ফের হাতির হানায় মৃত্যু এক গ্ৰামবাসীর, বীট অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ

বাঁকুড়া, ১৮ জানুয়ারি ( হি. স.) : দুই গ্ৰামবাসীর মৃত্যুর ১০ দিন কাটতে না কাটতেই ফের হাতির আক্রমণে মৃত্যু হল এক ব্যক্তির। বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের বেলিয়াতোড় রেঞ্জের বৃন্দাবনপুর বীট এলাকার সাগরাকাটা গ্রামে বুধবার সকালে এই ঘটনা ঘটে। ।

এদিন সকাল সাড়ে ৫ টার সময় গ্রামের বাসিন্দা কালিপদ বাউরি (৪৫) ঘুম থেকে উঠে পুকুরে শৌচক্রিয়া সারতে যাওয়ার সময় একটি হাতির সম্মুখে পড়েন। তাকে শুঁড়ে পেঁচিয়ে আছাড় মারে হাতিটি। গুরতর জখম কালিপদ বাউরিকে বেলিয়াতোড় প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। হাসপাতালে ভর্তি করার কিছুক্ষণ পরেই তিনি মারা যান। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন বেলিয়াতোড় বড়জোড়া রেঞ্জ এলাকার বাসিন্দারা। তারা বৃন্দাবনপুর বীট অফিস ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন।
জেলার হাতি সমস্যা নিয়ে আন্দোলনরত সংগঠন সংগ্রামী গণমঞ্চের জেলা সম্পাদক শুভ্রাংশু মুখার্জি বলেন, বছরের শুরুতেই এলাকায় প্রায় ৯০ টি জংলি হাতি ঢুকেছে । ঢোকার সাথে সাথেই আমরা বন দফতরকে হাতি নিয়ে সতর্ক করে বলেছিলাম অবিলম্বে হাতি সরানোর ব্যবস্থা গ্ৰহনের দাবী জানিয়েছিলাম। কারন নামেই জঙ্গল। কিন্তু ঘন জঙ্গলের অস্তিত্বই নেই বড়জোড়া বেলিয়াতোড় ও গঙ্গাজলঘাটি রেঞ্জে। ফলে হাতি লোকালয়ে ঢুকে হামলা চালাবে। প্রাণহানির মত ঘটনার আশঙ্কার কথাও বলেছিলাম। কিন্তু বন কর্তারা কর্নপাত করেন নি। আমাদের আশঙ্কা অমূলক ছিল না,গত ১০ জানুয়ারি বুনো হাতির আক্রমণে পাশাপাশি দুটি গ্রামের ২ জনের মৃত্যু ঘটে । এই ঘটনার পরদিনই রাজ্যের মুখ্য বনপাল এস কুনাল ডাইভাল বেলিয়াতোড় বন বাংলোয় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্তাদের নিয়ে হাতি ঠেকাতে বৈঠক করেন। সিদ্ধান্ত হয় প্রতিটি হাতির উপর নজরদারি চালানো হবে।

শুভ্রাংশু মুখার্জির অভিযোগ, এটা সম্ভব নয় সেকথা বলে জানিয়েছিলাম হাতি অন্যত্র সরানো হোক। সংগঠনের সভাপতি পূর্ণেন্দু সরকার দাবি করেন মৃতের পরিবারকে দশ লক্ষ টাকাক্ষতিপূরণ দেওয়া হোক ।এখন ৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এটা ১০ বছর আগের সিদ্ধান্ত। এখন আমরা এই ক্ষতিপূরণ ১০ লক্ষ টাকা দাবি করছি। সঙ্গে মৃতের পরিবারের একজনকে চাকরি দিতে হবে।
এদিন সাগরকাটায় মৃতের পরিবারে গিয়ে দেখা যায় কালিপদ বাউরির বৃ্দ্ধা মা, স্ত্রী ও নাবালক ছেলে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন। তার স্ত্রী গীতা বাউরি বলেন, আমাদের ৫ লাখ টাকা চাইনা। আমার মানুষটাকে ফিরিয়ে দিক। পরিবারের একমাত্র রোজগেরে ছিলেন কালিপদ। দিনমজুরী করে সংসার চলত। এখন কি হবে।

সাগরাকাটা বন সুরক্ষা কমিটির আহ্বায়ক অনাথ চৌধুরী ক্ষোভের সঙ্গে বলেন, আর সহ্য করা যাচ্ছে না। হয়তো আগামী কাল আমার পালা। এবার তীব্র আন্দোলন ছাড়া উপায় নেই। বাঁচার রাস্তা খুঁজতে এবার এলাকাবাসীকেই পথে নামতে হবে । এবিষয়ে বাঁকুড়া উত্তর বন বিভাগের ডিএফও উমর ইমাম বলেন, হাতি গুলিকে অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে । মৃতের পরিবারের হাতে নিয়মানুযায়ী ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ।
বন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার জেলায় হাতি রয়েছে ৮৬-৮৮টি। তার মধ্যে বড়জোড়া রেঞ্জের সাহারজোড়ায়- ৩০টি, মনোহরে-২২টি, পাবয়া-১টি, বাঁকুড়া উত্তর রেঞ্জে বিহারজুড়িয়া-২টি, বারোমেসিয়া-১টি, বেলিয়াতোড় রেঞ্জে লাদুনিয়ায় ১৭টি, কাঁটাবেসিয়ায় ১০-১২টি, গঙ্গাজলঘাঁটি রেঞ্জে সারংপুরে ২টি ও সোনামুখী রেঞ্জে পাথরায় ১টি হাতি রয়েছে । হাতি উপদ্রুত এই সমস্ত এলাকায় সকলকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। সন্ধ্যার পর বাইরে যেতে নিষেধ করেছেন বনদফতর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *