নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৩ নভেম্বর : ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র ভারতের ক্ষুদ্র রাজ্য ত্রিপুরায় ধর্মীয় সহিষ্ণুতার অন্যান্য নজির স্থাপন করলেন খয়েরপুর এলাকায় বসবাসকারী একটি সংখ্যালঘু মুসলিম পরিবার। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও মুসলিম বাড়িতে সনাতনী হিন্দু রীতিতে অনুষ্ঠিত হলো কালীপূজা।
নিয়ম মেনে কালি মায়ের আরাধনায় ব্রতি হলেন মুসলিম পরিবারের লোকজন। এমনকি পূজারী হিসেবে ছিলেন খোদ সেই পরিবারেরই কালী মায়ের আরাধ্য তরুণ যুবক। ঘটনা ত্রিপুরার আগরতলা শহর অদূরে খয়েরপুর বিধানসভা কেন্দ্রের পশ্চিম নোয়াবাদীতে ।
পশ্চিম নোয়াবাদী গ্রাম পঞ্চায়েতের আমতলীতে বাড়ি রয়েছে মোহাম্মদ মোহন মিয়ার। এই মোহন মিয়ার বাড়িতেই গত একযুগ যাবত কালী ঠাকুরের পূজা হচ্ছে।স্থানীয়দের বিবরণ অনুযায়ী মোহনমিয়ার ছেলে কাসেম মিয়া স্বপ্নে কালী ঠাকুরকে পেয়েছিলেন।
তারপর থেকেই কাশেম নিজের ঘরে কালী মায়ের মন্দির স্থাপন করেন এবং প্রতিবছর দীপাবলীর আমাবস্যা রাতে সেই মন্দিরে মায়ের পূজা করেন।প্রথম প্রথম বিষয়টি তাদের পারিবারিক থাকলেও ক্রমশ সেই ঘটনা জানাজানি হয়।
লোক লজ্জা, ধর্মীয় গ্লানি এবং নানা ধরনের বিতর্ক কাটিয়ে মুসলিম বাড়িতে কালী পূজা এখন এলাকার প্রায় সবাই মানিয়ে নিয়েছেন।বিগত কয়েক বছর যাবত মোহন মিয়ার বাড়িতে কালীপূজায় এলাকার রাজনৈতিক নেতৃত্ব ক্লাব এবং সামাজিক সংস্থা থেকে শুরু করে হিন্দু মুসলিম উভয় অংশের লোকেদের আনাগোনা চলে।
এবারো সম্পূর্ণ হিন্দু ধর্মীয় রীতিতে মোহন মিয়ার বাড়িতে কালী মন্দিরে মায়ের পূজা হয়েছে। সেই পূজাতে এলাকার উভয় অংশের লোকেদের শামিল হতে দেখা গেছে।
প্রসঙ্গত মোহন মিয়ার বাড়িতে কালীপূজা হলেও মোহন মিয়া নিজে নিয়মিত ভাবে মুসলিম হিসেবে ইসলাম রীতি নীতি পালন করেন এবং নামাজ আদায় করেন। এমনকি উনার ছেলে কাসেম মিয়া সহ পরিবারের কোনো সদস্যই ধর্ম পরিবর্তন করেননি এবং মুসলিম হিসেবে চিহ্নিত রয়েছেন।
ত্রিপুরার খয়েরপুর বিধানসভা কেন্দ্রের পশ্চিম নোয়াবাদীতে মুসলিম বাড়িতে কালী পূজার ঘটনা ধর্মীয় পরিচয়ের উর্ধ্বে ভক্তি প্রদর্শনের এক ভিন্ন দৃষ্টান্ত হিসেবে সামনে উঠে এসেছে। এ ধরনের প্রয়াস রাজ্যে সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে শান্তি সম্প্রীতির বার্তা পৌঁছে দেওয়ার পাশাপাশি ধর্মীয় সহিষ্ণুতাকে আরো কাছাকাছি নিয়ে আসবে বলে অনেকেই অভিমত ব্যক্ত করেছেন।