মণিপুরে গ্রেফতার নগ্ন-ধৰ্ষিতাকে নিয়ে প্যারেড কাণ্ডে মূল অভিযুক্ত সহ দুই

– ঘটনায় জড়িত কাউকে রেহাই না দেওয়ার নির্দেশ উদ্বিগ্ন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানির– সুয়ো-মোটো মামলা নিয়ে অপরাধীদের বিরুদ্ধ কড়া অবস্থান নিতে পুলিশ প্রশাসনকে নির্দেশ মুখ্যমন্ত্রী বীরেনের

ইমফল, ২০ জুলাই (হি.স.) : মণিপুরে দলবদ্ধ দুই ধৰ্ষিতা যুবতীকে নগ্ন করে রাজপথে প্যারেড করানো এবং ভিডিও ভাইরালকাণ্ডের মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ধৃতকে থউবাল জেলার বাসিন্দা বছর ৩২-এর জনৈক হেরাদাস বলে শনাক্ত করা হয়েছে। হেরাদাসই ওই ঘটনার মর্মান্তিক ভিডিও ভাইরাল করেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। ধৃত আরেকজনের নাম এখনও জানানো হয়নি।

মর্মান্তিক এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে ব্যাপক ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে। ইতিমধ্যে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং মর্মান্তিক, দুর্ভাগ্যজনক বলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুষ্কৃতীদের শীঘ্র গ্রেফতার করে উপযুক্ত শাস্তির নির্দেশ দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি গতকাল রাতে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে ঘটনার সঙ্গে জড়িত কাউকে রেহাই না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

প্রসঙ্গত, গত ৪ মে মণিপুরের কাংপোকপি জেলায় দুই মহিলাকে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে তাঁদের নগ্ন করে হাতে অত্যাধুনিক আগ্নেয়াস্ত্র নিয়ে উল্লসিত ৮০০ থেকে হাজারখানেক যুবক রাস্তায় প্যারেড করিয়েছিল। নগ্ন যুবতীদের নিয়ে উল্লাস-প্যারেডের ভিডিও করে তা সোশাল মিডিয়ায় ভাইরাল করেছিল হেরাদাস নামের বিকৃতমনস্ক যুবক। ভিডিওয় দেখা গেছে, অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত যুবকরা দুই নগ্ন যুবতীকে নিয়ে বি ফাইনোম গ্রামে প্রবেশ করছে। তারা বেশ কিছু সম্পত্তি ভাঙচুর ও লুটপাট করে বাড়িঘর জ্বালিয়ে দিয়েছিল। এছাড়া তারা আক্রমণ চালায় গ্রামের বাসিন্দার ওপর। পাঁচ গ্রামবাসী তাদের হামলা থেকে প্রাণরক্ষা করতে পার্শ্ববর্তী জঙ্গলে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছিলেন।

ঘটনার দিন উন্মত্ত জনতার গুলিতে ঘটনাস্থলে একজন নিহত হয়েছিলেন। তাঁর সাথে ছিলেন দুই বোন সহ তিন যুবতী। তাঁদের অপহরণ করে একটি ধানক্ষেতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে এক যুবতী পালিয়ে যান। কিন্তু ১৯ বছর বয়সি এক যুবতী সহ দুজনকে সম্পূর্ণ বিবস্ত্র করে দলবদ্ধভাবে ধর্ষণ করে তারা। নিজের বোনকে দুষ্কৃতীদের হাত থেকে রক্ষা করতে সাহসী প্রচেষ্টা করেছিলেন ভাই। কিন্তু উন্মত্ত জনতা তাকে ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছিল।

এদিকে আজ বৃহস্পতিবার রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বীরেন সিং হিন্দুস্থান সমাচার-কে জানান, মণিপুর পুলিশ ঘটনাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে গ্রহণ করে অপহরণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ এবং হত্যার মামলা নথিভুক্ত করেছে। তিনি জানান, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি ঘটনাকে ‘সর্বনিম্ন অমানবিক’ বলে আখ্যা দিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং আশ্বাস দিয়েছেন, অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য কোনও সৰ্বোচ্চ প্রচেষ্টা করা হবে। ঘটনা সম্পৰ্কে গতকাল রাতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ইরানি তাঁর সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ভিডিওটি দেখে পুলিশকে সুয়ো-মোটো মামলা রুজু করে দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন৷ সে অনুযায়ী প্রায় একমাস পর গত ২১ জুন সাইকুল থানায় ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৫৩-এ, ৩৯৮, ৪২৭, ৪৩৬, ৪৪৮, ৩০২, ৩৫৪, ৩৬৪, ৩২৬, ৩৭৬, ৩৪ এবং অস্ত্র আইনের ২৫ (১সি) ধারায় মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছে।