ইসিএলের মাধাইপুর কোলয়ারিতে সশস্ত্র ডাকাতি, নিরাপত্তার দাবীতে বিক্ষোভ শ্রমিকদের

দুর্গাপুর, ১৬ আগস্ট (হি. স.) ফের কোলিয়ারীতে ডাকাতি। নিরাপত্তারক্ষীদের গার্ড রুমে বন্ধ করে অবাধে লুটপাঠ চালালো দুস্কৃতিরা। কয়েক লক্ষ টাকার যান্ত্রাংশ চুরি করে চম্পট দুস্কৃতীদের। মঙ্গলবার রাত্রে ঘটনাটি ঘটেছে ইসিএলের মাধাইপুর লস্করবাঁধ কোলিয়ারিতে। ঘটনায় কেলিয়ারীর সুরক্ষা ব্যাবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে। বুধবার নিরাপত্তার দাবীতে কোলিয়ারীর উৎপাদন বন্ধ রেখে বিক্ষোভ শুরু করল শ্রমিকরা।

ঘটনায় জানা গেছে, মঙ্গলবার গভীর রাত্রে দুর্গাপুর- ফরিদপুর ব্লকে ইসিএলের মাধাইপুর লস্করবাঁধ কোলিয়ারিতে সশস্ত্র দুষ্কৃতীদল হানা দেয় বলে অভিযোগ। কোলিয়ারী সূত্রে জানা গেছে, রাত পৌনে দুটো নাগাদ জনা কুড়ি দুস্কৃতিদলটি কোলিয়ারীতে ঢুকে নিরাপত্তারক্ষীদের মাথায় আগ্নেয়াস্ত্র ঠেকিয়ে গার্ড রুমে আটকে রাখে। দুস্কৃতিদের মুখে কালো কাপড় বাঁধা ছিল। ওইসময় কোলিয়ারিতে হাতে গোনা ১০ কর্মী ছিল। তাদেরকে একটা ঘরের মধ্যে তালা বন্ধ করে দুস্কৃতিরা অবাধে লুটপাট চালায় কোলিয়ারির গোডাউনে। আনুমানিক ৪ লক্ষ টাকার যন্ত্রাংশ চুরি গেছে। ঘটনার খবর চাউর হতেই খনিকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। বুধবার সকাল থেকে কোলিয়ারির উৎপাদন বন্ধ রেখে বিক্ষোভ শুরু করে কোলিয়ারীর সমস্ত শ্রমিক সংগঠন। তাদের দাবী কোলিয়ারীর সুরক্ষা ব্যাবস্থ সুনিশ্চিত করুক ইসিএল। ঘটনাকে ঘিরে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
প্রসঙ্গত, গত ১৬ জুলাই একইরকমভাবে ওই কেলিয়ারিতে মূল্যবান কেবল তার ডাকাতি হয়েছে। স্বাভাবিকভাবে একের পর এক ডাকাতি ও চুরির ঘটনায় নিরাপত্তা ও কোলিয়ারীর ভবিষ্যত নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। জানা গেছে, ওই কোলিয়ারীতে একসময় ৬২ জন নিরাপত্তারক্ষী ছিল। ধারাবাহিক অবসর গ্রহনে এখন নিরাপত্তারক্ষী ১০ জনে ঠেকেছে। সেটাও আবার লাটিধারী। কেন গানম্যান নেই বলে অভিযোগ। আর ওই সুযোগে দুস্কৃতিদের অবাধ দৌরাত্ম। বিক্ষোভরত শ্রমিক নেতা কাঞ্চন ঘোষ, কার্তিক দাস, মুকেশ পাশওয়ান প্রমুখ জানান,” কয়লা চুরি নিয়মিত হচ্ছে। তার সঙ্গে প্রায়দিনই ডাকাতি। গত একমাস দুবার ডাকাতি হয়েছে। কেলিয়ারীর নিরাপত্তা ব্যাবস্থা একেবারে তলানিতে। এভাবে চুরি ডাকাতি হলে কোলিয়ারী বন্ধ হয়ে পড়বে।

এই কোলিয়ারীর ওপর এলাকার ৫০ হাজার মানুষের জীবন জিবিকা নির্ভরশীল।” শ্রমিকরা জানান,” যেভাবে ডাকাতি হচ্ছে কোলিয়ারীতে রাত্রে ডিউটি করতে শ্রমিকরা ভয় পাচ্ছে। তাই খনি কর্মীদের নিরাপত্তা ও কোলিয়ারীর সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে হবে ইসিএলে কর্তৃপক্ষ। ওই দাবিতে কোলিয়ারির কাজ বন্ধ করে বিক্ষোভে সামিল হয়েছি।”
উল্লেখ্য, গত বছরখানেক ধরে কয়লা পাচার চক্রে সিবিআইয়ের হাতে ইসিএলের আধিকারিকরা ধরা পড়েছে। আর তাই প্রশ্ন উঠেছে, ইসিএলের আধিকারিকদের ভুমিকায়। রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থার প্রকল্পে মুলত শিল্প নিরাপত্তাবাহিনী সিআইএসএফ মোতায়ন রাখা হয়। কিন্তু, লস্করবাঁধ কোলিয়ারীতে একের পর এক ডাকাতির ঘটনার পরও কেন সিআইএসএফ মোতায়ন করা হয়নি? তাহলে কি সর্ষের মধ্যে ভুত লুকিয়ে আছে? কয়লা চুরি ও ডাকাতির ঘটনায় আধিকারিকদের উদাসীনতায় প্রশ্ন উঠেছে গোটা শিল্লাঞ্চলে।

কোলিয়ারির নিরাপত্তাহীনতার কথা স্বীকার করে লস্কর বাঁধ কোলিয়ারির ম্যানেজার অভিমূন্য পারিধা জানান, কোলিয়ারির মধ্যে বন্দুকধারী নিরাপত্তা রক্ষীর প্রয়োজন রয়েছে। নিরাপত্তার ফাঁক থাকার কারনে দুষ্কৃতী দৌরাত্ম বেড়েছে। আগ্নেয়াস্ত নিয়ে কোলিয়ারি চত্বরে ঢুকে অবাধে লুটপাট চালাচ্ছে।” তিনি আরও বলেন,” বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *