজ্ঞদের বিভিন্ন পরামর্শ কৃষকদের কাছে পৌঁছে দেওয়ার কাজ চলছে

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *