আগরতলা, ১১ জুলাই: ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের নির্ঘণ্ট ও প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা উঠে এলো। সর্বদলীয় বৈঠকে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন কংগ্রেসের কর্মী। এমনই অভিযোগ করলেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা। বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনের মাধ্যমে শাসকদলের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ তুলে ধরেন কংগ্রেসের নেতৃত্বরা। এদিনের এই সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সর্বভারতীয় কংগ্রেস কমিটির সম্পাদিকা জারিতা লাইতফালাং, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা, বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন সহ অন্যান্যরা। এদিনের এই সাংবাদিক সম্মেলনে ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রাক মুহুর্তে বিভিন্ন দল ত্যাগ করে বেশ কয়েকজন ভোটার কংগ্রেস দলে যোগদান করেছেন।
সম্মেলনে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি আশীষ কুমার সাহা বলেন, রাজ্যে গণতন্ত্র ভূলুণ্ঠিত। নির্বাচনের দিনক্ষণ প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যজুড়ে আক্রান্ত হচ্ছেন কংগ্রেসের কর্মীরা। এ ধরনের পরিস্থিতিতে বারবার রাজ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অনলাইনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার দাবি জানানো হয়েছিল। কিন্তু কংগ্রেস কোন সদুত্তর পায়নি। এই অবস্থায় রাজ্যে একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। যার ফলে এই নির্বাচনে গণতন্ত্র কতটুকু রক্ষা হবে তা নিয়ে চিন্তা প্রকাশ করেছেন কংগ্রেস সভাপতি।
তিনি আরো জানান, ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢুকলি আর ডি ব্লকে সর্বদলীয় বৈঠকের আয়োজন করা হয়েছিল। সেখানে কংগ্রেস দলের তরফে দুই কর্মী গৌতম সাহা এবং মাখন বনিক অংশগ্রহণ করেছিলেন। মিটিং এর শেষে বেরিয়ে আসতেই তাদের দুজনকে ধরে মারধর করা হয়। তাদের বাইক ভেঙে দেওয়া হয়। তাদের মধ্যে একজনকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ঘটনায় অভিযোগের তীর শাসকদলের কর্মীদের দিকে। এছাড়াও গোমতী জেলার তেপানিয়াতেও একই ধরনের ঘটনা সংঘটিত হয়েছে বলে অভিযোগ করেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি। সেখানে বৈঠক চলাকালীন হল ঘরে প্রবেশ করে কংগ্রেস কর্মীদের মারধর করা হয়েছে বলে অভিযোগ তোলা হয়।
রাজ্যের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে এদিনের সাংবাদিক সম্মেলনে আলোচনা করেছেন কংগ্রেস বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মন। তিনি বলেন, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ১০০% জয় চাই বিজেপির। রাজ্য প্রধান যখন এ ধরনের কথা বলছেন তখন রাজ্যে গণতন্ত্র কতটুকু রয়েছে সেটা আরো একবার স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিরোধী দলের অস্তিত্বকে মুছে ফেলার চেষ্টা করছে শাসক দল। হামলা হুজ্জতি মারধর করে বিরোধীদের লড়াইয়ের ময়দান থেকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এ ধরনের অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কাজেই অন্যান্য নির্বাচন গুলির মতো এই নির্বাচনেও সাধারণ মানুষ কতটুকু ভোটদান করতে পারবেন সেটা নিয়ে চিন্তা ব্যক্ত করেছেন কংগ্রেস বিধায়ক।
এছাড়াও দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প, শান্তিনিকেতন মেডিকেল কলেজ সহ একাধিক ইস্যুতে কথা বলেন তিনি এদিন। তিনি বলেন রাজ্যের বাজার গুলিতে দ্রব্যমূল্য হু হু করে বৃদ্ধি পাচ্ছে। সেই দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের কোন পদক্ষেপ নেই। সাধারণ মানুষ একপ্রকার অনাহারে দিন অতিবাহিত করার অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্প সম্পর্কে তার বক্তব্য, রাজ্যের শিক্ষা ক্ষেত্রে এটি একটি ফ্লপ প্রকল্প। এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের ভবিষ্যৎকে অনিশ্চয়তার দিকে ঢেলে দেওয়া হয়েছে। রাজ্যের সার্বিক স্বার্থ রক্ষা করতে সাধারণ মানুষের জন্য এই পঞ্চায়েত নির্বাচনে শাসক দলের রক্ত চক্ষুকে উপেক্ষা করে কংগ্রেস কর্মীদের একত্রিত হতে আহবান করেন কংগ্রেস বিধায়ক।
এদিকে ইন্ডিয়া জোট প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বিধায়ক জানান, ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে তৃণমূল স্তরে নেতৃত্বদের উপরি বিষয়টি ছাড়া হয়েছে। উভয় দলের মধ্যে স্থানীয়ভাবে কথাবার্তার মাধ্যমে প্রার্থী প্রদান করা হবে। অর্থাৎ স্পষ্টত কিছু না বললেও ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনেও বামেদের বাদ দিয়ে কংগ্রেস একা লড়াইয়ের পথে হাঁটছে না, এমনটাই ধারণা করা যাচ্ছে।