মিজোরাম ট্র্যাজেডি : দুর্ঘটনাস্থলে পৌঁছলেন গুয়াহাটি ও শিলচর থেকে চিকিৎসকের দল নিয়ে এনএফ রেলের বহু উচ্চপদস্থ ও পদস্থ আধিকারিক

– নিহত ১৭ জনের মধ্যে অসমের কাছাড়করিমগঞ্জ এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার শ্রমিকদাবি সূত্রের

– নিহতদের নিকট-আত্মীয়কে এককালীন ১০ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা রেলমন্ত্রকের

– দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে রেলমন্ত্রক গঠন করেছে উচ্চস্তরের তদন্ত কমিটি

আইজল২৩ আগস্ট (হি.স.) : মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে সংঘটিত দুর্ঘটনাস্থলে গুয়াহাটি ও শিলচর থেকে এনএফ রেলের জিএম (নির্মাণ) সহ বহু উচ্চপদস্থ ও পদস্থ আধিকারিকরা এসে পৌঁছেছেন। শিলচর থেকে এসেছে চিকিৎসকের আট সদস্যের দল। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ এবং ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশনের সাইরাং শাখার কর্মকর্তারা উদ্ধারকার্য চালিয়ে যাচ্ছেন। আহতদের সাইরাং এবং আইজল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এদিকে অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে দুর্ঘটনার কারণ বের করতে রেলমন্ত্রক একটি উচ্চস্তরের তদন্ত কমিটি করেছে বলে উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে।

ইতিমধ্যে মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করে ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এছাড়া মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে জোরামথাঙ্গা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মাও তাঁদের মর্মবেদনা ব্যক্ত করে শোকাহত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে নিহতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা ও আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন মোদী। অন্যদিকে নিহতদের নিকট-আত্মীয়কে এককালীন ১০ লক্ষ, গুরুতরভাবে আহতদের ২ লক্ষ এবং সামান্য জখম ব্যক্তিদের মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে রেলমন্ত্রক। এছাড়া অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে দুর্ঘটনার কারণ বের করতে রেলমন্ত্রক একটি উচ্চস্তরের তদন্ত কমিটি করেছে। এক্স মাধ্যমে এ খবর জানিয়েছেন উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক সব্যসাচী দে জানান, আজ বুধবার সকাল প্রায় ১১টা নাগাদ মর্মান্তিক এক দুর্ঘটনায় ভৈরবী (দক্ষিণ অসমের হাইলাকান্দি জেলা সীমান্ত) থেকে মিজোরামের সাইরাং (আইজল থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে) সংযোগকারী কুরুং নদীর ওপর নির্মীয়মাণ রেলওয়ে সেতু ভেঙে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ জন রেল কর্মী ও শ্রমিক।

তিনি বলেন, ‘যে সেতুটি ভেঙে পড়েছে, তা ছিল উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সমস্ত রাজ্যের রাজধানীকে সংযুক্ত করতে ভারতীয় রেলওয়ের অন্যতম একটি প্রকল্প। গত প্রায় দু-বছর ধরে এই প্রকল্পের কাজ চলছে।’ সব্যসাচী দে বলেন, দুর্ঘটনার কারণ এবং দুর্ঘটনা যখন ঘটেছে তখন ঠিক কতজন কর্মী সেখানে ছিলেন সে সম্পর্কে আমরা এখনও নিশ্চিত নই। এনএফ রেলের শীর্ষ আধিকারিকরা দুর্ঘটনাস্থলে গিয়েছেন, বিষয়গুলি তাঁরা তদন্ত করে দেখবেন।’

এদিকে এক সূত্রের খবর, ধ্বংসস্তূপে অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। আশংকা, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সূত্র আরও জানিয়েছে, নির্মাণস্থলে ছিলেন রেলওয়ের কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার ও বিভিন্ন পদমর্যাদার আধিকারিক। যতটুকু জানা গেছে, ওই রেল সেতু নির্মাণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন অসমের কাছাড়, করিমগঞ্জ এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বহু শ্রমিক। তবে নিহতদের নাম-ধাম সম্পর্কে এ খবর লেখা পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।

এখানে উল্লেখ করে যেতে পারে, এই প্রকল্পের ১৯৬ নম্বর সেতুর পিলার পি-৪-এর উচ্চতা ভূপৃষ্ঠ থেকে ১০৪ মিটার, যা নয়াদিল্লির আইকনিক কুতুব মিনারের চেয়ে ৪২ মিটার বেশি। মিজোরামের রাজধানীতে পৌঁছনোর আগে সাইরাং রেলওয়ে স্টেশন শেষ রেলপথ। এই প্রকল্পটি সম্পূর্ণ হওয়ার পর চালু হয়ে গেলে মিজোরামকে দেশের বিশাল রেল নেটওয়ার্কের সাথে সংযুক্ত করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে।

আজকের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তিনি প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে মৃতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন।

এছাড়া মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে জোরামথাঙ্গা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা এক্স (পূর্ববর্তী টুইটার) মাধ্যমে তাঁদের শোক ব্যক্ত করে প্রয়োজনীয় সাহায্য ঘোষণা করেছেন। অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা লিখেছেন, ‘অসমের মানুষ এই দুঃসময়ে আমাদের মিজো ভাই ও বোনদের সঙ্গে আছে। মর্মান্তিক এই ক্ষতি অপূরণীয়। নিহতদের পরিবারকে আমার সমবেদনা জানাচ্ছি। ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা, তাঁদের শোক সহ্য করার ক্ষমতা দিন।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *