নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৬ মে:
বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপের ফলে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় ‘রেমাল’ এখন তীব্র ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। ইতিমধ্যেই এটি ভারতীয় উপকূলে আছড়ে পড়তে চলছে বলে আবহাওয়া দপ্তর সূত্রে খবর রয়েছে। এরই প্রভাবে রাজ্যে দমকা হাওয়া সহ বিচ্ছিন্ন এলাকায় ২৬ মে থেকে ২৯ মে পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। রবিবার রাত থেকেই এই বৃষ্টিপাত শুরু হতে পারে বলে খবর।
আইএমডি থেকে এই তথ্য পাওয়ার পরেই রাজস্ব বিভাগ প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গত ২৪ মে ডিএম এবং কালেক্টরদের দুর্যোগ মোকাবিলায় যাবতীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিয়েছেন। রাজস্ব সচিব রাজ্যে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব প্রশমিত করার জন্য সমস্ত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য ডিএম এবং কালেক্টরদের সাথে অবিচ্ছিন্ন যোগাযোগে রেখেছেন। রাজ্য এবং জেলা স্তরে জরুরি অপারেশন কেন্দ্রগুলি ২৪×৭ কাজ করছে।
ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা বিবেচনা করে মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে রাজ্য কার্যনির্বাহী কমিটির একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে আজ। সভায় ডিজিপি, পিসিসিএফ, সচিব, এবং প্রাসঙ্গিক বিভাগের প্রধান এবং অন্যান্য সংস্থা যেমন আইএমডি, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, এনডিআরএফ ইত্যাদির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠকে এদিন ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতাকে মাথায় রেখে বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছেন আধিকারিকেরা। এর মধ্যে উল্লেখ্য,
২৭ এবং ২৮ মে ২০২৪ রাজ্যের সমস্ত স্কুল, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রগুলি বন্ধ থাকবে।
জেলে সম্প্রদায়কে ২৬ – ২৮ মে এর মধ্যে মাছ ধরার জন্য হ্রদ/নদী/জলাশয় ইত্যাদিতে প্রবেশ না করার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
এছাড়াও কলকাতা আগরতলা রুটে ২৬ মে দুপুর ১২ টা থেকে ২৭ মে সকাল ৯ টা পর্যন্ত সমস্ত বিমান পরিষেবা বাতিল করা হয়েছে।
তাছাড়া পরিবহন বিভাগকে জননিরাপত্তার জন্য রেলওয়ে, বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ এবং সড়ক পরিবহনের সাথে সমন্বয় করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে এবং বিমান, ট্রেন এবং অন্যান্য পরিবহন বাতিল হলে জনসাধারণকে জানাতে বলা হয়েছে।
এনডিআরএফকে বিশেষভাবে দক্ষিণ জেলা ও গোমতী জেলায় যেকোনো সংকট মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। খাদ্য অধিদপ্তরকে খাদ্য ও প্রয়োজনীয় সামগ্রীর প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে।
এদিকে আবহাওয়া দপ্তরের তরফে ২৬ মে রবিবার কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে রাজ্য জুড়ে। এদিন বজরবিদ্যুৎ সহ ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগ ৫০-৬০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় থাকবে বলে খবর। এদিকে দমকা হওয়ার গতিবেগ ৭০ কিমি প্রতি ঘন্টা পর্যন্ত থাকতে পারে। দক্ষিণ জেলা, গোমতী জেলা, ধলাই, সিপাহিজলা, খোয়াই ও পশ্চিম জেলায় বিভিন্ন জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
উত্তর জেলা ও উনকোটি জেলায় হলুদ সতর্কতা জারি রয়েছে। এদিন বজ্রপাত সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে ওই দুই জেলায়।
২৭ মে সোমবার বিপদ সংকেত জারি করা হয়েছে। এদিন বজ্রপাত সহ ঝড়ো হাওয়ার গতিবেগ ৫০-৬০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় এবং দমকা হাওয়ার গতিবেগ ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত থাকতে পারে। ত্রিপুরার গোমতি এবং সিপাহিজলা জেলার বিচ্ছিন্ন স্থানে অতি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
একইভাবে বজ্রপাত ও ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে ত্রিপুরার দক্ষিণ, ধলাই, খোয়াই এবং পশ্চিম জেলার বিচ্ছিন্ন জায়গায়।
তবে উত্তর জেলা এবং উনকোটি জেলায় কমলা সতর্কতা জারি রয়েছে এদিন। ওই দুই জেলায় বজ্র বিদ্যুৎ সহ ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
২৮ মে ত্রিপুরার উত্তর, উনকোটি এবং ধলাই জেলার বিচ্ছিন্ন জায়গায় ভারী থেকে খুব ভারী বৃষ্টিপাতের সাথে বজ্রবিদ্যুৎ এবং দমকা বাতাসের গতিবেগ ৪০-৫০ কিলোমিটার প্রতি ঘণ্টায় পৌঁছানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
রাজ্যের বাকি জেলাগুলির বিচ্ছিন্ন জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। (কমলা সতর্কতা)
২৯ মে উত্তর জেলায় কমলা সতর্কতা জারি থাকবে। এদিন ওই জেলায় বজ্রপাত সহ ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এদিন বজ্রবিদ্যুৎ থাকতে পারে রাজ্যের বাকি জেলাগুলিতে।
সকল নাগরিককে শান্ত ও আশ্বস্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে রাজ্য সরকার। ঘূর্ণিঝড় রেমালের হাত থেকে রক্ষা পেতে রাজ্য সম্পূর্ণভাবে প্রস্তুত। তাই জনগণকে চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণ নেই। রাজ্যবাসীকে সচেতন থাকার আহবান জানানো হয়েছে।