বিশেষ প্রতিনিধি ।। আগরতলা, ২ সেপ্টেম্বর ।। প্রকৃতির ধ্বংসলীলায় ত্রিপুরায় বহু মানুষ বিপন্ন হয়ে পড়েছেন। তাঁদের চোখের ভাষা শুধুই অব্যক্ত যন্ত্রনা বোঝাতে চাইছে। ত্রাণবাহী গাড়ির পেছনে তাঁদের অসহায়ভাবে ছুটে যাওয়া চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছে, জাতি এখনও বহু পিছিয়ে রয়েছে। ভয়াবহ বন্যা পরবর্তী পরিস্থিতি সামলাতে গিয়ে প্রশাসন হিমশিম খাচ্ছে। তবে, বিপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতায় ত্রিপুরাবাসীকে কুর্ণিশ জানাতেই হচ্ছে।
রাজ্যে এখনও ত্রাণ শিবিরে আশ্রিত আছেন বহু মানুষ। বন্যার জল নেমেছে ঠিকই, কিন্তু বাড়িতে ফিরতে আরও অনেকটা সময়ের প্রয়োজন রয়েছে। এই মুহুর্তে সকলেই আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, বসতভিটেতে বসবাসের উপযোগী হোক। তাঁরা এখনই ভবিষ্যতে কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি হওয়ার বিষয়ে ভাবতে চাইছেন না।
বন্যায় বহু মানুষ সর্বস্বান্ত হয়েছেন। বহু গুরুত্বপূর্ণ নথি হয় নষ্ট হয়েছে, নয় হারিয়ে গেছে। সেই সমস্ত মহা মূল্যবান নথি যোগাড়ে কালের ফেড়ে পড়তে হবে তাঁদের, তা অস্বীকারের সুযোগ নেই। কারণ, বন্যায় বহু সরকারি অফিস বিধ্বস্ত হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সব নথি নষ্ট হয়ে গেছে। সেই সব নথি সাধারণ মানুষের তথ্য সম্বলিত ছিল।
বন্যায় নি:স্ব এমনই এক পরিবার দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। অমরপুর বীরগঞ্জ এলাকায় ওই পরিবারের কর্তা ২ মাস আগে প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর প্রয়াণে শোক কাটিয়ে উঠার আগেই বন্যায় বাড়িঘর, দোকান সবই তছনছ হয়ে গেছে। এখন তাঁর বাড়ি থেকে বন্যার জল নেমে গেছে। কিন্তু, রেশন কার্ড থেকে শুরু করে সমস্ত গুরুত্বপূর্ণ নথি হারিয়ে গেছে। ফলে, সরকারি সহায়তা পেতেও তাঁর সমস্যা হচ্ছে।
ত্রাণ সামগ্রী বিতরণে গিয়ে হৃদয়বিদারক অভিজ্ঞতার সাক্ষী হচ্ছেন অনেকেই। কচিকাঁচাদের সাথে নিয়ে ত্রাণ সামগ্রীর জন্য দীর্ঘ লাইনে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে। হটাৎ চোখে পড়ল, সেখানে দাঁড়ানো এক রত্তির দুই চোখ বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুকণা। এমন অনেক শিশু প্রতিদিন কেঁদে চলেছে। তবু, মানুষ আশাবাদী নতুন সূর্যোদয় হবে শীঘ্রই। কালো মেঘ সরে গেছে। আকাশ প্রায় পরিষ্কার হয়েছে। এই বন্যায় স্বজন হারানোর ক্ষতেও সময়ের সাথে প্রলেপ লেগে যাবে। কিন্তু, বন্যার কারণে যাঁরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়েছেন তাঁদের প্রগতি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জের বলেই মনে করা হচ্ছে। তাঁদের প্রগতি ছাড়া রাজ্যের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব হবে না। এক্ষেত্রে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকার অগ্নিপরীক্ষার মুখোমুখি হবে, তা অস্বীকারের সুযোগ নেই।
কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে বিভিন্ন রাজ্য সরকার ত্রিপুরার দিকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন সংগঠন, সমাজ সেবী সংস্থা, মন্ত্রিসভার সদস্য, বিধায়ক, ব্যবসায়ী মহল, চিকিৎসকগণ, ক্রীড়া জগৎ, সংস্কৃতি জগৎ সহ আরও অনেকেই মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিলে দান করে চলেছে। ইতিমধ্যে ওই ত্রাণ সংগ্রহ ১০০ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। এখন শুধুই সরকারি সহায়তা অসহায় মানুষের দরজায় পৌছে দিতে হবে। এক্ষেত্রে, দলমত নির্বিশেষে সকলকে প্রাপ্যটা বুঝিয়ে দিতে হবে। ত্রাণ সামগ্রী বন্টনে দলবাজির অভিযোগ রয়েছে। দুর্যোগ মোকাবিলা তহবিল বন্টনে রাজ্য সরকার তেমনই কলঙ্কের দাগ গায়ে মাখবে না বলেই ধারণা করা হচ্ছে।