● এই সংক্ষিপ্ত তালিকা কলকাতার গ্লেনবর্ন পেন্টহাউসে ঘোষিত হয়েছে।
● এই সংক্ষিপ্ত তালিকা ঐতিহাসিক মাইলফলকের নির্দেশ করে এবং প্ৰত্যেকটি উপন্যাসে তাদের নিজেদের ভৌগোলিক অবস্থানের ধারণা অতি দৃঢ়।
● ভারতীয় সাহিত্যে ভাষাবৈচিত্রের প্রচার হেতু এই সংক্ষিপ্ত তালিকার চয়ন।
কলকাতা, ২৬শে অক্টোবর ২০২২: পঞ্চম বর্ষে পদার্পিত JCB প্রাইজ ফর লিটারেচর, আজকে তার সংক্ষিপ্ত তালিকার ঘোষণা করলো কলকাতার গ্লেনবর্ন পেন্টহাউসে এক আকর্ষণীয় অনুষ্ঠানে। বিগত ৫ বছর ধরে JCB প্রাইজ ফর লিটারেচর ভারতীয় সাহিত্যে শ্রেষ্ঠ অর্জনসমূহের উদযাপন করে আসছে। অনুষ্ঠানে, সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মের জন্যে ২০২২ এর সংক্ষিপ্ত তালিকার ঘোষণা করলেন মিতা কপূর, পুরস্কারের লিটারেরী নির্দেশক। সংক্ষিপ্ত তালিকায় সামিল ৫টি বিভিন্ন ভাষার অনুবাদগ্ৰন্থ ও দুজন প্রথম লেখক। জয়ন্ত কৃপালানি, পারমিতা সাহা ও সন্দীপ রায়ে গদ্যাংশ পঠন করে অনুষ্ঠানের শোভাবর্ধন করলেন। সংক্ষিপ্ত তালিকার জন্যে চয়নিত উপন্যাসগুলি হলো:
মনোরঞ্জন ব্যাপারীর ঈমান (অনুবাদ: অরুণাভ সিনহা) (একা)
খালিদ জাভেদের দ প্যারাডাইস অফ ফুড (উর্দু থেকে অনুবাদ: বারান ফারুকী) (জগরনট)
শীলা টমির বল্লী (অনুবাদ: জয়শ্ৰী কালাঠিল) (হারপর পেরেন্নিয়াল)
গীতাঞ্জলি শ্রীর টুম্ব অফ স্যান্ড (অনুবাদ: ডেইজী রকওয়েল)
চুদেন কাবিমোর সং অফ দ সয়েল (নেপালি থেকে অনুবাদ: অজিত বড়াল) (রচনা বুক্স ইন্ডিয়া এন্ড ফাইনপ্রিন্ট, নেপাল)
সংক্ষিপ্ত তালিকার উপর মন্তব্য করে, জুরি চেয়ার মিঃ এ এস পন্যেরসেলভন বললেন,
সাহিত্যের বিচার নিজে থেকেই একটি কঠিন কাজ। নতুন ঘটনাসমূহ থেকে নিয়ে বিভিন্ন কথনশৈলী, লেখকেরা তাদের বেড়াজালের বাইরে যাওয়ার প্রয়াস করছেন। প্রত্যেকটি ধাপ গুরুত্বপূর্ণ এবং প্রত্যেকটি নতুনত্ব মূল্যবান। কিন্তু যখন চূড়ান্ত মূল্যায়ণ হলো, এই মানসপ্রসূত রত্নগুলী হৃদয়স্পর্শী হয়ে দাঁড়ালো, এবং সহমর্মিতা হয়ে গেল নিরীক্ষণের চাবিকাঠি। প্রত্যেকটি উপন্যাসে সহমর্মিতার ছাপ পরিস্কার, একে অপরের প্রতি উদ্বেগ দৃঢ়, এবং একটি ভাব যেখানে মন হৃদয়ের আঙিনায় মিলিয়ে যায়না।
এ্যামাজন ইন্ডিয়ার মিডিয়া বিজনেস ডিরেক্টর প্রজ্ঞা শর্মা এই ব্যাপারে বললেন,
আমরা এ্যামাজনে অতীব উৎফুল্ল যে শুরু থেকেই আমরা JCB প্রাইজ ফর লিটারেচরের সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছি। একসাথে আমরা সাহিত্যপঠনের অগ্রগতির জন্যে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ভারত বিভিন্ন ভাষা ও বিবিধ সংস্কৃতির দেশ, যেখানে একাধিক উত্তমমানের সাহিত্য তৈরি হয়। বিগত চার বছর ধরে, ভারতীয় সাহিত্যের অনন্য কাজগুলিকে JCB প্রাইজ ধারাবাহিকভাবে একটি বিশ্বস্ত ও মর্যাদাপূর্ণ সূত্র হয়ে চিহ্নিত করেছে। এ্যামাজন ইন্ডিয়া খুবই খুশি যে সাহিত্যের একেকটা মানিকগুলি আমরা পাঠকদের কাছে নিয়ে আসতে চলেছি দেশে ও বিদেশে।
শীঘ্রই বিজয়ীগ্রন্থ নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। মিতা কপূর, লিটারেরী ডিরেক্টর বললেন,
“আমরা খুবই আনন্দিত যে JCB প্রাইজ ফর লিটারেচরের পঞ্চম বর্ষে এত বিবিধ একটি সংক্ষিপ্ত তালিকা আমরা আনতে পেরেছি। এই তালিকা বিভিন্ন ভারতের চিত্রায়ন করে ভৌগোলিক সীমা পেরিয়ে। এটি আমাদের বৈচিত্রময় শিল্পের এক উজ্বল প্রতিনিধিত্বের উদাহরণ, ভাষা, লেখক এবং প্রকাশক মিলিয়ে। কিন্তু তারও উপরে, এটি উৎকৃষ্ট ভারতীয় সাহিত্যের একটি ছাপ।”
এই ৫জন চয়নিত লেখক প্রত্যেকে ১ লক্ষ্য টাকায় পুরস্কৃত হবে, এবং অনুবাদগ্রন্থ হলে অনুবাদক উপরন্ত ৫০ হাজার টাকায় পুরস্কৃত হবে। JCB প্রাইজ ফর লিটারেচরের বিজয়ীগ্রন্থের লেখক ২৫ লক্ষ্য টাকা পাবে, এবং সেটির ঘোষণা হবে ১৯শে নভেম্বর ২০২২। বিজয়ীগ্ৰন্থ অনুবাদগ্রন্থ হয়ে থাকলে, অনুবাদক কে দেওয়া হবে ১০ লক্ষ্য টাকা।
সংক্ষিপ্ততালিকাভুক্ত গ্রন্থ: জুরির মন্তব্য, সারাংশ ও লেখক জীবনী:
ঈমান: মনোরঞ্জন ব্যাপারী (অনুবাদ: অরুণাভ সিনহা একা)
জুরির মন্তব্য: ঈমান পুরোপুরি ভাবে বাংলা সাহিত্যে মানবতাবাদী ঐতিহ্যের উপন্যাসরূপ। এই বই পরিধিবাসীদের একটি বর্ণময় চিত্র ফুটিয়ে তোলে, কিন্তু সেই চিত্রে ইক্ষণকাম বা পৃষ্ঠপোষকতা নেই। যতই পরিবেষ্টিত হোক না কেন, প্রত্যেক চরিত্রের নিজনিজ শক্তি আছে। গূঢ়ভাবে খাঁটি ও সৎ এই গল্পটি মর্মস্পর্শী ও সুসংগত।
সারাংশ: সেন্ট্রাল জেলে যখন ঈমান প্রবেশ করেছিল তখন ওর বয়েস ৬, ওর মা জহুরা বিবির কোলে করে যে তার স্বামীকে খুন করার অপরাধে কারাদন্ডিত। ছেলের ৬ বছর বয়সে মায়ের মৃত্যু হয়। ২০ বছর পর জেল থেকে নিষ্কৃতি পায়ে ঈমান, এতগুলো বছর জেল আর জুভেনাইল হোমে কাটিয়ে বাড়ির কোনো হদিশ নেই তার কাছে। এক পকেটমারের উপদেশে, যাদবপুর রেল স্টেশনে জমাদারের কাজ করা শুরু করে ঈমান, এবং সেখানকার রিক্সাচালকরা এবং চাওয়ালারা, যারা কাটা পড়া শরীর টাকার বিনিময়ে বিক্রি করে থাকে, তারা তাকে আপন করে নেয়। কিন্তু এই স্বাধীনতা ঈমান কে বিভ্রান্ত করে। জেলের জীবনের পর, প্ল্যাটফর্মের জগৎ ওর মোহভঙ্গ করে দেয়। ঈমান বুঝতে পারে যে এই জগতটাও একটি জেল, শুধু আকারে অনেক বেশি বড়। কিন্তু জেল কাউকে ক্ষুধার্ত রাখতো না, আর সবার মাথার ওপর একটা করে ছাদ থাকতো। ওকে বলা হয়েছে যে জেল থেকে বাহিরের পথ এক, কিন্তু ফেরত যাওয়ার পথ একাধিক। ইমান, যার নামের মানে সততা, কি পারবে? মনোরঞ্জন ব্যাপারীর লেখনশৈলীর মতো, যেখানে কঠিন সত্যি থেকে বেশি দূর নয় বিদ্রুপ ও রূঢ় কৌতুক, এই উপন্যাসটি সেই সকল আদলহীন শহুরে জীবনের অন্বেষণ স্বরূপ, যাদের বেঁচে থাকা প্রত্যেকটি দিন গুনে।
লেখক: মনোরঞ্জন ব্যাপারী পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি জন্মেছিলেন বরিশালে। তিনবছর বয়সে পশ্চিমবঙ্গে চলে আসার পর তিনি দুটো উদ্বাস্তু শিবিরে জীবনযাপন করেন, আর ১৪ বছর বয়সে কর্মসূত্রে সেখান থেকে সড়ে আসেন। ২৪ বছর বয়সে সুপরিচিত শ্রমিক সক্রিয়তাবাদী শঙ্কর গুহ নিয়োগীর সাথে তাঁর আলাপ হয় এবং তার পর উনি নক্সাল রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে পড়েন। জেলে বসেই উনি সাক্ষরতা লাভ করেন। একদিন রিক্সা চালাতে গিয়ে ওনার সাক্ষাৎ হয় মহাশ্বেতা দেবীর সঙ্গে, যিনি তাঁকে তাঁর জার্নাল, বাটিকা-য় লিখতে অনুরোধ করেন। তারপর থেকে ব্যাপারীর নামে প্রকাশিত হয় মোট ৮টি উপন্যাস, ৪খণ্ড স্মৃতিচারণা, এবং পঞ্চাশের বেশী ছোটগল্প। ওনার নিবন্ধ, “ইস দেয়ার দলিত রাইটিং ইন বাংলা” যেটি মীনাক্ষী মুখার্জী অনুবাদ করেন ইকোনোমিক অণ্ড পলিটিক্যাল উইকলির জন্যে, ওনাকে মূলধারা পরিচিতি এনে দেয়। হেলেন কেলার ইনস্টিটিউট ফর দ ডেফ এন্ড দ ব্লাইন্ডে উনি রাঁধুনী হিসেবে কর্মরত ও ছিলেন। ব্যাপারী 2019 হিন্দু প্রাইজ ফর নন-ফিক্সন পুরস্কারে পুরস্কৃত হন ওনার জীবনী, ইতিবৃত্তে চন্ডাল জীবন এর ইংরেজী অনুবাদের জন্যে, ইন্টারোগেটিং মাই চন্ডাল লাইফ: অ্যন অটোবাওগ্রাফী অফ আ দলিত।
অনুবাদক: অরুণাভ সিনহা বাংলা কল্পনাপ্রসূত ও তথ্যভিত্তিক সাহিত্যের অনুবাদ ইংরেজি তে করেন। আজ অবধি ওনার ৫১টি অনুবাদ প্রকাশিত হয়েছে। শঙ্করের চৌরাঙ্গী ও অনিতা অগ্নিহোত্রীর সেভেনটিন এর অনুবাদের জন্যে সিনহা দুবার ক্রসওয়ার্ড অনুবাদ পুরস্কার প্রাপ্ত করেন। ২০১৩ সালে বুদ্ধদেব বসুর ওয়েন দ টাইম ইস রাইটের অনুবাদ করে সিনহা মিউস ইন্ডিয়া ট্রান্সলেশন পুরস্কার পান। ইন্ডিপেন্ডেন্ট ফরেন ফিক্সন পুরস্কার ও বেস্ট ট্রান্সলেটেড বুক পুরস্কার এর জন্যেও সিনহা মনোনিত হয়েছেন। সঙ্গীতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের যোগিনীর জন্যে উনি ইংলিশ পেন অনুবাদ অনুদান পেয়েছেন। ভারত ছাড়া ওনার অনুবাদ ইউ কে, আমেরিকা এবং বিভিন্ন ইউরোপীয় ও এশীয় দেশে প্রকাশিত হয়েছে। সিনহা ব্রিটিশ সেন্টর ফর লিটারেরী ট্রান্সলেশন, ইউ ই এ, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা ট্রান্সলেশন সেন্টর এবং যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মশালা পরিচালনা করেছেন। সিনহা অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সৃজনশীল লেখা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক।
দ প্যারাডাইস অফ ফুড: খালিদ জাভেদের (উর্দু থেকে অনুবাদ: বারান ফারুকী) (জগরনট)
জুরির মন্তব্য:
সারাংশ: উর্দুসাহিত্যের অতুলনীয় একটি গ্রন্থের প্রথম অনুবাদ। এই গল্পে পঞ্চাশ বছরের ব্যবধানের কেন্দ্রে এক একান্নবর্তী মধ্যবিত্ত মুসলিম পরিবার। ভারত, এবং ইসলামী সংষ্কৃতি যত কঠিন হতে থাকে, গল্পের বক্তা যার বাল্যকাল থেকে প্রবীণ হয়ে ওঠা এই গল্পটি তুলে ধরে, নিতান্তই নিজেকে স্থানহীন এক পরিস্থিতে খুঁজে পায়; ঘরেও বাইরেও। কিন্তু উপন্যাসের বিবরণে গল্পের প্রতি অন্যায় করা হবে। এই সাহসী অতল প্রয়াসে আছে আশঙ্কা ও রহস্য, এবং জাভেদ এক বিষাদ ও অদ্ভুত আবহ নির্মাণ করেছে, যেইটির মধ্যে দিয়ে সে মধ্যবিত্ত মুসলমানচিত্ত ভেদ করতে সক্ষম হয়েছে।
লেখক: খালিদ জাভেদ আজকের দিনে দিকপাল এক উর্দু সাহিত্যিক। তার রচনা তালিকায় আছে ১৫ কল্পনাগ্ৰন্থ ও তথ্যভিত্তিকগ্রন্থ, এবং তাকে কথা অ্যওয়ার্ড, উপেন্দ্রনাথ আশক অ্যওয়ার্ড এবং ইউ পি উর্দু একাডেমী অ্যওয়ার্ড দিয়ে ভূষিত করা হয়েছে। তিনি জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক।
অনুবাদক: বারান ফারুকী জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের অধ্যাপক। তিনি ফায়েজ আহমেদ ফায়েজ এর চয়নিত কিছু কবিতার ও অনুবাদ করেছেন দ কলর্স অফ মাই হার্ট গ্রন্থে।
বল্লী: শীলা টমি (অনুবাদ: জয়শ্ৰী কালাঠিল) (হারপার পেরেন্নিয়াল)
জুরির মন্তব্য: ভীষণ সুন্দর একটি সৃজনসৃষ্টি বল্লী, যেটা আমাদেরকে অন্য এক সময় ও জগতে নিয়ে চলে যায়। গল্পের জগৎ এমন এক সময়ের প্রতীক যখন প্রাকৃতিক জগৎ মনুষ্য জগতের একটি প্রসারিত খন্ড ছিল। গদ্যের গঠনবিন্যাস বিবিধ, চিঠি ও পৌরাণিক উক্তি দিয়ে পরিপূর্ণ এই বইটি পড়লে ভীষণ সন্তুষ্টিলাভ হবে।
সারাংশ: উত্তর কেরলের পশ্চিমঘাট পর্বতমালায় অবস্থিত এক জগৎ, যা কুয়াশায় ও রহস্যে বেষ্টিত, জঙ্গল ও লোককথায় পরিপূর্ণ, আদিবাসীদের সংস্কৃতি। পুরোনো নাম ছিল বয়ালনাড, ধানের জমি, কিন্তু তারপর থেকেই জানা হতে লাগলো ওয়ানাড নামে। প্রস্তুত সম্পদ আকর্ষিত করলো বহিরাগতদের, ব্যবসায়ী, উপনিবেশবাদী, অভিবাসী, এবং শেষে কাঠ ও পর্যটন শিল্প। বনের শোষণ থেকে শুরু হল বনজগতের মানুষদের শোষণ ও দাসত্ব। জঙ্গলের হ্রাস হলো, এবং আদিবাসী জীবনযাপন, ভাষাকথন ও সংস্কৃতির বিলুপ্তি হতে লাগলো। কিন্তু এই পরিবর্তনগুলি কেউ চুপচাপ সহ্য করছিল না, গর্জে উঠলো ওয়ানাড, হয়ে উঠলো নকশালবাড়ী আন্দোলনের কেন্দ্রক্ষেত্র।
১৯৭০ থেকে আজকের দিনে অবধি, বল্লীর গল্প চার প্রজন্ম বিস্তার করে আছে যারা এই জমিকে নিজের বাসস্থান বানিয়েছে। শিক্ষক দম্পতি থম্মিচন ও সারা ওয়ানাডে এসেছিলেন একসাথে থাকবেন বলে, তাদের কন্যা, সুসান এর ডায়রী বর্ণনা বলে দেয় যে সে এই জায়গা ছেড়ে চলে যাচ্ছে, তার মেয়ে টেস্সার জন্যে। গল্পের সাথে সাথে, বল্লী জায়গা ও তার বাসীদের গাঁথা উচ্চারণ করে, তাদের পরনির্ভরতা ও অপব্যবহার, নিপীড়ন ও প্রতিরোধের পাঁচালী নির্মাণ করে। এক কালীন জঙ্গলের মতনই, গল্পে মিশ্রিত আছে দুঃখ ও তৃপ্তি।
লেখক: শীলা টমি একজন ঔপন্যাসিক, ছোট গল্পকার ও চিত্রনাট্যকার। বল্লী তার প্রথম উপন্যাস, যেটির জন্যে তিনি চেরুকড অ্যওয়ার্ড ফর মালায়ালাম লিটারেচার পান ২০২০তে। ওনার লেখা ছোটগল্প সংগ্রহ, মেলকুইদাসেন্টে প্রলয়পুস্তকম প্রকাশিত হয় ২০১০ এ। শীলা বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন, যেমনকি ২০০৭ এ আবু ঢাবি আরাঙ্গু অ্যওয়ার্ড, ২০০৮ এ পুঝা ডট কম শর্ট স্টোরি অ্যওয়ার্ড, ২০১২ এ দোহা সংস্কৃতি অ্যওয়ার্ড ও দোহা সমন্বয়ম অ্যওয়ার্ড, এবং ২০১৪ এ কমলা সূরাইয়া নীরমাথালাম অ্যওয়ার্ড ইউ এ ই। ওয়ানাড জেলার মানন্থাভডি তে জন্ম, শীলা এখন কাতারের দোহা শহরে বসবাস করেন। তার দ্বিতীয় বই, নাদিওদু পেরু ছোদিক্কারুথু (নদীকে তার নাম জিজ্ঞেস করো না) এই বছরেই প্রকাশিত হবে।
অনুবাদক: জয়শ্রী কালাঠিল ২০২০ সালের JCB প্রাইজ ফর লিটারেচার ভাগ করে নিয়েছিলেন এস হারীশের সাথে, তাঁর বই মুস্তাচের অনুবাদের জন্য। কালাঠিল ক্রসওয়ার্ড বুক অ্যওয়ার্ড ফর ইন্ডিয়ান ল্যাঙ্গুয়েজ সম্মান পান ২০১৯ এ, এন প্রভাকরণ এর ডায়েরী মালায়ালি ম্যাডমান এর অনুবাদের জন্যে। সেইবইটি মাথ্রুভুমির বছর সেরা সম্মানের জন্যে দীর্ঘতালিকায় মনোনীত ও হয়েছিল। তিনি লিখেছেন শিশুসাহিত্য স্যাকক্লথমন, যেইটির অনুবাদ মালায়ালাম, তেলুগু ও তামিল ভাষায় করা হয়েছে। তার অন্যান্য অনুবাদগুলি হলো এন প্রভাকরণের ঠেউওর ক্রনিকল্স ও এস হারীশের অ্যডম।
টুম্ব অফ স্যান্ড: গীতাঞ্জলি শ্রী (অনুবাদ: ডেইজী রকঅয়েল) (পেঙ্গুইন হাউস ইন্ডিয়া)
জুরির মন্তব্য: আগ্রাসী ও অনিয়ন্ত্রিত এই বইটি আমাদের উপন্যাসধারার চিন্তাভাবনাকে প্রশ্ন করে। একাধিক উপন্যাসের রস এটিতে সম্মিলিত থাকায় মেলার আমেজ তুলে ধরে এই বইটি। গল্পটি কৌতুকপূর্ণ, কিন্তু তাও কোমলতা ও মানসিক অন্তর্দৃষ্টি দিয়ে পরিপূর্ণ।
সারাংশ: স্বামীর মৃত্যুর পর, উত্তর ভারতে একজন বৃদ্ধা গভীর হতাশায় ভোগেন এবং নতুন করে জীবন যাপন করতে শুরু করেন। প্রচলনের বিপক্ষে দাঁড়িয়ে একজন রূপান্তরকামী মানুষের সাথে কথা বলে উনি তার বোহেমিয়ান মেয়ে কে বিভ্রান্ত করে ফেলেন, যে ভাবতো যে মা মেয়ের মধ্যে মেয়েই বেশি আধুনিক। পরিবারের ভ্রূকুটিকুটির হওয়া সত্ত্বেও বৃদ্ধা পাকিস্তান সফরে যাওয়ার মন স্থির করেন, এবং দেশভাগের সময়ে মেয়েবেলায় পাওয়া মানসিক ক্ষতগুলির সম্মুখীন হতে চান। তার সাথে সাথেই একটি মা, একটি মেয়ে, একটি মহিলা ও একটি নারীবাদী হওয়াটার প্রতি ও ফিরে দেখেন। দূর্ঘটনার উত্তরে গুরুতর সুর না নিয়ে, শ্রীর ভাষা খেলার ছলের মতন, এবং তার শব্দচয়ন বইটিকে আকর্ষক, মজার ও নতুনত্বের ছাপ দেয়, একিসাথে জরুরী এবং সময়োপযোগী এক প্রতিবাদের রূপ নেয়, যা ধার্মিক, অন্তর্দেশীয় ও লৈঙ্গিক বেড়াজালের বিরূদ্ধে।
লেখক: তিনটি উপন্যাস ও বহু ছোটগল্পের রচয়িতা, গীতাঞ্জলি শ্রীর কাজ বিভিন্ন ভাষায় যথা ইংরেজি, ফরাসী, জার্মান, সার্বিও ও কোরিয়ানে অনুবাদিত হয়েছে। বিভিন্ন অ্যওয়ার্ড ও ফেলোশিপের জন্যে শ্রী নথিভূক্তি হয়েছেন।
অনুবাদক: ডেইজী রকওয়েল একজন শিল্পী, লেখিকা ও অনুবাদক এবং আমেরিকার নিউ ইংল্যান্ডের বাসিন্দা। সাহিত্য ও কলাজগতের উপর নিবন্ধ ছাড়া উনি লিখেছেন উপেন্দ্রনাথ আশক: আ ক্রিটিকাল বাওগ্রাফি, দ লিটিল বুক অফ টেরর এবং টেস্ট বলে একটি উপন্যাস। ওনার চিহ্নিত কিছু অনুবাদকার্য হলো উপেন্দ্রনাথ আশকের ফলিং ওয়ালস এবং ভীষম শহনির তমস।
সং অফ দ সয়েল: চুদেন কাবিমোর (নেপালি থেকে অনুবাদ: অজিত বড়াল) (রচনা বুক্স ইন্ডিয়া ও ফাইনপ্রিন্ট নেপাল)
জুরির মন্তব্য: ভয়ঙ্কর কোনো হিংসাত্মক ঘটনার ব্যাপারে লিখতে গেলে যে হিংসাকে পুনরায় তৈরি করতে হয়না। ও সং অফ দ সয়েল এইটির উজ্জ্বল উদাহরণ। আধ্যাত্মিক উন্নতি নিয়ে রচনার সঙ্গে বিবাদের গল্প, লেখক খুব দক্ষতার সঙ্গে বেঁধেছেন, যার ফলে উভয়েরই নতুন রুপ বেরিয়ে এসেছে। নিষ্ঠুর পরিস্থিতিকে পদ্য করে তুলেছে এই বই, সততা, কৌতুক ও নম্রতা দিয়ে।
সারাংশ: ভূকম্প ও বৃষ্টির দিনে এক যুবক খারাপ খবর পায়। জলের স্রোত রিপডেন, তার বাল্যবন্ধুকে তলিয়ে নিয়ে গেছে। জন্মগ্রাম মালবং এ আসলে ছোটবেলার স্মৃতি ধেয়ে আসে তার কাছে, একসাথে বড় হয়ে ওঠা, কঠোর শিক্ষক, খেলাধুলা ও মারপিট। সেইদিনের কোথাও মনে পড়ে যায় যবে তারা গ্রাম ছেড়ে লোলে তে পালায় রিপডেনের বাবার খবর নিতে, এবং সেখানে নাসিমের সঙ্গে সাক্ষাৎ – একজন যে নদীর ধারে থেকে জীবন ব্যতীত করে।
নাসিম তাদের তার ছোটবেলার গল্প বলে, তার ও অন্যান্য যুবক আন্দোলনকারীদের আখ্যান: পাইপ গান ও বারুদগোলা বানানো, পুলিশের সাথে মারপিট, জঙ্গল শিবিরে প্রশিক্ষণ ও রাত্রকালীন রেড থেকে বেঁচে থাকা। সে টাউন স্কোয়ারে এক মর্মান্তিক রক্তস্খলনের এবং এক শেষ, অমার্জনীয় বিশ্বাসঘাতকতার কথা বলে। হিমালয়ের কালিম্পঙে অবস্থিত এই বইটির গল্প, ১৯৮০ দশকের গোর্খা আন্দোলনের ঘটনাগুলিকে আরো সতেজ করে দেয় ও হিংসার মুখ নগ্ন করে তুলে ধরে। এবং তার সাথে সাথে এই প্রয়োজনীয় প্রশ্নটি করে: আন্দোলনের পর কে বিজয়ী? আর কার হয় পরাজয়?
লেখক: ভারতের কালিম্পঙে জন্ম ও বেড়ে ওঠা, চুদেন কাবিমো একজন লেখক যিনি নেপালী ভাষায় লেখেন। ওনার প্রথম বই, ছোটগল্প সমগ্র 1986, ২০১৭ সালে মণিপুরের আশারানী স্মৃতি পুরস্কার ও ২০১৮ সালে যুব সাহিত্য একাডেমি পুরস্কার পায়। ওনার উপন্যাস ফাৎসুঙ ইংরেজি, বাংলা ও হিন্দিতে অনুবাদিত হয়েছে এবং তিনটি দেশ, ভারত, নেপাল ও ইউ কে তে প্রকাশিত হয়েছে।
অনুবাদক: ইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১১র ইন্টারন্যশনাল রাইটিং প্রোগ্রামের প্রাক্তনী, অজিত বড়াল একজন লেখক, অনুবাদক, সম্পাদক, প্রকাশক ও নেপাল সাহিত্য উৎসব এর নির্দেশক। তিনি দ লেজি কনম্যান এন্ড আদর স্টোরিজ, ইন্টারভিউস এক্রোস টাইম এন্ড স্পেস এর লেখক, এবং বাই দ ওয়ে: ট্রাভেলজ থ্রু নেপালস কনফ্লিক্ট এর সহ-লেখক। নিউ নেপাল নিউ ভয়েসেস বলে ইংরেজি ভাষায় নেপালী গল্পসমগ্রের তিনি সহসম্পাদক, এবং ফার্স্ট লাভ নামাঙ্কিত স্মৃতিচারণাসমগ্রের তিনি সম্পাদক। এই বইটি তার প্রথম সম্পূর্ণ বইয়ের অনুবাদ।
জেসিবি লিটারেচার ফাউন্ডেশান সম্পর্কে
জেসিবি লিটারেচার ফাউন্ডেশন, ভারতীয় কোম্পানি আইনের ধারা 8 এর অধীনে নিবন্ধিত একটি অলাভজনক সংস্থা, পুরষ্কারটি চালানোর জন্য এককভাবে দায়বদ্ধ।
2018 সালে, জেসিবি ইন্ডিয়া জেসিবি লিটারেচার ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করে, যার উদ্দেশ্য হল ভারতে সাহিত্যের শিল্পকে উন্নীত করা, এবং যার প্রধান কাজ হল সাহিত্যের জন্য জেসিবি প্রাইজ পরিচালনা করা। আর্থমুভিং এবং নির্মাণ সরঞ্জামের একটি নেতৃস্থানীয় বিশ্বব্যাপী প্রস্তুতকারক, সংস্থাটি 1979 সাল থেকে ভারতে সক্রিয় রয়েছে। ভারতে একটি স্থায়ী সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার তৈরি করার জন্য জেসিবি-র আকাঙ্ক্ষা দেশের সামাজিক ও অর্থনৈতিক জীবনে এই উল্লেখযোগ্য এবং দীর্ঘস্থায়ী জড়িত থাকার উপর ভিত্তি করে।
জুরি সম্পর্কে
এএস পন্নিরসেলভান (সভাপতি) একজন ভারতীয় সাংবাদিক, সম্পাদক এবং সংবাদপত্রের বিভাগীয় লেখক । তিনি চেন্নাইয়ের সেন্টার ফর স্টাডি ইন পাবলিক স্ফিয়ার, রোজা মুথাইয়া রিসার্চ লাইব্রেরির প্রধান। এছাড়াও তিনি করুণানিধি: আ লাইফ এর লেখক, এম করুণানিধির তার নির্দিষ্ট জীবনী, এবং সাংবাদিক ফেলো, অনিশ্চিত জার্নিস দ্বারা উত্পাদিত প্রবন্ধের একটি সংকলনের সম্পাদক। 2022 সালে, তামিলনাড়ু সরকার তার সাহিত্যিক অবদানের জন্য তাকে জিইউ পোপ পুরষ্কারে ভূষিত করেছে। মিডিয়াতে তার বিস্তৃত কর্মজীবনে, তিনি সান নেটওয়ার্ক, আউটলুক ম্যাগাজিন, দ্য হিন্দু সহ বেশ কয়েকটি মর্যাদাপূর্ণ মিডিয়া হাউস এবং নেটওয়ার্কের সাথে কাজ করেছেন। তার পরবর্তী বই হচ্ছে তামিল আধুনিকতার পর্যায় সারণী: 1858 থেকে 1968 সাল পর্যন্ত।
অমিতাভ বাগচী চারটি উপন্যাসের রচয়িতা। প্রথম, অ্যাবাভ অ্যাভারেজ, একটি বেস্টসেলার ছিল। তার দ্বিতীয় উপন্যাস, দ্য হাউসহোল্ডার, সমালোচকদের প্রশংসার জন্য প্রকাশিত হয়েছিল, তৃতীয়, দিস প্লেস, রেমন্ড ক্রসওয়ার্ড বুক অ্যাওয়ার্ড 2014 এর জন্য শর্টলিস্টেড হয়েছিল এবং চতুর্থ, হাফ দ্য নাইট ইজ গোন, দক্ষিণ এশীয় সাহিত্যের জন্য 2019 ডিএসসি পুরস্কার জিতেছিল এবং 2018 সালের জেসিবি পুরস্কারের জন্য সাহিত্যের জন্য সংক্ষিপ্ত তালিকাভুক্ত হয়েছিল। তিনি কম্পিউটার বিজ্ঞানে বিশেষজ্ঞ গবেষক এবং অধ্যাপক হিসাবে তার বিস্তৃত কর্মজীবন নিয়ে বেশ কয়েকটি গবেষণাপত্র লিখেছেন এবং প্রকাশ করেছেন।
ডঃ জে দেবিকা একজন ইতিহাসবিদ, নারীবাদী, সামাজিক সমালোচক এবং শিক্ষাবিদ। বর্তমানে তিনি সেন্টার ফর ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজে গবেষণা ও শিক্ষকতা করছেন। তিনি কেরালার লিঙ্গ, রাজনীতি, সামাজিক সংস্কার এবং উন্নয়নের উপর বেশ কয়েকটি বই এবং নিবন্ধ লিখেছেন, যেমন কাফিলা, ইকোনমিক অ্যান্ড পলিটিক্যাল উইকলি এবং দ্য ওয়্যার। তিনি মালয়ালম এবং ইংরেজির মধ্যে কথাসাহিত্য এবং নন-ফিকশন বই উভয়ই অনুবাদ করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে নলিনী জামিলার আত্মজীবনীর অনুবাদ এবং কেআর মীরা এবং সারাহ জোসেফের ছোট গল্প।
জেনিস প্যারিয়াত দ্য নাইন-চেম্বারড হার্ট, বোটস অন ল্যান্ড: এ কালেকশান অফ শর্ট স্টোরিজ অ্যান্ড সিহর্ষ: এ নোভেল বইগুলির লেখক। তিনি সাহিত্য অ্যাকাডেমি থেকে ইয়ং রাইটার পুরস্কার এবং 2013 সালে কথাসাহিত্যের জন্য ক্রসওয়ার্ড বুক অ্যাওয়ার্ড লাভ করেন। 2014 সালে, তিনি যুক্তরাজ্যের কেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের চার্লস ওয়ালেস ক্রিয়েটিভ রাইটিং ফেলো এবং 2019 সালে দক্ষিণ কোরিয়ার টিওআই রেসিডেন্সিতে আবাসিকে লেখক ছিলেন। জেনিস অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্রিয়েটিভ রাইটিং এবং আর্ট হিস্ট্রিও পড়ান। তাঁর উপন্যাস এভ্রিথিং দ্য লাইট টাচেজ আসছে।
রাখী বলরাম নিউ ইয়র্কের স্টেট ইউনিভার্সিটি অফ আলবানি বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল আর্ট অ্যান্ড আর্ট হিস্ট্রির সহকারী অধ্যাপক, যেখানে তিনি আধুনিক ও সমসাময়িক শিল্পে বিশেষজ্ঞ। তিনি কাউন্টার প্র্যাকটিস:সাইকোঅ্যানালিসিস, পলিটিক্স অ্যান্ড দ্য আর্ট অফ ফ্রেঞ্চ ফেমিনিজিম এবং 20থ-সেঞ্চুরি ইন্ডিয়ান আর্ট: মডার্ন, পোস্ট-ইন্ডিপেন্ডেন্স, কন্টেম্পরারি বইয়ের লেখক। তাঁর কিউরেটরের কাজের মধ্যে রয়েছে ভঙ্গুরতা, সমসাময়িক ভারতীয় শিল্পের একটি প্রদর্শনী। তার গবেষণাটি বার্লিনের আর্ট হিস্টোরিজ ফেলোশিপ, আইসিআই বার্লিন ইনস্টিটিউট অফ কালচারাল ইনকোয়ারি এবং টাটা এসপিইএআর অনুদান, অন্যদের মধ্যে সমর্থন করেছে। বলরাম কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফরাসি সাহিত্যে ডাবল ডক্টরেট এবং কোর্টঅল্ড ইনস্টিটিউট অফ আর্ট থেকে শিল্পকলার ইতিহাস অর্জন করেছেন।