– অর্থনীতিবিদ মার্টিন উলফ
ভারত ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি বৃহৎ শক্তি বা পরাশক্তির দেশ হয়ে উঠবে| তবে, আন্তজাতিক আর্থিক পরিস্থিতির কারণে দেশ উচ্চ আয়ের অর্থনীতিতে পরিণত হবে না বলেই ধারণা করা যাচ্ছে| ‘ফিনান্সিয়াল টাইমস’-এর অর্থনীতি বিষয়ক ভাষ্যকার মার্টিন ওলফ এই মন্তব্য করেছেন| তাঁর মতে, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক মন্দা এবং নানা কারণে অস্থির ও অস্থিতিশীল বিশ্ব ভারতের সামনে উচ্চ আয়ের অর্থনীতি হয়ে উঠা কঠিন করে তুলছে|
“ভারতকে ২০৪৭ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশে পরিণত হতে গেলে কী করতে হবে” শীর্ষক এক আলোচনায় মার্টিন ওলফ বলেছেন, “আপাতদৃষ্টিতে এটা হওয়া সম্ভব বলে আমি মনে করছি না| কিন্তু এটা সম্ভব| আর তা করতে গেলে, চিন ২০১২ সাল পর্যন্ত ২০ বছরে যা যা করেছে, ভারতকে এর কাছাকাছি অন্তত কিছু করতে হবে| তবে যদি এটা না হয়, তাহলেও ভারত বর্তমানে যে অবস্থায় আছে, যদি সেই পথেই এগিয়ে যায়, তাহলে এই শতাব্দীর মধ্য ভাগে গিয়ে ভারত একটি শক্তিশালী দেশে রূপান্তরিত হবে বা পরাশক্তি হয়ে উঠবে|”
মার্টিন ওলফ বলেছেন, ২০১২ পর্যন্ত দুই দশক ধরে চিনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে যদি ভারত অনুকরণ করতে চায়, তাহলে ভারতকে বার্ষিক গড় প্রবৃদ্ধিকে ৪.৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশে উন্নীত করতে হবে| তবে, ভারত বর্তমানে যে ট্র্যাকে আছে, সেই ট্র্যাকে থাকলেও জনসংখ্যা, রাজনৈতিক অবস্থান, পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক, সমৃদ্ধ প্রবাসী ভারতীয়রা এবং অন্য নানা প্রভাবের জন্য ২০৪৭ নাগাদ উচ্চ-আয়ের দেশের মর্যাদা না পেলেও ভারত সুপারপাওয়ার হয়ে উঠবে| যদিও এই ট্র্যাক বা পথে আছে বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রের বিভিন্ন দুর্বল ও ভঙ্গুর প্রেক্ষাপট সহ নানা চ্যালেঞ্জ বা প্রতিকূলতা|
ভারত সরকার সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচনে ভারতের অর্থনীতিকে ২০৪৭ সালের মধ্যে উন্নত অর্থনীতিতে রূপান্তরিত করার দৃষ্টিভঙ্গির উপর বিশেষ জোর দেয়| কেন্দ্রীয় চিন্তাকেন্দ্র বা থিঙ্ক ট্যাংক ‘নীতি আয়োগ’ আগামী দুই দশক ধরে অগ্রগতির ক্ষেত্রে বিভিন্ন ফাঁক-ফোকরগুলি চিহ্নিত করার জন্য একটি ভিশন ডকুমেন্ট তৈরি করছে|
সংযুক্ত রাষ্ট্রসংঘের পূর্বাভাস অনুসারে দেখা যাচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ ভারতের জনসংখ্যা ১৬৭ কোটিতে পৌঁছাবে| চিনের জনসংখ্যা তখন ১৩২ কোটিতে পৌঁছাবে, আর আমেরিকার জনসংখ্যা ৩৮ কোটিতে পৌঁছাতে পারে| এত বিশাল জনসংখ্যা নিয়ে ভারতের পক্ষে আমেরিকার মোট অর্থনীতির সঙ্গে তুলনা করাটা কঠিন হবে না| ভারতের জিডিপি যদি ২০৪৭ সাল পর্যন্ত বছরে ৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পায়, তাহলে আমেরিকার ‘ক্রয় ক্ষমতার সমতার’ (পিপিপি) সঙ্গে মিলে যাবে|
কিন্তু তা সত্বেও, জিডিপিতে শিল্পক্ষেত্রের শেয়ার ভারতে অনেক কম থাকায় এবং তা কমতে থাকায় চিনের উৎপাদন ক্ষেত্রের ক্ষমতার সঙ্গে তুলনা করার সম্ভাবনা কম| তবু চিন বা আমেরিকার কাছাকাছি না হলেও ভারতের আকার এবং এর অর্থনৈতিক ক্ষেত্র ভারতকে একটি শক্তিশালী দেশ হিসেবে এর অবস্থানকে সুদৃঢ় করবে|
এই প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক প্রতিকূলতা, সংরক্ষণবাদ এবং সম্ভাব্য ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব ঝুঁকি তৈরি করবে| এই অনিশ্চয়তার প্রভাবকে আরও জটিল করার জন্য সঙ্গে আছে জলবায়ুর সংকট এবং উৎপাদনশীলতার উপর কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রভাব| তবু ভারতের সম্পদ ও কৌশলগত অবস্থান ভারতকে ‘চিন প্লাস ওয়ান’ (অর্থাৎ চিনের বাইরেও নিশ্চিত ও সহজ বিনিয়োগ করার এমন দেশ আছে)কৌশলের একটি অংশীদার করে, যা আকৃষ্ট করবে প্রভূত বিদেশি বিনিয়োগ|
ভারতের প্রবৃদ্ধির জন্য রফতানি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ| যদিও একটি ধারণা হচ্ছে যে, ভারতের বৃহৎ দেশীয় বাজারের জন্য রফতানির তেমন প্রয়োজনীয়তা নেই| কিন্তু তা সত্বেও আমদানির জন অর্থ প্রদান, প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি এবং বৈশ্বিক জ্ঞান অর্জনের জন্য বাণিজ্য অপরিহার্য| বর্তমান বিশ্বে পণ্যের রফতানির ক্ষেত্রে ভারতের শেয়ার মাত্র ২.২ শতাংশ| যা চিনের ১৭.৬ শতাংশের তুলনায় অনেক কম| এই শেয়ার বাড়ানোর উল্লেখযোগ্য সুযোগ রয়েছে|