নিজস্ব প্রতিনিধি, কৈলাসহর, ১৬ ফেব্রুয়ারি: বিজ্ঞান মনুষ্য জাতিকে অপ্রতিরোধ্য গতি দিয়েছে, জীবনযাত্রাকে করেছে উন্নত। বিজ্ঞানের জয়যাত্রা সর্বব্যাপী হলেও, কোথাও-কোথাও অপবিজ্ঞান মনুষ্য জাতিকে একই জায়গায় আটকে রাখছে। বর্তমান সরকার বিজ্ঞানভিত্তিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে বদ্ধপরিকর।
কিন্তু দেখা গেছে, ঊনকোটি-উত্তর জেলার অঞ্চলগুলিতে হাতুড়ে চিকিৎসা ব্যবস্থা সমান্তরালভাবে চালু আছে। এদিককার শহরগুলিতে হাতুড়ে চিকিৎসকদের সংখ্যা কিছুটা কম হলেও, গ্রামে ও প্রত্যন্ত জনপদে এরা রমরমা ব্যবসা করে যাচ্ছে।
সেই রকমই “চাঁদসী ক্লিনিক” নাম দিয়ে অর্শ, ভগন্দর, একশিরা ইত্যাদি রোগের চিকিৎসার বিজ্ঞাপন শহর ও গ্রামের বাজারে, পাবলিক টয়লেটের আশেপাশে গুচ্ছাকারে আঠা দিয়ে লাগানো হয়েছে।
এই সমস্ত হাতুড়ে চিকিৎসকদের মূল টার্গেট হচ্ছে, পুরাতন ও যৌন রোগ সম্বলিত রোগী। দেখা গেছে, এই দুই জেলার গ্রামের ও শহরের অনেক জ্ঞানী ও বনদী লোকও এই সমস্ত হাতুড়ে চিকিৎসকদের খপ্পরে পড়েছিলেন। এই সমস্ত চিকিৎসকরা রোগীর সমস্ত বিবরণ শুনে এন্টিবায়োটিক থেকে এইচ সিডিউল ওষুধ ব্যবস্থাপত্রে লিখে দিচ্ছেন অথবা অস্ত্রোপচার করছেন।
মজার কথা হচ্ছে, রোগীর আবদার অনুযায়ী এই অস্ত্রোপচার অনেক সময় রোগীর বাড়িতে হচ্ছে । অথচ এই সমস্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা সরকারি হাসপাতালে উপলব্ধ। এই সকল মাদ্রাজী ও চাঁদসী ক্লিনিক ছাড়াও ঊনকোটি- উত্তরে প্রচুর সঘোষিত হোমিওপ্যাথিক, আয়ুর্বেদিক, আ্যলোপ্যাথিক ডাক্তার বর্তমান।
স্বভাবতঃই প্রশ্ন উঠছে, সরকারি সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও রোগীরা এই সমস্ত অশিক্ষিত ডাক্তারদের কাছে যাচ্ছে কেন ? এর কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, এই সমস্ত হাতুড়ে চিকিৎসকরা সদালাপী ও হাস্যময়। দ্বিতীয়তঃ রোগীর আবদার অনুযায়ী চিকিৎসা চলছে। তৃতীয়তঃ হাতেগুনা কয়েকজন রোগী কিছুটা সুস্থবোধ করলে, হাতুড়ে চিকিৎসকরা সেই সমস্ত দু’-একজন আপাত: সুস্থবোধ করা রোগীর প্রচার করছেন কয়েকশো নবাগত রোগীর কাছে। ফলে নবাগত রুগী আকৃষ্ট হচ্ছে সহজেই।
এই সমস্ত ব্যাপার নিয়ে ঊনকোটি জেলা কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডাঃ শঙ্খশুভ্র দেবনাথকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান যে, ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্টদের ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট আ্যক্টের চিঠি প্রেরণ করা হচ্ছে। ঊনকোটি-উত্তরে দাবি উঠছে যে, নিবিড় সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাকে দরদী করে তোলা এবং প্রশাসন-সমাজ সম্মিলিতভাবে হাতুড়ে চিকিৎসা ব্যবস্থার ক্ষতিকারক দিক নিয়ে গণজাগরণ সৃষ্টি করলে রক্ষা পাবে সমাজ।