৫৬ দিন, অরুণাচলের ভারত-চিন সীমান্তে নিখোঁজ দুই যুবকের সন্ধান মেলেনি এখনও, উৎকণ্ঠায় পরিবারের সদস্যরা

ইটানগর, ১৭ অক্টোবর (হি.স.) : অরুণাচল প্রদেশের ভারত-চিন সীমান্ত থেকে নিখোঁজ মিশমি জনগোষ্ঠীয় দুই যুবকের সন্ধান এখনও চলছে। এরই মধ্যে নিখোঁজ দুজনের পরিবারের উৎকণ্ঠিত সদস্যরা তাদের ছেলেকে অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করতে সরকারের কাছে সাহায্যের আর্জি জানিয়েছেন।

এদিকে, এ ব্যাপারে আনজাও জেলান্তৰ্গত হাওয়াইয়ের পুলিশ সুপার রাইক কামসিকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, ওই দুই যুবক বাতেইলুম টিক্রো এবং বেয়িংসো মানিউ প্রকৃত নিয়ন্ত্রণ রেখা (এলএসি) অতিক্রম করেছে কিনা তা এখনও নিশ্চিত নয়। পুলিশ সুপার বলেন, ১৯ আগস্ট থেকে তারা নিখোঁজ হলেও তাদের আত্মীয়রা ৯ অক্টোবর পর্যন্ত তাদের নিখোঁজ হওয়ার খবর জানায়নি। নিখোঁজ উভয় যুবকের পরিবারের সদস্যরা পুলিশে অভিযোগ দায়ের করে জানান, দুজনে ১৯ আগস্ট ঔষধি গাছের সন্ধানে ছাগলগাম এলাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছিল।

হাওয়াইয়ের পুলিশ সুপার রাইক কামসি বলেন, ‘ছাগলগাম একটি বিশাল এলাকা যেখানে কোনও রাস্তার সঙ্গে যোগাযোগ নেই, নেই কোনও মোবাইল নেটওয়ার্কও। তবে আমরা পরিস্থিতি সম্পর্কে সেনাবাহিনীকে জানিয়েছি। সেনা তাদের সন্ধানে তালাশি অভিযান অব্যাত রেখেছে।’ বলেন কামসি।

তিনি বলেন, ‘পুলিশ দুটি পৃথক মামলা দায়ের করেছে। আমরা তাদের পরিবার এবং আত্মীয়দের সাথে কথা বলেছিলাম। তারা বলেছেন, দু’জনই ১৯ আগস্ট বাসা থেকে বেরিয়েছিল। কেউ একজন তাদের ২৪ আগস্ট শেষবার দেখেছিল। কে, কোথায় তাদের শেষ দেখেছিল তা নিশ্চিত করে কেউ বলতে পারছেন না। বলা হচ্ছে এটা ছিল ছাগলগাম এলাকা।’ বলেন পুলিশ সুপার।

আনজাও জেলার গোইলিয়াং শহরের বাসিন্দা নিখোঁজ দুই যুবক বাতেইলুম টিক্রো এবং বেয়িংসো মানিউয়ের পরিবারের সদস্যরা অক্ষত অবস্থায় তাদের উদ্ধার করতে কেন্দ্র এবং রাজ্য সরকারের সাহায্য চেয়েছেন। নিখোঁজ যুবকদের এক আত্মীয় দিশান টিক্রো ভিডিওর মাধ্যমে সরকারের কাছে আবেদন জানিয়ে বলেন, ‘ওষধি গাছের সন্ধানে জঙ্গলের গভীরে গিয়েছিল আমাদের দুই ভাই। ৬০ থেকে ৭০ দিন (মূলত ৫৬ দিন) ধরে নিখোঁজ। আজও তারা বাসায় ফেরেনি। আমি তাদের খুঁজে বের করতে সাহায্য করার জন্য কেন্দ্র ও অরুণাচল সরকার এবং সেই সঙ্গে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে অনুরোধ করছি।’ ‘ভিডিওটি বানানোর উদ্দেশ্য হল উভয় সরকারকে তাদের খুঁজে উদ্ধার করতে অনুরোধ করা,’ যোগ করেন।

একই বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে জনৈক সামাজিক কর্মী তাবা টাকু জানান, চিনের সাথে একটি যথাযথ আন্তর্জাতিক সীমানা নির্ধারণের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারকে অনুরোধ করেছেন তাঁরা। কারণ অরুণাচলের সাথে ১,১২৬ কিলোমিটার ভারত-চিন সীমান্ত ভাগ করেছে যা কিছু জায়গায় খোলা। ওই সব জায়গাকে অবশ্য প্রাকৃতিক তুষারপাত সুরক্ষা দিচ্ছে। তিনি নাকি কেন্দ্রীয় সরকারকে সীমান্ত শহর এবং গ্রামগুলির বিকাশের জন্যও আহ্বান জানিয়েছেন যাতে নাগরিকরা সীমান্ত গ্রাম থেকে শহর বা অন্যত্র যেতে বাধ্য না হয়।

তিনি বলেন, “অনেক ক্ষেত্রে আমাদের যুবকরা আন্তর্জাতিক সীমানার কাছে ভেষজ এবং শাকসবজির সন্ধানে গভীর জঙ্গলে যায়। জমির সীমানা নির্ধারণ করা না থাকায় এবং সেখানে কোনও সীমানা প্রাচীর বা রেলিং না থাকায় অনিচ্ছাকৃতভাবে চিনা ভূখণ্ডে প্রবেশ করে। এর আগেও বেশ কয়েকজন যুবককে চিনের পিপলস লিবারেশন আর্মি অপহরণ করেছিল। পরবর্তীতে ভারতীয় সেনার চাপে পরে তারা আমাদের অপহৃত যুবকদের নির্যাতনের পর ছেড়ে দেয়।

তাই ভারতীয় সেনাবাহিনীকে যথাযথ সীমানা নির্ধারণ করা ছাড়াও নিয়মিত টহলের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন সামাজিক কর্মী তাবা টাকু।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *