আগরতলা, ২৩ ফেব্রুয়ারি : ত্রিপুরায় সংবাদ জগতে এক নক্ষত্রের পতন হল। প্রবীণ সাংবাদিক তথা ত্রিপুরার প্রথম দৈনিক সংবাদপত্র জাগরণ-র সম্পাদক পরিতোষ বিশ্বাস আজ সকালে প্রয়াত হয়েছেন। দীর্ঘ সময় ধরে কিডনি জনিত সমস্যায় ভুগছিলেন তিনি। এছাড়াও তিনি হৃদরোগ এবং লিভারের সমস্যায় আক্রান্ত ছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৩। তিনি স্ত্রী, পুত্র সহ আত্মীয় স্বজন ও বহু গুণমুগ্ধদের রেখে গেছেন। তাঁর প্রয়াণে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী প্রফেস ডা. মানিক সাহা। এদিকে সাংসদ বিপ্লব কুমার দেব তাঁর প্রয়াণে শোক প্রকাশ করেছেন। তাছাড়া, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রায় ৫০ বছরের সাংবাদিকতার জীবনের আজ সমাপ্তি হয়েছে। মাত্র ১৯ বছর বয়সে ধলাই জেলায় কুলাইয়ের বাসিন্দা পরিতোষ বিশ্বাস সাংবাদিক হওয়ার অদম্য ইচ্ছা বুকে নিয়ে আগরতলা পাড়ি দিয়েছিলেন। সেই কলেজ জীবন থেকেই তিলে তিলে স্বপ্নকে বুকে আগলে তিনি এগিয়ে গেছেন। ছাত্রাবস্থায় তিনি ক্ষুধার্ত নামে পত্রিকা শুরু করেন। তারপর সাপ্তাহিক পত্রিকা বিতীর্ণ দিয়ে তাঁর ত্রিপুরার সংবাদ জগতে পাকাপাকিভাবে যাত্রা শুরু হয়। ১৯৮১ সালে স্বর্গীয় জিতেন চন্দ্র পাল তাঁর হাতে জাগরণ-র দায়িত্ব তুলে দেন। সেই থেকে কঠোর পরিশ্রম, সৎ ও নিষ্ঠার সাথে জাগরণ-র সম্পাদনা করে গেছেন তিনি।
চরম আর্থিক দৈন্যতার মুখোমুখি হয়েও তিনি নীতিভ্রষ্ট হননি কখনো। কারণ, অর্থের চেয়েও সততা বেশি আপন মনে করতেন তিনি। আর্থিক টানাটানির কারণে একসময় জাগরণ পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু, প্রচুর পাঠকের সহযোগিতায় পত্রিকা প্রকাশনা চালু রাখতে সক্ষম হন তিনি।
সারা জীবনের কঠোর পরিশ্রম তাঁকে ঠেলে দিয়েছে বিভিন্ন রোগের মুখোমুখি। ২০০০ সালে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তখনই তাঁর বাঁচার সম্ভাবনা ছিল খুবই ক্ষীণ। তবুও ঈশ্বরের কৃপায় সে যাত্রায় তিনি বেঁচে বাড়ি ফিরেছেন। তারপর ২০১৩ সালে তাঁর বাইপাস সার্জারি হয়। ওই সময়ও তাঁর বাঁচার সম্ভাবনা কমই ছিল। কিন্তু, জীবন যুদ্ধে জয়ী হন। এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে যান। তবে, দীর্ঘ ডাইবিটিস রোগের কারণে তাঁর দুইটি কিডনি নষ্ট হয়ে যায়। এবং ২০১৯ সালের অক্টোবর থেকে তিনি ডায়ালাইসিস নির্ভর হয়ে পড়েন। এইভাবেই চলছিল তাঁর রোগের সাথে সংগ্রাম। এরই মধ্যে উন্নত চিকিৎসার জন্য ২০২৩ সালের আগস্ট মাসে বেঙ্গালুরুর নারায়না হৃদয়ালয়া হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল। সেখানেই চিকিৎসা চলাকালীন তাঁর হৃদযন্ত্র কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছিল। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছিল। চিকিৎসকদের চেষ্টায় সে যাত্রায় তিনি প্রাণে বেঁচে বাড়ি ফিরেছিলেন। কিন্তু তাঁর ব্রেইন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।
কিন্তু সারা জীবনের যুদ্ধ আজ সকালে সমাপ্ত হয়েছে। তিনি ইহলোকের মায়া ত্যাগ করে পরলোকে গমন করেছেন।
জাগরণ পত্রিকার সম্পাদক পরিতোষ বিশ্বাস মহোদয়ের প্রয়াণে মুখ্যমন্ত্রী মর্মাহত।
তিনি তাঁর বিদেহী আত্মার সদগতি কামনা করেছেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবার পরিজনের প্রতি আমার সমবেদনা জানিয়েছেন।
বর্তমানে মুখ্যমন্ত্রী দিল্লিতে আছেন। তিনি জাগরণ সম্পাদকের পুত্র সন্দীপ বিশ্বাসের সাথে টেলিফোনে শোকবার্তা জানিয়েছেন এবং তাঁর বিদেহী আত্মার সদগতি কামনা করেছেন।
তাছাড়া, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রতিমা ভৌমিক শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, প্রায় ৫০ বছরের সাংবাদিকতা জীবনের ইতি টানলেন জাগরণ সম্পাদক প্রয়াত পরিতোষ বিশ্বাস ।
দীর্ঘদিন ধরেই তিনি কিডনিজনিত রোগসহ নানা রোগে ভুগছিলেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স ছিল ৭৩। তাঁর প্রয়ানে রাজ্যে নেমে আসে শোকের ছায়া।
মৃত্যুকালে তিনি স্ত্রী, পুত্র সহ অগণিত গুণমুগ্ধদের রেখে গেছেন। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন তিনি এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।