BRAKING NEWS

রিলসের নেশাই কাল, অন্ডালে দামোদরে তলিয়ে মৃত এক

দুর্গাপুর,১৩ জুলাই(হি.স.) : রিলসের নেশাই কাল হল। উত্তাল নদীতে রিলস তৈরী করতে গিয়ে পা ফসকে জলে তলিয়ে মৃত্যু হল বোনের। নিখোঁজ মাসতুতো দিদি। শনিবার চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে দামোদর নদে অন্ডালের বাসকা ফিল্টার হাউস ঘাটে। এক তরুনীকে উদ্ধার করেছে স্থানীয় বাসিন্দারা। অন্য জনের খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে বিপর্যয় মোকাবিলা দল।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে মৃতার নাম বিউটি পাশোওয়ান(২২), ঝাড়খন্ডের রাঁচির বাসিন্দা। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অন্ডালের রেল কলোনির বাসিন্দা জ্যোতি প্রসাদের বাড়িতে গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠানে রাঁচি থেকে আসে তার মাসতুতো বোন বিউটি পাশোওয়ান ও প্রিয়াঙ্কা পাশোওয়ান। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, তিনজনে অণ্ডালের বাসকা ফিল্টার হাউসের সামনে দামোদর নদের পাড় থেকে মোবাইল হাতে নিয়ে রিলস বানাচ্ছিল। আচমকা প্রিয়াঙ্কাকে পা পিছলে পড়ে যেতে দেখে নদীতে ঝাঁপ দেয় জ্যোতি ও বিউটি। প্রিয়াঙ্কা কোনও রকমে নদীর পাড়ে উঠে আসে। তবে তলিয়ে যেতে থাকে জ্যোতি আর বিউটি। প্রিয়াঙ্কার চিৎকার শুনে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। এবং নদীতে তল্লাশী শুরু করে। ততক্ষণে জ্যোতি আর বিউটি তলিয়ে যায়। বেশ কিছুক্ষণ পর বিউটিকে উদ্ধার করে বাসিন্দারা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে অণ্ডাল ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যায়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষনা করে। এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় অণ্ডাল থানার পুলিশ। উদ্ধার কাজে নামে  বিপর্যয় মোকাবিলা দল। স্পিড বোট নিয়ে তল্লাশী শুরু করে। এদিন বিকাল পর্যন্ত বিউটির মাসতুতো দিদি জ্যোতির কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। 

 বিউটির মামা ডব্লুউ প্রসাদ বলেন,” নতুন বাড়ির  গৃহপ্রবেশ অনুষ্ঠান ছিল। ওই অনুষ্ঠানে ভাগ্নীরা এসেছে। শনিবার দামোদরের ঘাটে গিয়েছিল। তারপরই এই দুর্ঘটনা।”

 ঘটনায় সচেতনতায় প্রশ্ন উঠেছে। আরও প্রশ্ন, রিলস বানাতে গিয়েই কি কাল হল ওই দুই তরুনীর? স্থানীয় প্রবীন বাসিন্দারা বলেন,” রিলস বানানো এখন মানসিক ব্যাধিতে পরিনত হয়েছে। এটা বন্ধ হওয়া দরকার।”

উল্লেখ্য, কয়েকদিন আগেই সোশ্যাল মিডিয়ায় এক ভিডিও ভাইরাল হয়। পুনের একটি বহুতলের ছাদের কার্নিশ থেকে একটি মেয়ে ঝুলছে। আর তাকে ধরে রয়েছেন এক যুবক। তবে এভাবে ভিডিয়ো করতে গিয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এনিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সমালোচনার ঝড়ও উঠেছে। এই ঘটনাকে বোকামি বলে উল্লেখ করেছেন নেটিজেনরা।  তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি উঠছে। হাতের ছোট্ট ওই মুঠোফনে যেন গোঁজা প্রাণভোমরা। ৮ থেকে ৮০ সারাদিন দুই  চোখ ওই তালুর মতো লম্বা স্ক্রিনে বন্দি। এখন নয়া ট্রেন্ডিং রিলস।

বর্তমানে টিভি, মোবাইল গেমসের সীমানা ছাড়িয়ে মানুষের এন্টারটেনমেন্টের এখন একটাই পরিভাষা, রিলস। কয়েক সেকেণ্ড থেকে কয়েক মিনিটের এই ধরনের ভিডিয়োই এখন সকলের নয়নের মণি। বুড়ো আঙুলের স্লাইডে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ধরে ওই এক স্ক্রিনে আবদ্ধ ছোট থেকে বড় সকলের দুই চোখ। একই সঙ্গে এই রিলস বানানোর নেশায় বুঁদ হয়ে ঘটছে প্রানহানি। এটাই উদ্বেগের কারণ হয়ে উঠেছে।  

প্রায়ই, রিলস ও ভিডিও করতে গিয়ে কখনও রেল লাইনে, কখনও ছাদ থেকে পড়ে প্রাণহানির দুর্ঘটনা ঘটেছে। তারপর কিন্তু রিলস তৈরির প্রবণতা কমেনি । তারই পরিনিতিতে ঘটছে দুর্ঘটনা, হচ্ছে প্রাণহানি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,” রিলসের ফলে মানসিক সমস্যা বাড়ছে পাল্লা দিয়ে। শুরুর দিকে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপ্লব এনেছিল সোশ্যাল মিডিয়া। কিন্তু, বর্তমানে নতুন প্রজন্ম এর নেশায় আসক্ত। ভালো প্রভাবের বদলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় জেরবার একটা জেনারেশন। এই বিষয়ে সচেতনতার প্রয়োজন রয়েছে। এদিনের ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *