ধর্মনগর, ৩ অক্টোবরঃ ২০১৯ সালের এক চাঞ্চল্যকর ঘটনার পর ৪১ জনের ক্রমাগত সাক্ষী দানের পরে মঙ্গলবার তিন অক্টোবর বিশেষ আদালতের বিচারক অংশুমান দেববর্মা সৌরভচন্দ্র নাথ এবং দিবাকর দাসকে তিনটি ধারায় মৃত্যুদন্ডের এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ প্রদান করেছেন।
ঘটনার বিবরনে জানা যায়, ২০১৯ সালের ১৭ জুন সন্ধ্যা ছয়টায় ছয় বছরের একটি নাবালিকা পদ্মপুর থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। সেই নাবালিকার মা শুক্লা তাঁতি সৌরভ চন্দ্রনাথের বাড়িতে ভাড়া থাকতো এবং পাশের বাড়িতে কাজ করে সংসার চালাতো। সৌরভ ৬ বছরের নাবালিকাকে নিয়ে প্রায়ই ঘুরতে যেত বলে জানা গেছে। ২০১৯ সালের ১৭ জুন সন্ধ্যা ছয়টায় নাবালিকাটিকে না পাওয়ায় সবাই খোঁজাখুঁজি করতে থাকে কিন্তু তার কোনো হদিশ না পেয়ে শেষ পর্যন্ত ওইদিন রাতে ধর্মনগর মহিলা থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরী করে শুক্লা তাঁতি। পরদিন সকালে হাফলং এর কার্গিল টিলার নিচে নাবালিকাটির মৃতদেহ দেখতে পায় স্থানীয় লোকজন। খবর দেওয়া হয় শুক্লা তাঁতিকে ও স্থানীয় পুলিশকে। শুক্লা তাঁতি মৃতদেহ শনাক্ত করে কান্নায় ভেঙে পড়ে। পুলিশ সৌরভ চন্দ্রনাথ (১৯) এবং দিবাকর দাস (২০) তাদেরকে গ্রেপ্তার করে তদন্ত শুরু করে। সৌরভের বাড়ি পদ্মপুর এলাকার মধুবাড়ি রোডে এবং দিবাকর এর বাড়ি পদ্মপুর এলাকায়। ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মহিলা থানার সাব-ইন্সপেক্টর সঞ্চিতা নাথ মামলাটি গ্রহণ করে তদন্ত শুরু করে। তদন্ত শেষ করে ২০১৯ সালের ২৫ নভেম্বর মামলার চার্জশিট জমা দেয়। তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৬৩/ ৩৭৬ বি/ ৩৭৬ ডি/ ৩০২/ ২০১ এবং পকসো আইনের ৬নং ধারায় বিচার চলতে থাকে। বিচারকের সামনে অভিযুক্ত সৌরভ এবং দিবাকর জানায় তারা নাবালিকা মেয়েটিকে হাফলং এর কার্গিল টিলায় নিয়ে গিয়ে সৌরভ প্রথমে মেয়েটিকে ধর্ষজুক্তছে। তখনই যন্ত্রণায় মেয়েটি মারা যায়। মারা যাওয়া মেয়েটিকে দিবাকর পুনরায় ধর্ষণ করে। তখন দুইজনই মদমত্ত অবস্থায় ছিল বলে জানায়। মোট ৪১ জন সাক্ষীদাতার সাক্ষ্যদানের পর বিচারক অংশুমান দেববর্মা গত ২০ সেপ্টেম্বর সৌরভ এবং দিবাকর কে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। ৩ অক্টোবর বিচারক অংশুমান দেববর্মা মামলার রায় প্রদান করেন। পকসো আইন এর ৬নং ধারা অনুযায়ী দুইজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং ৫০০০ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন। অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়। ৩৭৬ ডি ধারায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ৫০০০ টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরো ছয় মাসের কারাবাসের নির্দেশ দেওয়া হয়। আর ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ নং ধারায় দুজনকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দেন বিচারক।সরকারি আইনজীবী হিসেবে মামলাটি পরিচালনা করেন আইনজীবী সুদর্শন শর্মা।