নিজস্ব প্রতিনিধি, ধর্মনগর, ২২ জুন: যোগা দিবসের অনুষ্ঠানে এসে ধর্মনগর ডিগ্রি কলেজের পুরাতন দালান বাড়ির বর্তমান পরিস্থিতি জানতে পেরে চক্ষু চড়কগাছ বিধায়কের। অবশেষে আজ বেলা দেড়টায় বাগবাসা যুব মোর্চার কার্যকর্তাদের নিয়ে ডিগ্রি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ গৌতম দাসের সাথে দেখা করার পর অধ্যক্ষকে সঙ্গে নিয়ে ডিগ্রি কলেজের বর্তমান ও পুরাতন দালান বাড়ি পরিদর্শন করে এর খোঁজ নিলেন বিধায়ক যাদব লাল দেবনাথ।
এই বিষয়ে বিধায়ক জানিয়েছেন, শুক্রবার তিনি যোগা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে সকালে কলেজে গিয়েছিলেন। সেখানে এলাকাবাসীরা কলেজের পুরাতন দালান বাড়িতে প্রতিরাতে অসামাজিক কাজ যেমন নেশা সেবন থেকে শুরু করে প্রচণ্ড হৈ হট্টগোল এই বিষয়ে এলাকাবাসীরা অভিযোগ জানান বিধায়কের কাছে। আজ সকালে এই বিষয়ে খোঁজ নিতে তিনি সেখানে ছুটে যান। এবং এই অভিযোগের সত্যতা তখনই তিনি পেয়ে যান। এই কলেজের দায়িত্বে এক জন অধ্যক্ষ রয়েছেন তাই উনাকে নিয়ে পুনরায় সেই স্থান পরিদর্শন করেন বিধায়ক।
তিনি জানান, কলেজের পুরাতন দালান বাড়িতে অসামাজিক কাজ হচ্ছে চারিদিকে চড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মদের খালি বোতল সহ নেশা করার অন্যান্য পরিত্যক্ত সামগ্রী। এই পুরাতন দালান বাড়ির ঠিক পেছনে রয়েছে একটি মহিলা হোস্টেল। যা ঘটা করে ২০১৫ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিলো। ঠিক মতো পরিচালনা না করার ফলে হোস্টেলটির একই অবস্থায় রয়েছে। রাতের অন্ধকারে সমাজদ্রোহীরা সেখানেও চালাচ্ছে অসামাজিক কাজ।
দরজা জানালা ভেঙে দুষ্কৃতিকারীরা এই হোস্টেলের বিভিন্ন জিনিসপত্র চুরি করে নিয়ে গেছে। এই পরিস্থিতি যাতে দূর করা যায় সেই বিষয়টি তিনি পুলিশ প্রশাসনের কাছে নিয়ে যাবেন। এই মহিলা হোস্টেলের পাশে একটি অর্ধনির্মিত বিল্ডিং রয়েছে। সেই বিল্ডিংটি কেন অর্ধনির্মিত অবস্থায় রয়েছে সেটাও তদন্তের বিষয়। এই বিষয়টি তিনি জেলা শাসকের গোচরে নিয়ে যাবেন বলে জানিয়েছেন। কলেজের পুরাতন দালান বাড়ি যেকোনো সময় ভেঙে পড়ার আশংকা রয়েছে তাই তিনি কলেজের অধ্যক্ষকে এই বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য।
সেই সঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, কলেজ কমপ্লেক্সে একটা বড় ক্যাম্পাস হল নেই। তিনিও এই কলেজে পড়াশুনা করেছেন। তখন এই কলেজের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ছিল দুই থেকে আড়াইশো। বর্তমানে এই কলেজের ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ছয় হাজারের অধিক। ছাত্রছাত্রীরা যাতে টিফিনের অবসর সময়ে কলেজে সাংস্কৃতিক চর্চা সহ বিভিন্ন অনুষ্ঠান করতে পারে তার জন্য যাতে একটা ক্যাম্পাস হল তৈরি করা যায় সেই বিষয়ে অধ্যক্ষ যেন কলেজ কর্তৃপক্ষের কাছে লিখে পাঠান। তিনি বিধায়ক হিসাবে নয় একজন প্রাক্তন ছাত্র হিসাবে এই কলেজের আগামী দিনের পথচলা যাতে আরও মসৃণ হয় এবং আরও ভালো কিছু এই কলেজকে উপহার দেওয়া যায় সেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এদিকে ধর্মনগর শহর থেকে কলেজে যাওয়ার পথে দীর্ঘ বছর ধরে একটি পাকা ব্রিজ অর্ধ নির্মিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে। এই বিষয়ে বিধায়ক কি বলবেন জানতে চাওয়া হলে তিনি জানিয়েছেন, দশ বছর পূর্বে এই ব্রিজের কাজ শুরু হয়েছিলো। রাজ্যে বিজেপি সরকার প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর ধর্মনগরের বিধায়ক এই বিষয় নিয়ে বারবার কথা বলেছেন। তিনি বিধায়ক হওয়ার পর রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে বিষয়টি নিয়ে যান এবং চিফ ইঞ্জিনিয়ারের সাথে কথা বলেছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, বিগত বাম আমলে চাঁদার জুলুম ছিল রাজ্যে। ঠিকাদাররা কাজে আসলে চাঁদা দিতে হবে বলে তাদের মাথা খারাপ করা হতো। যার ফলে কাজের গুণগত মান ওরা ঠিকঠাক মতো রাখতে পারেনি। তাই মাঝ পথে এই ব্রিজের কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ঠিকাদার চলে যায়। পরবর্তীতে সংশ্লিষ্ট দপ্তর ঠিকাদারের উপর ব্যবস্থা গ্রহণ করে এবং তাকে ব্ল্যাক লিস্টেড করা হয়েছে। এই অর্ধ নির্মিত ব্রিজ সম্পন্ন করতে কিছু জটিলতা রয়েছে। সেই জটিলতা কাঠিয়ে উঠা হয়েছে। ধর্মনগরের ঠিকাদার মহলের কাছে এই ব্রিজের কাজ সম্পন্ন করার জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন বিধায়ক।
তিনি জানিয়েছেন, আগামী তিন চার দিনের মধ্যে এই ব্রিজের কাজ সম্পন্ন করার জন্য রি টেন্ডার ডাকা হবে। তিনি নির্দ্বিধায় বলেন, বর্ষার মরশুমে কাজ শুরু করা না গেলেও দুর্গা পূজার আগে এই ব্রিজ নির্মাণের কাজ শুরু করা হবে।
এদিন বিধায়কের সাথে উপস্থিত ছিলেন বাগবাসা মণ্ডল সহসভাপতি সুভাষ দাস, দক্ষিণ গঙ্গানগর গ্রামের প্রধান বিভূতি ভূষণ ভট্টাচার্য, এলাকার কাউন্সিলার তপতী দাস, যুব মোর্চার বাগবাসা নেতৃত্ব জয় গোবিন্দ পাল, বিশ্বরিক ভট্টাচার্য, অপরাজিৎ শর্মা প্রমুখ।