অশান্ত গণ্ডাছড়া সফরে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের রোষানলে পড়লেন মন্ত্রী, বিধায়ক সহ বিজেপি নেতৃত্ব

আগরতলা, ১৫ জুলাই : হিংসায় ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় গিয়ে গণ্ডাছড়ায় ভয়ানক রোষের মুখোমুখি হয়েছেন মন্ত্রী-বিধায়কের নেতৃত্বে বিজেপির প্রতিনিধি দল। আজ গণ্ডাছড়া মহকুমায় নারায়ণপুর বাজারে ক্ষতিগ্রস্তদের আক্রোশ দেখে মনে হয়েছে বিজেপির প্রতিনিধি দলের উপস্থিতি অসন্তোষের আগুনে ঘৃতাহুতির কাজ করেছে। পরিস্থিতি এতটাই উত্তপ্ত হয়ে হয়েছিল, পুলিশ ওই প্রতিনিধি দলের সদস্যদের কোনক্রমে বাঁচিয়ে মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে নিয়ে গেছে। তাতে, ওই ক্ষতিগ্রস্তরা আরও উত্তেজিত হয়ে উঠেন এবং মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে ভাঙচুর করেছেন। সূত্রের খবর, উত্তেজিত জনতা দুইটি গাড়িও ভাঙচুর করেছেন। আজ বিজেপি নেতাদের অশান্ত গণ্ডাছড়া সফরে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। 

প্রসঙ্গত, জনজাতি অংশের যুবকের মৃত্যুতে অশান্ত হয়ে উঠেছে গণ্ডাছড়া মহকুমা। একাংশ ঊশৃংখল জনজাতিদের আক্রমণে প্রচুর বাঙালি অংশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। রোষের আগুনে বাড়িঘর, দোকানপাট, গাড়ি, বাইক পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। গবাদী পশুও আগুনে ঝলসে মারা গেছে। বাঙালি অংশের মানুষ কোনক্রমে জঙ্গলে আত্মগোপন করে প্রাণে বেঁচেছিলেন। ওই ঘটনার পর থেকে গণ্ডাছড়ায় থমথমে পরিবেশ কায়েম হয়ে রয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ রাস্তায় নেমে লাগাতার বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন। থানা ঘেরাওয়ের পাশাপাশি সমস্ত দোকানপাট, বাজার হাট বন্ধ রেখেছেন। এমনকি যান চলাচলও গত চারদিন ধরে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। স্কুল-কলেজ বন্ধ থাকার পাশাপাশি নামকাওয়াস্তে সরকারি অফিস চলছে। 

আজ অশান্ত গণ্ডাছড়া সফরে গিয়েছিলেন মন্ত্রী টিংকু রায়, বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া, প্রাক্তন সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা এবং এমডিসি ভূমিকানন্দ রিয়াং। নারায়ণপুর বাজারে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের সাথে তাঁরা কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু, তাঁদের কোন কথাই শুনতে চাইছিলেন না ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালি অংশের মানুষ। উল্টে, তাঁদের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ ও রাগ উগরে দিয়েছেন তাঁরা। বিজেপি নেতারা বারেবারেই তাঁদের শান্ত হয়ে সমস্যা নিয়ে আলোচনার আবেদন জানান। কিন্তু, তাতে তাঁরা সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হন। ক্ষতিগ্রস্ত বাঙালি অংশের মানুষের মধ্যে কয়েকজন যুবক বারেবারেই তাঁদের দিকে তেড়ে যাওয়ার চেষ্টা করেছেন। অবশ্য, পুলিশের উপস্থিতিতে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়ানো সম্ভব হয়েছে। 

এদিকে, বিজেপি নেতারা তাঁদের সমস্ত অভিযোগ শুনার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং সমস্ত দাবিদাওয়া জেনেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, ইতিপূর্বে হিংসায় ক্ষয়ক্ষতি হলে প্রশাসনের তরফে সঠিক ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়নি কখনোই। কিন্তু, এযাত্রায় তা মেনে নেবেন না তাঁরা। আজ ওই এলাকায় ১১টি বিয়ের অনুষ্ঠান রয়েছে। যা পরিস্থিতির কারণে বাতিল হয়েছে। তাতে, পাত্রীপক্ষের সমস্ত আর্থিক ক্ষতি প্রশাসনকে বহন করতে হবে। এছাড়াও, গণ্ডাছড়া মহকুমা জুড়ে বাঙালি অংশের মানুষের ১০০ শতাংশ নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। 

বিজেপি নেতারা তাঁদের সমস্ত দাবি শুনে সুনির্দিষ্ট কোন প্রতিশ্রুতি না দিয়েই সেখান থেকে চলে যান। আসলে, পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেখে পুলিশ তাঁদের এসকর্ট করে মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে নিয়ে যান। তাতে ক্ষতিগ্রস্তরা আরও রেগে উঠেন এবং মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে গিয়ে ভাঙচুর চালিয়েছেন। তাঁরা এতটাই ক্ষেপেছিলেন যে, পুরো মহকুমা শাসকের কার্যালয় ভেঙ্গে তছনছ করে দিয়েছেন। উত্তেজিত জনতার আক্রমণে মহকুমা শাসকের কার্যালয়ে আসবাবপত্র, দরজা, জানালা, জানালার কাঁচ ভেঙ্গে চুড়মার হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, উত্তেজিত প্রাক্তন সাংসদ রেবতী ত্রিপুরা, জনতা বিধায়ক রামপদ জমাতিয়া এবং বিজেপি নেতা সুবল ভৌমিকের গাড়ি ভাঙচুর করেছেন বলে অসমর্থিত সূত্রের খবর। এই পরিস্থিতিতে পুলিশ অবশ্য, মন্ত্রী, বিধায়ক সহ বাকিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিয়ে গেছে। কিন্তু, আজকের পরিস্থিতি আগামীদিনে আরও জটিল আকার ধারণ করবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *