করিমগঞ্জ (অসম), ২ এপ্রিল (হি.স.) : নানা অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নিজেদের বাহিনীর প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করেছে বিএসএফ-এর ১৬ নম্বর ব্যাটালিয়ন। করিমগঞ্জের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএসএফ-এর ১৬ নম্বর বাহিনী দোহালিয়ায় তাদের জেলা-প্রধান ছাউনিতে দিনভর নানা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ৫৭-তম প্রতিষ্ঠা দিবস পালন করেছে।
ইন্সপেক্টর শচীন শর্মার সঞ্চালনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করেছে বিএসএফ-এর নিজস্ব ব্যান্ড। এছাড়া সেনা জওয়ান সহ করিমগঞ্জের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠনও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেছে।
প্রদীপ প্রজ্বলন এবং নিজেদের ব্যাটালিয়নের প্রতিষ্ঠা দিবসের কেক কেটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন কমাডেন্ট সঞ্জয় কুমার। অতিথি বরণ, সংবর্ধনার পাশাপাশি উপহার সামগ্রী দিয়ে সম্মান জানানো হয় বিগত এক বছরে বিশেষ দক্ষতা প্রদর্শনকারী সেনা জওয়ানদের।
বক্তব্য রাখেন ১৬ নম্বর বিএন বিএসএফের কমান্ডেন্ট সঞ্জয় কুমার। তিনি বলেন, বিএসএফ-এর একমাত্র লক্ষ্য, আমৃত্যু কর্তব্য পালন করা। এই ঐতিহ্য বরাবরই বজায় রেখেছে বিএসএফ। তিনি বলেন, আজ ছিল বিএসএফ-এর ১৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের প্রতিষ্ঠা দিবস। দীর্ঘ ৫৭ বছর ধরে বিএসএফ-এর এই ব্যাটালিয়ন সুনামের সঙ্গে দেশের সুরক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিকতায় কাজ করে আসছে।
ব্যাটালিয়নের প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষ্যে জওয়ান সহ তাঁদের পরিবারের সদস্য-সদস্যাদের শুভেচ্ছা জানিয়ে মিজোরাম-কাছাড় ফ্রন্টিয়ারের শিলচর সেক্টর ডিআইজি জেকে বির্ধি বলেন, দেশ রক্ষার পাশাপাশি সার্বিক আত্মনিষ্ঠার সঙ্গে দেশের সেবায় এই ব্যাটালিয়ন তাঁদের অসাধারণ কীর্তির নজির রেখেছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং যে কোনও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মহৎ কাজের জন্য প্রশংসার যোগ্য এই ব্যাটালিয়ন।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মিজোরাম কাছাড় ফ্রন্টিয়ারের ডিআইজি (বিশেষ) অশোক কুমার ঝা, শিলচর সেক্টরের কমান্ডেন্ট কমলজিৎ শর্মা, হাইলাকান্দির পুলিশ সুপার নবজিত মহন্ত, ১৬ নম্বর বিএন বিএসএফের সেকেন্ড-ইন কমান্ড নরেন্দ্রর রুরিয়া, ফকিরচাঁদ চৌহান, ডিসিজি বিবেক মিশ্র, ডেপুটি কমান্ডেন্ট সলিল কুমার, ১৩৪ নম্বর বিএন বিএসএফের সেকেন্ড-ইন কমান্ডেন্ট অজয় ভাট, সিআরপিএফ-এর অ্যাসিস্টেন্ট কমান্ডেন্ট দ্রিপেন্দ্র সিং সহ অন্যান্য আধিকারিকরা।
প্রসঙ্গত, বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্স বা বিএসএফকে বলা হয় দেশের ফার্স্ট লাইন অব ডিফেন্স। যখনই কোনও শত্রুপক্ষ ভারতকে আক্রমণ করার চেষ্টা করে, এই আধাসেনা বাহিনীর জওয়ানরা সবার আগে দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় বুক চিতিয়ে দাঁড়ান। ১৯৬৫-এর পয়লা ডিসেম্বর প্রতিষ্ঠিত হয় এই বাহিনী। ১৯৭১-এ পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে স্বাধীনতা পেতে সবচেয়ে বেশি সাহায্য করে বিএসএফ-এর এই বাহিনী। বিশ্বের বৃহত্তম নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী হল বিএসএফ। আড়াই লক্ষেরও বেশি সদস্য, ১৮৬টিরও বেশি ব্যাটালিয়ন রয়েছে বিএসএফ-এর। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মহিলা বাহিনীও রয়েছে বিএসএফ-এরই। ভারতের নারী যে শুধু রূপে লক্ষ্মী বা গুণে সরস্বতীই নন, অস্ত্র হাতে দুর্গাও হতে পারেন, প্রমাণ করে দেখিয়েছে বিএসএফ।
করিমগঞ্জের ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের দায়িত্বে রয়েছে বিএসএফ-এর ১৬ নম্বর ব্যাটালিয়ন। সীমান্ত সুরক্ষার পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিকতার উদাহরণ রেখে চলেছে এই ব্যাটালিয়ন। সীমান্ত চোরাচালান, মাদক পাচার, মানব পাচার, অসামাজিক কার্যকলাপ রুখতে বাহিনীর বিভিন্ন বিভাগ যেমন সচেষ্ট তেমনই করোনা অতিমারি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ সহ বিভিন্ন সময় সীমান্তবাসীর পাশে দাঁড়িয়ে সমাজ সেবায় তাঁদের যথেষ্ট অবদান রয়েছে।

