নয়াদিল্লি, ২৪ ডিসেম্বর (হি.স.): বছর আসে বছর যায়, থেকে যায় শুধুই স্মৃতি। কিছু স্মৃতি, কিছু প্রাপ্তি এমনও থাকে যে কারণে চিরকাল স্মরণীয় হয়ে থাকে কোনও একটি বছর। ২০২২ সাল শেষ হতে আর মাত্র কয়েকটি দিন বাকি, তারপরই ২০২৩ সালকে নতুন করে বরণ করে নেব সবাই, ভালোর আশায়। তার আগে পিছনে ফিরে দেখে নেওয়া যাক ২০২২ সালে কী কী ছিল আমাদের প্রাপ্তি। খারাপ ও ভালো স্মৃতিকে পাথেয় করেই তো জীবনে এগিয়ে চলা।
প্রতিটি মাস অনুযায়ী বহুভাষী সংবাদ সংস্থা হিন্দুস্থান সমাচার-এর সংকলিত ২০২২ সালকে ফিরে দেখা
জানুয়ারি
১ – ভোররাত ২.১৫ মিনিট নাগাদ জম্মু-কাশ্মীরের কাটরায় বৈষ্ণো দেবী মন্দিরে পদদলিত হয়ে ১২ জন মারা যান এবং ১৬ জন আহত হন।
৫– কৃষকদের বিক্ষোভের জেরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কনভয় পঞ্জাবের ফিরোজপুর জেলায় একটি ফ্লাইওভারে আটকা পড়ে। দীর্ঘক্ষণ আটকে পড়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী।
৮– ভারতের নির্বাচন কমিশন উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গোয়া এবং পাঞ্জাব, এবং মণিপুরে ভোটের তারিখ ঘোষণা করে।
২১–১৯৭১ সালের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের স্মরণে ইন্ডিয়া গেটে গত পঞ্চাশ বছর ধরে যে অমর জওয়ান জ্যোতি ক্রমাগত জ্বলছিল, নির্মীয়মান সেন্ট্রাল ভিস্তা পুনর্নির্মাণ প্রকল্পের অংশ হিসাবে জাতীয় যুদ্ধ স্মৃতিসৌধে অনন্ত শিখার সাথে সেটি একীভূত করা হয়।
ফেব্রুয়ারি
১০— উত্তরপ্রদেশে সাত পর্যায়ে বিধানসভার ৪০৩ আসনে ভোটগ্রহণ হয়। লড়াই হয়েছিল মূলত বিজেপি ও সমাজবাদী পার্টির মধ্যে।
১৪— কর্ণাটকের হিজাব নিয়ে রায় দেয় হাইকোর্ট, অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে কর্নাটকের সমস্ত স্কুল ও কলেজে কার্যকর করা হয়।
মার্চ
৬-শ্রীনগরে বোমা হামলা। শ্রীনগরের বাজারে বোমা ছোড়ে জঙ্গিরা, মৃত্যু হয় দু’জনের ও ২৪ জন আহত হন।
৯-ভারত হরিয়ানার সিরসা থেকে ব্রহ্মোস ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে, যা পাকিস্তানের পঞ্জাবের খানেওয়াল জেলার মিয়া চান্নুতে ভেঙে পড়ে।
১০— উত্তর প্রদেশ-সহ পাঁচটি রাজ্যে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনের ভোটের ফল ঘোষিত হয় – উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, গোয়া, মণিপুরে বিজেপি জিতেছে। পঞ্জাবে আম আদমি পার্টি জয়লাভ করে।
১৫-কর্ণাটকের স্কুলগুলিতে হিজাবের উপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রাখে কর্ণাটক হাইকোর্ট।
২১-পশ্চিমবঙ্গের বীরভূম জেলার বগটুই গ্রামে পুড়িয়ে মারা হয় বেশ কয়েকজনকে। পরে এই ঘটনার তদন্তভার হাতে নেয় সিবিআই।
এপ্রিল
১০-ঝাড়খণ্ডের দেওঘর জেলার ত্রিকূট পর্বতে ভেঙে পড়ে কেবল কার। ৩ জনের মৃত্যু হয়, অনেকে আহত হয়েছিলেন ও ৩৮ জনকে নিরাপদে উদ্ধার করা হয়।
২০-বিতর্কিত টুইটের জন্য জিগনেশ মেভানিকে গ্রেফতার করে অসম পুলিশ।
২৭-তামিলনাড়ুর থাঞ্জাভুর জেলায় একটি মন্দিরের রথ ওভারহেড বিদ্যুতের সংস্পর্শে আসায় ১১ জনের মৃত্যু হয়।
মে
১৩-ভয়াবহ আগুন লাগে রাজধানী দিল্লির মুন্ডকা এলাকায়। এই অগ্নিকাণ্ডে ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছিল ও ৪০ জন আহত হয়েছিলেন।
১৬— দলীয় নেতৃত্বের সঙ্গে মতপার্থক্যের কারণে কংগ্রেস ছেড়ে দেন সিনিয়র নেতা কপিল সিব্বল।
জুন
৪-উত্তর প্রদেশের হাপুরের রাসায়নকি প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে মৃত্যু হয় ৯ জনের। আহত হয়েছিলেন ১৯ জন।
১৩— ন্যাশনাল হেরাল্ড মামলার তদন্তে কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীকে ইডি-র জেরা। প্রতিবাদে গোটা দিল্লিতে কংগ্রেসের বিক্ষোভ। আটক হন ৪০০ কংগ্রেস কর্মী-সমর্থক।
১৪— ভারত গৌরব প্রকল্পের অধীনে ভারতের প্রথম বেসরকারি ট্রেন চলে তামিলনাড়ুর কোয়েম্বাটোর ও মহারাষ্ট্রের শিরডির মাঝে।
১৬— কেন্দ্রের ‘অগ্নিপথ’ প্রকল্পের ঘোষণা, বিরোধীদের বিরোধিতা। ক্রমেই অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বিহার-সহ দেশের বিভিন্ন রাজ্য।
২১— মহারাষ্ট্রে রাজনৈতিক ডামাডোল। একনাথ শিন্ডে-সহ ২১ বিধায়ক সুরাটে চলে যান। একনাথকে শিবসেনা থেকে বহিষ্কার করলেন উদ্ধব ঠাকরে।
২৫— ২০০২-এর গুজরাট দাঙ্গার দায়ে তিস্তা শীতলবাদ এবং প্রাক্তন আইপিএস আধিকারিক আরবি শ্রীকুমার গ্রেফতার।
২৭— আল্ট নিউজের প্রতিষ্ঠাতা মহম্মদ জুবেরকে গ্রেফতার করল দিল্লি পুলিশ। বিতর্কিত টুইটের জন্য দিল্লি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
৩০-মণিপুরের নোনে জেলায় ভয়াবহ ভূমিধসে ৫৮ জনের মৃত্যু হয় ও ৩ জনের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
জুলাই
৫-একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বে ও ভারতীয় জনতা পার্টির নেতৃত্বাধীন জোট (শিবসেনা দলত্যাগী দল) মহারাষ্ট্র বিধানসভার ১৬৪ সদস্যের সমর্থনে আস্থা ভোটে জয়লাভ করে।
২১— বিপুল ব্যবধানে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে জয়ী হন দ্রৌপদী মুর্মু। পরাজিত হন বিরোধীদের প্রার্থী যশবন্ত সিনহা। ২৫ জানুয়ারি দেশের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন দ্রৌপদী মুর্মু।
২৫— গুজরাটের বোটাদ জেলায় বিষাক্ত মদ্যপানে মৃত্যু হয় ৪২ জনের। অসুস্থ হয়ে পড়েন কমপক্ষে ৯৭ জন।
আগস্ট
৯— নীতিশ কুমার বিহারের মুখ্যমন্ত্রীর পদ ত্যাগ করলেন। বিজেপি-র সঙ্গে সম্পর্কচ্ছেদ জনতা দল (ইউ)-এর। ১০ আগস্ট ফের মুখ্যমন্ত্রী হন নীতীশ কুমার।
১১— ভারতের ১৪-তম উপরাষ্ট্রপতি হন পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়।
২৬— কংগ্রেসের সঙ্গে পাঁচ দশকের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করলেন জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গুলাম নবী আজাদ। পরবর্তী সময়ে গঠন করেন নিজের দল।
২৭- সুপ্রিম কোর্টের ৪৯ তম প্রধান বিচারপতি হন উদয় উমেশ ললিত। অতি অল্প সময়ের জন্য সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি ইউ ইউ ললিত।
২৮— আদালতের অনুমতি সাপেক্ষে ভেঙে ফেলা হয় উত্তর প্রদেশের নয়ডার বেআইনি বহুতল টুইন টাওয়ার।
সেপ্টেম্বর
২-কেরলের কোচিতে আইএনএস বিক্রান্তকে ভারতীয় নৌবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। জলপথে আরও শক্তি বেড়ে যায় ভারতের।
৪— মহারাষ্ট্রের পালঘর জেলায় পথদুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় টাটা সন্স-এর প্রাক্তন চেয়ারম্যান সাইরাস মিস্ত্রির।
৫— ঝাড়খন্ড বিধানসভায় আস্থা ভোটে জয়লাভ করেন হেমন্ত সোরেন। বিরোধীরা হেমন্তের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ এনেছিলেন, আস্থাভোটে জিতে আরও আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠেন হেমন্ত সোরেন।
৬— দিল্লির মদ কেলেঙ্কারীর তদন্তে দিল্লির উপ-মুখ্যমন্ত্রী মণীশ শিশোদিয়া-সহ ৪০ জনের বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি ও সিবিআই।
৭— কন্যাকুমারী থেকে কংগ্রেসের প্রাক্তন সভাপতি রাহুল গান্ধী ৩,৭৫১ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ভারত জোড়ো’ যাত্রা শুরু করেন। দীর্ঘ পথ অতিক্রম করে ২৪ ডিসেম্বর এই পদযাত্রা দিল্লিতে এসে পৌঁছয়।
৮— ‘সেন্ট্রাল ভিষ্টা’-তে নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর মূর্তির উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী। এ দিনই রাজপথ-এর নাম বদলে রাখা হয় কর্তব্যপথ।
১৬— মধ্যপ্রদেশের কুনো জাতীয় উদ্যানে ছাড়া হল আফ্রিকার নামিবিয়া থেকে আনা আটটি চিতা।
২২— ১৩টি রাজ্যে ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইণ্ডিয়া’ (পিএফআই)-র সঙ্গে যুক্ত স্থানে এনআইএ-র হানা। গ্রেফতার ১০৬ জন। পিএফআই-এর বিরুদ্ধে এটি ছিল সবথেকে বৃষ্টম অভিযান।
২৮— ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইণ্ডিয়া (পিএফআই)-কে নিষিদ্ধ করল কেন্দ্রীয় সরকার। একইসঙ্গে পিএফআই-এর সঙ্গে যুক্ত ৮টি সংগঠনকেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়।
অক্টোবর
১— টেলিকম ক্ষেত্রে নতুন যুগের সূচনা, ভারতের ১৩টি শহরে ৫জি টেলিযোগাযোগ পরিষেবা শুরু হয়।
২— উত্তর প্রদেশের কানপুরের পুকুরে পড়ে যায় একটি ট্রাক্টর-ট্রলি, মন্দির থেকে ফেরার পথে ভয়াবহ দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় ২৭ জনের।
৪— উত্তরাখণ্ডের উত্তরকাশীতে হিমবাহের জেরে মৃত্যু হয় ৩০ জন পর্বতারোহীর। সকলে নেহরু ইনস্টিটিউট অফ মাউন্টেনিয়ারিং প্রশিক্ষণরত ছিলেন।
১৩—হিজাব বিতর্কে সুপ্রিম কোর্টের দুই সদস্যের বেঞ্চে মতবিরোধ দেখা দেয়, বিষয়টি শেষমেশ গড়ায় প্রধান বিচারপতির বেঞ্চে।
১৪— জ্ঞানবাপী মসজিদে শিবলিঙ্গের কার্বন ডেটিং পরীক্ষার আর্জি খারিজ করে দেয় এলাহাবাদ হাইকোর্ট।
১৭—সর্বভারতীয় কংগ্রেস সভাপতি পদের নির্বাচন হয়। কর্ণাটকের বেল্লারি থেকে ভোট দেন প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। এই নির্বাচনের পর ১৯ অক্টোবর কংগ্রেস সভাপতি নির্বাচিত হন মল্লিকার্জুন খাড়গে।
৩০— গুজরাটে মোরবি জেলায় মাছু নদীর ওপর ভেঙে পড়ে একটি ঝুলন্ত সেতু। মর্মান্তিক এই ঘটনায় মৃত্যু হয় ১৩৫ জনের। পরে দুর্ঘটনাস্থলে যান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। গুজরাটে ভোটের প্রাক্কালে এই ঘটনা আলোড়ন ফেলে দিয়েছিল।
নভেম্বর
১-বায়ুদূষণে নাজেহাল অবস্থা হয় দিল্লিতে, দূষণের কবলে চলে যায় উত্তর প্রদেশের নয়ডাও।
৭— সুপ্রিম কোর্ট ৩-২ ভোটে সংবিধানের ১০৩-তম সাংবিধানিক সংশোধনীর বৈধতা বহাল রাখে। এতে অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণের কথাবলা হয়েছে।
১০— দেশের ৫০-তম প্রধান বিচারপতি হলেন ডিওয়াই চন্দ্রচূড়। বিচারপতি ইউ ইউ ললিতের স্থলাভিষিক্ত হন তিনি।
১১— বেঙ্গালুরু কেম্পে গৌড়া আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ১০৮ ফুট উঁচু কেম্পে গৌড়ার মূর্তির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
১২—হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়, ৬৮ আসনে লড়াই হয়েছিল মূলত বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে। লড়াইয়ে ছিল আম আদমি পার্টিও।
১৪— দিল্লিতে আফতাব নামে এক যুবক তাঁর বান্ধবী শ্রদ্ধা ওয়াকারকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য দেহ ৩৫ টুকরো করে। দিল্লির পাশাপাশি গোটা দেশে শোরগোল ফেলে দেয় এই ঘটনা।
১৮-বিক্রম-এস রকেট, অন্ধ্রপ্রদেশের শ্রীহরিকোটা থেকে ইসরোর সঙ্গে অংশীদারিত্বে বেসরকারি মহাকাশ সংস্থার রকেট উৎক্ষেপণ করা হয়।
২০-ম্যাঙ্গালোরের রাস্তায় একটি অটোরিক্সায় বিস্ফোরণ, অভিযুক্ত মহম্মদ শফিক প্রেসার-কুকার বোমা ব্যবহার করে।
ডিসেম্বর
১— গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনের প্রথম পর্যায়ের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়।
৫— গুজরাটে বিধানসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় পর্যায়ের ভোটগ্রহণ হয় এদিন।
৮— গুজরাটে ১৮২ আসনের মধ্যে ১৫৬টিতে জয়লাভ করে বিজেপি। উপর্যুপরি সপ্তম বার জয় হল তাদের। এদিনই হিমাচল প্রদেশে বিধানসভা নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়, ৬৮টি আসনের মধ্যে ৪০টিতে জয় পায় কংগ্রেস। হিমাচল প্রদেশে সরকার গঠন করে কংগ্রেস।
৯— অরুণাচল প্রদেশের তাওয়াং সীমান্তে প্রদেশের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে চিন-ভারত। কারও মৃত্যু না হলেও, আহতের খবর পাওয়া যায়।
২১-চিন-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নতুন করে বাড়তে থাকে করোনা, পর্যালোচনা বৈঠক ভারতের।
২৩-নির্দিষ্ট সময়ের আগেই সমাপ্ত সংসদের শীতকালীন অধিবেশন।

