সংগাঠনিক অক্ষমতার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করল রাজ্য বিজেপি

কলকাতা, ১৩ জুলাই, (হি স) : “এই মুহূর্তে দাঁড়িয়ে শাসকদলের বিরুদ্ধে ভোটে লড়াই করার মতো সংগঠন বিজেপির নেই। এটা অস্বীকার করতে আমাদের লজ্জা নেই।” শনিবার পশ্চিমবঙ্গের চার বিধানসভার উপনির্বাচনে পর্যদূস্ত হয়ে একথা স্বীকার করলেন বিজেপির রাজ্যসভার সাংসদ তথা মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য।  চব্বিশের লোকসভা নির্বাচনের লক্ষ্যমাত্রা থেকে বহু দূরে থমকে গিয়েছিল বিজেপির বিজয়রথের চাকা। বিয়াল্লিশে মাত্র ১২ পেয়ে তাদের ‘হাতে রইল পেনসিল’! রাজ্যের চার বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনেও গেরুয়া শিবির ব্যর্থতার ধারাবাহিকতা বজায় রেখেছে। চারের মধ্যে তাদের প্রাপ্তি পুরোপুরি শূন্য।  বিধানসভায় জেতা আসনও বিজেপি-র থেকে ছিনিয়ে নিয়েছেন ঘাসফুল শিবিরের প্রার্থীরা। মানিকতলা, বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ, রায়গঞ্জ— চার কেন্দ্রেই তৃণমূল প্রার্থীদের জয়জয়কার। শনিবার এই ফলাফল প্রকাশের পরই অবশ্য সাংবাদিক বৈঠক করে নিজেদের সাংগঠনিক ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে নিলেন  শমীকবাবু। তাঁর স্পষ্ট বক্তব্য, “আমরা পারিনি সে ধরনের সংগঠন তৈরি করতে। এটা আমাদের ব্যর্থতা।”   তবে ভোট লুট নিয়ে তৃণমূলের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলতে ছাড়লেন না তিনি। বাগদা ও রানাঘাট দক্ষিণের মানুষকে জোর করে, ভয় দেখিয়ে শাসকের পক্ষে ভোট দেওয়ানো হয়েছে বলে অভিযোগ তাঁর।  চার আসনের মধ্যে একমাত্র মানিকতলা ছাড়া বাকি তিনটিই ছিল বিজেপির দখলে। সেসব আসন থেকে গড়ে ৪০ থেকে ৫০ হাজার নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছে পদ্মফুল। রায়গঞ্জ, রানাঘাট দক্ষিণ, বাগদা— সর্বত্র সবুজঝড়। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনে এখানকার ফলাফল মাত্র তিন বছরে এতটা বদলে গেল কেন? কেন জেতা আসনেও হারের গ্লানি সহ্য করতে হল বিজেপিকে? তার অন্যতম কারণ যে প্রার্থী বাছাই, তা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।   একমাত্র মানিকতলায় কল্যাণ চৌবে ছাড়া তিন আসনের বিজেপি প্রার্থীরা বিশেষ পরিচিত নয়। বাগদার প্রার্থী বিনয়কুমার বিশ্বাসকে নিয়ে দলের অন্দরেই অসন্তোষ ছিল। অন্যদিকে, বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যাওয়া রায়গঞ্জের কৃষ্ণ কল্যাণী বা রানাঘাট দক্ষিণের মুকুটমণি অধিকারীরা জয় ছিনিয়ে নিয়েছেন নিজেদের ঔজ্জ্বল্যে।  বাগদা ও রানাঘাট দক্ষিণের হার নিয়ে শমীক ভট্টাচার্যর বক্তব্য, ”আজকের সময় ভোটের সংগঠন বলতে যেটা বোঝায় সেটা আমরা তৈরি করতে পারিনি। বোমা-পিস্তলের পালটা তো বোমা, লাঠিতে হয় না। তবে এগুলোকে প্রতিহত করার জন্য যে ধরনের সংগঠন দরকার সেটা আমরা তৈরি করতে পারিনি।”  শমীকবাবুর দাবি, “যেভাবে সন্ত্রাসের মধ্য দিয়ে ভোট হয়েছে বা ভোট হয় বাংলায়, সেটা বুঝতে হবে। এধরনের ফল দলগতভাবে আমাদের প্রত্যাশিত ছিল।” কেন এই দুই জায়গায় ব্যবধান এত কমল, তা দলীয় স্তরে খতিয়ে দেখা হবে। সুকান্ত-শুভেন্দুরা কী বলবেন?  বাংলার চার বিধানসভা কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয় গত বুধবার। ভোট হয় রায়গঞ্জ, বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণ এবং কলকাতার মানিকতলায়। বিধানসভা নির্বাচনে এই চার কেন্দ্রের ফল ছিল বিজেপি ৩, তৃণমূল ১।  রায়গঞ্জ, বাগদা, রানাঘাট দক্ষিণের উপনির্বাচন হয়েছে বিধায়কেরা দলবদল করায়। এই তিন কেন্দ্রে ২০২১ সালে বিজেপি জিতেছিল। মানিকতলায় জিতেছিল তৃণমূল। বিধায়ক সাধন পাণ্ডের মৃত্যু হওয়ায় সেখানে আবার ভোট হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *