আইজল, ২৩ আগস্ট (হি.স.) : বুধবার সকাল প্রায় ১১টা নাগাদ মিজোরামের রাজধানী আইজল থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে ভৈরবী (দক্ষিণ অসমের হাইলাকান্দি জেলা সীমান্ত) থেকে মিজোরামের সাইরাং (আইজল থেকে প্রায় ২১ কিলোমিটার দূরে) সংযোগকারী কুরুং নদীর ওপর নির্মীয়মাণ রেলওয়ে সেতু ভেঙে ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারিয়েছেন ১৭ জন রেল কর্মী ও শ্রমিক। এই সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১৮। এ পর্যন্ত মুমূর্ষু অবস্থায় তিন আহত শ্রমিককে উদ্ধার করা হলেও এখনও বেশ কয়েকজন ধ্বংসাবশেষে আবদ্ধ বলে ধারণা করছেন জেলা প্রশাসন ও এনএফ রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এই খবর লেখা পর্যন্ত দুর্ঘটনার শিকার শ্রমিকদের উদ্ধার করতে অভিযান চলছে। জেলার সাধারণ ও পুলিশ প্রশাসনের তত্ত্বাবধানে উদ্ধার অভিযান চালিয়েছেন কুইক রেসপন্স টিম, এনডিআরএফ, এসডিআরএফ, বিএসএফ এবং ইয়ং মিজো অ্যাসোসিয়েশনের সাইরাং শাখার কর্মকর্তারা।
সরকারিভাবে নিহত বা আহতদের পরিচয় জানানো হয়নি। তবে বিশেষ এক সূত্রের খবর, সেতুটি যখন ভেঙে পড়ছিল, তখন সেখানে কর্মরত ছিলেন অন্তত ৩০ থেকে ৪০ জন শ্রমিক। এঁদের মধ্যে ১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং তিনজনকে আশংকাজনক অবস্থায় উদ্ধার করেছে অভিযানকারী দল। আশংকা করা হচ্ছে, হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। সূত্র আরও জানিয়েছে, নির্মাণস্থলে ছিলেন রেলওয়ের কয়েকজন ইঞ্জিনিয়ার ও বিভিন্ন পদমর্যাদার আধিকারিক। যতটুকু জানা গেছে, ওই রেল সেতু নির্মাণের কাজে নিয়োজিত ছিলেন অসমের কাছাড়, করিমগঞ্জ এবং পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার বহু শ্রমিক। নিহতদের অধিকাংশই মালদা জেলার বাসিন্দা, দাবি বেসরকারি সূত্রের।
এদিকে মৃতদেহগুলির ময়না তদন্ত হচ্ছে জোরাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং আইজল সিভিল হাসপাতালে। উদ্ধারকৃত আহতদের ভরতি করা হয়েছে জোরাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে।
মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় রাজ্যের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও পুনর্বাসন মন্ত্রী পু লালচামলিয়ানা গভীর শোক প্রকাশ করে নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন। এদিন সকালে ঘটনার পর-পরই মিজোরাম, পশ্চিমবঙ্গ এবং অসমের মুখ্যমন্ত্রী যথাক্রমে জোরামথাঙ্গা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা এক্স (পূর্ববর্তী টুইটার) মাধ্যমে তাঁদের শোক ব্যক্ত করেছেন।
এছাড়া আজকের মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে মৃতদের পরিবারপিছু ২ লক্ষ টাকা এবং আহতদের ৫০ হাজার টাকা করে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন নরেন্দ্র মোদী।
অন্যদিকে নিহতদের নিকট-আত্মীয়কে এককালীন ১০ লক্ষ, গুরুতরভাবে আহতদের ২ লক্ষ এবং সামান্য জখম ব্যক্তিদের মাথাপিছু ৫০ হাজার টাকার ক্ষতিপূরণ ঘোষণা করেছে রেলমন্ত্রক। এছাড়া অত্যন্ত তৎপরতার সঙ্গে দুর্ঘটনার কারণ বের করতে রেলমন্ত্রক একটি উচ্চস্তরের তদন্ত কমিটি করেছে। এক্স মাধ্যমে এ খবর জানিয়েছেন উত্তরপূর্ব সীমান্ত রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে মিজোরামের পরিবহণ মন্ত্রী পু টিজে লালনুনতলুয়াঙ্গা, সাংসদ পি.সি লালরোসাঙ্গা, তুইরিয়ালের বিধায়ক পিকে লালডাংলিয়ানা সহ বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ সরকারি আধিকারিক পরিস্থিতি মূল্যায়ন এবং সহায়তা প্রদানের জন্য দুর্ঘটনাস্থলে অবস্থান করছেন৷