আগরতলা, ২৬ সেপ্টেম্বর : হয়তো চাকুরিচ্যুত ১০৩২৩ শিক্ষকদের নিয়ে সমস্ত বিতর্কের যবনিকা পতন ঘটেছে! ত্রিপুরা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি অপরেশ কুমার সিং-র নেতৃত্বে গঠিত পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ চাকরিচ্যুত শিক্ষক মামলার আবেদন খারিজ করেছে এবং সাথে আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য আবেদনকারীর ২৫ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দিয়েছে। ২০১৪ সালে ত্রিপুরা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি দীপক গুপ্তা এবং বিচারপতি স্বপন চন্দ্র দাসের ডিভিশন বেঞ্চ তন্ময় নাথ এবং অন্যান্য-র দায়ের মামলায় ১০৩২৩ জন শিক্ষকের চাকরি বাতিল করার পর থেকে বহুবার আদালতে আবেদন জমা পড়েছে। এমনকি, মামলা সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছে। কিন্তু, সেখানেও ত্রিপুরা হাইকোর্টের রায় বহাল রয়েছে। সম্প্রতি বিজয়কৃষ্ণ সাহার আবেদনের শুনানি-তে ত্রিপুরা হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ ভীষণ বিরক্তি প্রকাশ করে মামলা খারিজ করে দিয়েছিল। তবুও, পুনরায় একই বিষয়ে আদালতে আবেদন জমা পড়ায় ত্রিপুরা হাইকোর্ট এবার আর্থিক জরিমানার শাস্তি দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, বামফ্রন্ট আমলে ত্রিপুরায় শিক্ষক নিয়োগে অনিয়মের অভিযোগে আদালতে মামলা হয়েছিল। শিক্ষার অধিকার আইন দেশে কার্যকর হওয়া সত্বেও তদানীন্তন বামফ্রন্ট সরকার ওই আইনের তোয়াক্কা না করেই অস্নাতক, স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষক পদে নিয়োগ করেছিল। তাতে, বঞ্চিত চাকরি প্রত্যাশী তন্ময় নাথ এবং অন্যান্য ত্রিপুরা হাইকোর্টে রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছিলেন। ওই মামলায় শুনানি শেষে ত্রিপুরা সরকারের নিয়োগ নীতি বাতিল বলে রায় দিয়েছিলেন হাইকোর্টের তৎকালীন প্রধান বিচারপতি দীপক গুপ্তা এবং বিচারপতি স্বপন চন্দ্র দাসের ডিভিশন বেঞ্চ। ওই রায়ে ত্রিপুরায় ১০৩২৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চাকরি বাতিল হয়েছিল। তাতে, মহা ফাফড়ে পরে বামফ্রন্ট সরকার ওই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে দ্বারস্থ হয়েছিল। কিন্তু, দীর্ঘ শুনানি শেষে সুপ্রিম কোর্টও ত্রিপুরা হাই কোর্টের রায় বহাল রেখেছিল।
এরই মধ্যে ত্রিপুরায় সরকার পরিবর্তন হয়। নির্বাচনের পূর্বে বিজেপির প্রতিশ্রুতি ছিল, ভোটে জয়ী হয়ে সরকার গঠন করলে চাকরিচ্যুত ১০৩২৩ শিক্ষকদের জন্য সাংবিধানিক সমাধান খুঁজে বের করা হবে। সেই মোতাবেক, ক্ষমতার পালাবদলের পর বিজেপি জোট সরকার সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হয়ে চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের চাকুরীর মেয়াদ বৃদ্ধির আবেদন জানিয়েছিল। শুধু তাই নয়, ইন্টারভিউ ছাড়া তাঁদের অশিক্ষক পদে চাকরিতে নিয়োগের অনুমতি চেয়েও আবেদন করেছিল। সুপ্রিম কোর্ট ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত শিক্ষক পদে তাঁদের বহাল রাখার সম্মতি দিয়েছিল। কিন্তু, ইন্টারভিউ ছাড়া তাঁদের চাকরিতে নিয়োগের অনুমতি দেয়নি। ফলে, তাঁদের সরকারি চাকরিতে পুনর্বাসনে স্থায়ী সমাধানের পথ বের না হওয়ায় বারবার তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হচ্ছিলেন। শুধু তাই নয়, আদালতের রায় নিয়েও বিতর্কের জন্ম দিয়েছিলেন।
আজ চাকরিচ্যুত শিক্ষক প্রণব দেব-র আবেদনের শুনানি-তে ত্রিপুরা হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি অপরেশ কুমার সিং, বিচারপতি অমরনাথ গৌড় এবং বিচারপতি অরিন্দম লোধের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ খুবই বিরক্তি প্রকাশ করেছে। হাই কোর্ট তাঁর আবেদন খারিজ করে দিয়ে আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য তাঁকে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে। এ-বিষয়ে অ্যাডভোকেট জেনারেল সিদ্ধার্থ শঙ্কর দে বলেন, ১০৩২৩ চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের মধ্যে ত্রিপুরা হাইকোর্টের একজন সিঙ্গল বেঞ্চে একটি মামলা করেছিলেন। তাতে তিনি বলেছিলেন, তাঁকে নোটিশ দেওয়া হয়নি। তন্ময় নাথের মামলায় তিনি পক্ষভুক্ত ছিলেন না। ফলে, বিনা নোটিশে কেন তাঁকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমাদের বক্তব্য ছিল, সরকার কাউকেই বরখাস্ত করেনি। বরং সরকার সুপ্রিম কোর্ট তাঁদের মামলা খারিজ করে তন্ময় নাথের মামলার রায় বহাল রাখা সত্বেও সুযোগ চেয়ে আবেদন করেছিল। বার বার সুপ্রিম কোর্টে গিয়ে তাঁদের চাকরির মেয়াদ বাড়িয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট ২০২০ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত চাকরির মেয়াদ বৃদ্ধির পক্ষে সম্মতি দিয়েছিল।
অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, ত্রিপুরা সরকার তাঁদের বরখাস্ত করেনি। আদালতের রায়ে তাঁদের চাকরি বাতিল হয়েছে। সেই রায় সরকার তাঁদের কাছে তুলে ধরেছে। তিনি জানান, সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের পর তাঁদের চাকরিতে বহাল রাখা যাবে না। সাথে তিনি আরও জানান, তন্ময় নাথের মামলায় রায়ের পর চাকরিচ্যুত শিক্ষকদের মধ্যে একজন বিজয়কৃষ্ণ সাহা ত্রিপুরা হাইকোর্টে মামলা করেন এবং হাই কোর্টের ডিভিশন বেঞ্চ খুবই বিরক্ত হয়ে বলেছিল এধরনের আবেদন কাম্য নয়। অথচ আবারও একই বিষয় নিয়ে আদালতে আবেদন জমা পড়েছে এবং আজ ওই মামলায় শুনানি হয়েছে।
অ্যাডভোকেট জেনারেলের দাবি, চাকরিচ্যুত শিক্ষক আজ ত্রিপুরা হাইকোর্টে যে আবেদন করেছিলেন তাতে কোথাও লেখা ছিল না তন্ময় নাথ এবং অন্যান্য মামলা তিনি পক্ষভুক্ত নন। তাই, ত্রিপুরা হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ তাঁর আবেদন খারিজ করে দিয়েছে এবং আদালতের মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে।