BRAKING NEWS

ডিলিমিটেশনের জের, বরাককে নিয়ে পৃথক পূর্বাচল রাজ্যের ডাক বিডিএফ-এর

৬০ আসনের পূর্বাচল বিধানসভার দাবি

শিলচর (অসম), ১৮ আগস্ট (হি.স.) : ডিলিমিটেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে অসম তথা বরাক উপত্যকার বাঙালিদের মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়েছে। এই বিজ্ঞপ্তি বাস্তবায়িত হলে বরাক উপত্যকাকে অসমের র সাথে থাকার কোনও অর্থ হয় না। বিডিএফ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে আজ শুক্রবার পৃথক পূর্বাচল রাজ্যের ডাক দিলেন দলের কর্মকর্তারা।

সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য পেশ করতে গিয়ে বিডিএফ-এর মুখ্য আহ্বায়ক প্রদীপ দত্তরায় বলেন, যেখানে ২০২৬ সালে সারা ভারতে ডিলিমিটেশন হওয়ার কথা, সেখানে তড়িঘড়ি করে ২০০১ সালের আদমশুমারির ভিত্তিতে কেন অসমে ডিলিমিটেশন করা হল, তা রহস্যজনক। তিনি বলেন, বরাকে এই ডিলিমিটেশনের মূল দায়িত্বে ছিলেন একজন অবাঙালি মন্ত্রী ও বরাকের একজন অবাঙালি বিধায়ক যাঁদের বরাকের ইতিহাস ভুগোল সম্বন্ধে কোনও জ্ঞান নেই। সহায়তায় ছিলেন ডিআরডিএ-র এক প্রাক্তন আধিকারিক যিনি এ সব বিষয়ে অবগত। এই আধিকারিক আবার দুর্নীতির দায়ে একবার গ্রেফতারও হয়েছিলেন।‌

প্রদীপবাবু বলেন, গুয়াহাটিতে গণশুনানির জন্য নির্বাচন কমিশনের যে তিন সদস্যের দল এসেছিল, সেখানে বরাক উপত্যকা থেকে দুশোর বেশি প্রতিবাদ পত্র দেওয়া হয়, মৌখিক ভাবে জোরালো যুক্তিও পেশ করা হয়। কিন্তু সব কিছুকে অগ্রাহ্য করে নির্বাচন কমিশন সামান্য কিছু রদবদল করে যেভাবে প্রস্তাবিত খসড়াকেই চূড়ান্ত করেছে তা দূর্ভাগ্যজনক।

তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায়ের আগে এতে স্বাক্ষর না করার জন্য বিডিএফ-এর পক্ষ থেকে ট্যুইট ও ইমেইলের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতিকে অনুরোধ জানানো হয়েছিল। কিন্তু কোনও কিছুকে পাত্তা না দিয়ে যেভাবে গ্যাজেট নোটিফিকেশন জারি করা হল তাতে রাজনৈতিক দুরভিসন্ধি স্পষ্ট। এমন-কি সুপ্রিম কোর্টকেও যে এই সরকার ন্যূনতম মান্যতা দেয়‌ না তাও স্পষ্ট হয়ে গেছে।

বিডিএফ-এর মুখ্য আহ্বায়ক এদিন বলেন, ১৯৮০ সালে ”বঙাল খেদা” আন্দোলনের মাধ্যমে রাজ্যের বাঙালিদের হেনস্থা ও বঞ্চনার যে প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। এনআরসি-র মাধ্যমে ১৯ লক্ষ বাঙালির নাগরিকত্ব ঝুলিয়ে রাখা হল, আধার কার্ড অকেজো করে রাখা হল, নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের নামে বাঙালি হিন্দুদের ভোট হাসিল করে রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর হওয়ার পরও আজ পর্যন্ত ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে। বাঙালিরা এই রাজ্যের সরকারি চাকরিতে ব্রাত্য। ডি ভোটার, ডিটেনশন ক্যাম্পের খাড়া ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।

প্রদীপ দত্তরায় এদিন বলেন, এমতাবস্থায় দলের সবার মতামতের ভিত্তিতে তাঁরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, বরাকের আর অসমের সাথে থাকার কোনও অর্থ হয় না। তিনি বলেন, সুপ্রিম কোর্টের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত তাঁরা কোনও আন্দোলন কর্মসূচি নেবেন না। তবে পৃথকীকরণের লক্ষ্যকে মাথায় রেখে সাংগঠনিক বিস্তার এবং বিভিন্ন জনগোষ্ঠী ও দল-সংগঠনের সাথে যোগাযোগের প্রক্রিয়া এখন থেকেই শুরু করা হবে। আগামী দু”মাস এই প্রস্তুতি চলবে। এর পর সবার মতামতের ভিত্তিতে প্রকৃত আন্দোলন কর্মসূচি নেওয়া হবে।

তিনি বলেন, ১৩ নয় এবার বরাকবাসীর ৬০ আসনের বিধানসভা চাই এবং সেই বিধানসভা হবে ”পূর্বাচল”-এর বিধানসভা। রাজ্য হবে পৃথক ”পূর্বাচল”।

বিডিএফ-এর মুখ্য আহ্বায়ক এদিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় পৃথকীকরণের দাবিতে দীর্ঘ দশ বছরের আন্দোলন করে তাঁরা সফল হয়েছিলেন। সেই আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে উপত্যাকার সমস্ত বাংলাভাষী, সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছিলেন চা জনজাতি,ডিমাসা, মণিপুরি, বিষ্ণুপ্রিয়া সহ সমস্ত জনগোষ্ঠীর মানুষ। একইভাবে পৃথক পূর্বাচল রাজ্যের দাবিতে তাঁদের সংগ্রাম আজ থেকে শুরু হল। তিনি বলেন, এটাই হবে তাঁর জীবনের শেষ সংগ্রাম এবং এতেও সফলতা আসবে, এ ব্যাপারে তিনি নিশ্চিত। তিনি এই লড়াইয়ে জাতি ধর্ম নির্বিশেষে আপামর বরাকবাসীর সহযোগিতা প্রার্থনা করেছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *