নিজস্ব প্রতিনিধি, কৈলাসহর, ৮ মার্চ: আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে ঊনকোটি-উত্তর জেলায় দ্বিধাগ্রস্ততা। বৈদিক যুগে গুরুকুলে ছাত্রদের শিক্ষা গ্রহণ করার রীতি ছিল। নিবিড় সেই সম্পর্ক কিছুটা হলেও ধাক্কা খায় আধুনিক বিদ্যালয় কেন্দ্রিক শিক্ষা ব্যবস্থায়। অবশ্য রবীন্দ্রনাথ শান্তিনিকেতনের শিক্ষাকে খাঁচা মুক্ত করার চেষ্টা করেছিলেন।
আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থায় ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয়ে হাজিরা দিয়েই গৃহ শিক্ষকের বাড়িতে দৌড়াচ্ছে। এই শিক্ষা ব্যবস্থার শুদ্ধিকরণ নিয়ে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে অনেক আলোচনা হয়েছে।
ফলাফল এসেছে “ন্যাশনাল এডুকেশন পলিসি ২০২০”। সাথে যুক্ত হচ্ছে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্সের ( এ১) ক্লাস। এই ধরনের ক্লাসে ছাত্রছাত্রীরা বড় স্ক্রিনের সামনে দাঁড়িয়ে যে কোনো বিষয় নিয়ে প্রশ্ন করলে, এআই সাথে সাথেই উত্তর দিয়ে দিচ্ছে। ইংরেজি গ্রামার থেকে কঠিন অংক কষে দিচ্ছে নিমেষেই ।
ঐ ক্লাসে শুধুমাত্র নিয়ম-শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য সংশ্লিষ্ট শিক্ষক থাকলেই যথেষ্ট। ত্রিপুরা লাগোয়া আসামের শিলচরের নরসিং স্কুলে এই ধরনের একটি ক্লাসের সূচনা হয়েছে। এই আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স শুধুমাত্র শিক্ষাক্ষেত্রে নয়, চুপিসারে ঢুকে পড়ছে চিকিৎসা ক্ষেত্রে, ব্যবসায়, প্রশাসনে ইত্যাদিতে।
সাধারণভাবে মোবাইলে কোনো সাইটে ভোরবেলা ভজন কীর্তন শুনলে, পরদিন থেকেই সেই সময়েই ভজন কীর্তন এর বিষয়গুলি সামনে চলে আসছে। এটা সম্ভব হচ্ছে এআই এর জন্যই। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এই এআই এর জন্যই ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে শিক্ষকের সম্পর্ক, ডাক্তার কর্তৃক রোগীর ক্লিনিক্যাল অবজারভেশন, সামাজিক আবহ কি বিঘ্নিত হবে না ?
এর উত্তরে বিদেশে গবেষণারত ড: শুভদীপ চক্রবর্তী জানান যে, আগামী দিনে এ১ আমাদের শাসন করবে। ইতিমধ্যেই এ১ দ্বারা রোগীদের অপারেশন শুরু হয়েছে। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই ক্যান্সার সহ বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রবল সম্ভবনা তৈরি হচ্ছে। পাশাপাশি তিনি এও বলেন যে, এই এ১ আমাদের মস্তিষ্কের ব্যবহার কমিয়ে দিতে পারে। ল্যামার্কের “ব্যবহার ও অব্যবহার” এর তত্ত্ব অনুসারে, যে কোনো জিনিস বেশিদিন ব্যবহার না হলে সেই জিনিস ক্ষীণ ও দুর্বল হয়ে যায়।
তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, আগে আমরা অনেকগুলি ল্যান্ডফোন নম্বর মনে রাখতে পারতাম। এখন নিজের মোবাইল নম্বরই কষ্ট করে মনে রাখতে হয়। জানা গেছে, ইতিমধ্যেই এ১ নিয়ন্ত্রিত ড্রোন ব্যবস্থা নিয়ে হায়দ্রাবাদে খাবার ডেলিভারি দেওয়া শুরু হয়েছে। এই ঘটনায় একটি বিতরণ সংস্থার প্রায় ১৫০ জন ডেলিভারি বয়-এর চাকুরি চলে গেছে। দুই দিন আগে কেরলের একটি স্কুলের ক্লাসে ভারতবর্ষের প্রথম এ১ নিয়ন্ত্রিত রোবট ব্যবহার করা হয়েছে। ঐ রাজ্যের একটি শিক্ষক সংগঠন এই ঘটনার মধ্যে অশনি সংকেত দেখছেন। আবার অন্যদিকে, কিছুদিন পূর্বে নেদারল্যান্ডের মেস্ট্রিক ইউনিভার্সিটির এ১গবেষক ও রেডিওলজিস্ট ডঃ লিওনার্দো উই শিলচরে এসে কাছাড় ক্যান্সার হাসপাতাল পরিদর্শন করে মার্গ-দর্শনকারী বক্তব্য রেখেছেন।
দেখা যাচ্ছে, ঊনকোটির অনেক স্কুলে ছাত্ররা ক্লাসে অংক করতে না পারলেও বাড়ি থেকে অংক করে নিয়ে আসছে। এর কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, এই সমস্ত ছাত্র-ছাত্রীরা ওপেন এ১ এর সাহায্যে কঠিন অংক বাড়ি থেকে করে নিয়ে আসছে। সুতরাং, এই এ১ একদিকে যেমন প্রশ্নচিহ্ন নিয়ে আসছে, অন্যদিকে তেমনি প্রাক্- গ্রীষ্মকালীন দখিনা বাতাসের মতো মানবজাতির কাছে আশীর্বাদ হয়ে আসছে।

