নিজস্ব প্রতিনিধি, বক্সনগর, ৬ অক্টোবর৷৷ চোরের সর্দার সহ দুই বাংলাদেশি চোরকে গ্রামবাসীর সহযোগিতায় গ্রেফতার করল কলমচৌড়া থানার পুলিশ৷ সম্প্রতি গ্রাম থেকে শহর রাজ্যের অধিকাংশ স্থানে চুরির ঘটনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে৷ চুরির ঘটনা পাল্লা দিয়ে বাড়ছে কলমচৌড়া থানাধীন বক্সনগরের বিভিন্ন এলাকায়৷ পুলিশ এবং এলাকার জনগনের পাহারাকে ফাঁকি দিয়ে প্রতিদিন কোন না কোন স্থানে চুরির ঘটনা ঘটছে৷ বুধবার ভোর রাত আনুমানিক ৪টা নাগাদ চোরের সর্দার সহ দুই বাংলাদেশীকে আটক করে কলমচৌড়া থানার পুলিশ৷ ঘটনা কলমচৌড়া থানাধীন কলসীমুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রতনদোলা এলাকায়৷ জানা যায়, কলসীমুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের রতনদোলা এলাকার স্বপন সাহা পেশায় একজন ফল ব্যবসায়ী ও ফেরি বিক্রেতা৷ তিনি বুধবার ভোররাত আনুমানিক ৪টা টায় ফল মজুত রাখা ভাড়া করা বিল্ডিংএ ফল বের করতে গিয়ে লক্ষ্য করেন ঘরের দরজা ভাঙ্গা৷ ঘরের বাইরে রাস্তার মধ্যে গ্যাসের চুল্লি, সিলভারের বড় গামলা, কড়াই প্রভৃতি দেখতে পেয়ে মালিক স্বপন দাসের সন্দেহ হয় কোন চুরির ঘটনা ঘটেছে৷ তখন তিনি ঘরে প্রবেশ করতেই মোহাম্মদ সোহেল এবং হেলাল মিয়া নামে দুই চোর স্বপন দাসকে হামলা করে৷ চোর এবং মালিক স্বপন দাস এর মধ্যে অনেকক্ষণ ধস্তাধস্তি চলে৷ স্বপন দাস চিৎকার করতে চাইলে দুই চোর নাকে মুখে চাপা দিয়ে টানা হেচরা করে ঘর থেকে বের করে পাশে থাকা শৌচালয়ের গর্তে ফেলে দেওয়ার চেষ্টা করে৷ এরইমধ্যে স্বপন দাস চিৎকার করতে থাকলে স্বপন দাসকে ফেলে দুজন চোর পালিয়ে যায়৷ তৎক্ষণাৎ এই ঘটনার খবর পেয়ে গ্রামবাসীরা ছুটে আসে স্বপন দাসের ভাড়াটিয়া বাড়িতে৷ তখন স্বপন দাসের কথা অনুযায়ী গ্রামবাসীরা চোর আটকের উদ্দেশ্যে ধাওয়া করেন৷ খবর দেওয়া হয় কলমচৌড়া থানার পুলিশকে৷ পুলিশ খবর পেয়ে তৎক্ষণাৎ ছুটে যায় ঘটনাস্থলে৷ গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় পুলিশ মোহাম্মদ সোহেল এবং হেলাল মিয়াকে স্থানীয় দিলীপ দাসের বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে৷ এই ঘটনায় ফল ব্যবসায়ী স্বপন সাহা কলমচৌড়া থানায় স্থানীয় চোরের সর্দার দিলীপ দাস সহ দুই বাংলাদেশি চোরের বিরুদ্ধে ঘটনার বিবরণ জানিয়ে একটি মামলা রুজু করেন এবং এলাকার শতাধিক মহিলা গ্রেপ্তার হওয়া তিন চোরের বিরুদ্ধে উপযুক্ত বিচারের আশায় ওসি বিষ্ণুপুদ ভৌমিকের নিকট এক প্রতিনিধিমূলক ডেপুটেশন প্রদান করেন৷ওসি বিষ্ণুপদ ভৌমিক মহিলাদের সমস্ত দাবি-দাওয়া মেনে উপযুক্ত বিচার হবে বলে আশ্বাস দেন৷এই দুই চোরের জবানবন্দিতে জানা যায়, মুহাম্মদ সোহেলের(২০) পিতার নাম জাহাঙ্গীর আহমেদ৷বাড়ি বাংলাদেশ কুমিল্লা জেলার বুড়িচং থানাধীন দক্ষিণ গ্রাম এলাকায়৷ অপর চোর হেলাল মিয়া (২৩) পিতার নাম কবির আহমেদ৷ বাড়ি বাংলাদেশ কুমিল্লা জেলার শাসনকাচা বৈদ্য পাড়া এলাকায়৷ এই বাংলাদেশি দুই চোর পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদে বলে, আমাদেরকে বাংলাদেশ থেকে এনেছে দিলীপ দাস৷ তার তত্ত্বাবধানে আমরা এখানে কাজ করি৷ তখন পুলিশ চোরের দলের সর্দার দিলীপ দাসকেও গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে আসে৷ তবে তাদের কাছ থেকে কিছু পাইপসহ সেনেটারী সামগ্রী পাওয়া গেছে৷ জানা যায় দুদিন আগে মোতালেব হোসেন নামে এক সেনিটারি ব্যবসায়ীর দোকানে চুরি হয়৷ পুলিশ অনুমান করছে যে, মোতালেবের দোকানের চুরি যাওয়া সরঞ্জাম হতে পারে৷ এ বিষয়ে পুলিশ তদন্ত করছে ৷ বুধবার রাতেই স্বপন সাহা ছাড়াও আরো তিনটি জায়গায় চোরের দল হানাদারি চালায়৷ কলসিমুড়া গ্রাম পঞ্চায়েতের সুনিল দাসের বাড়িতে ঘরের দরজা ভেঙ্গে গৃহস্থালির কিছু সামগ্রী নিয়ে যায়৷ তারপর বক্সনগর বাজার ব্যবসায়ী দুলাল বণিকের দোকানের শাটার ভাঙ্গার চেষ্টা করে৷শাটার ভাঙতে না পেরে চলে যায় বক্সনগর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে৷ বক্সনগর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের মূল গেট ভেঙ্গে এবং শ্রেণী কক্ষের দরজা ভেঙ্গে সিলিং পাখা সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রী নিয়ে যায়৷ কিছুদিন পূর্বে বক্সনগর এলাকার বিভিন্ন গ্রামে গরু চুরির হিড়িক দেখা যায়৷ এসমস্ত চুরির ঘটনায় এলাকায় সর্বস্তরে চাঞ্চল্য বিরাজ করছে৷ তবে বুধবারের চুরির ঘটনায় সর্দার সহ তিন চোর গ্রেফতারের বিষয়ে কলমচৌড়া থানার ওসি বিষ্ণুপদ ভৌমিক বলেন, চুরির ঘটনা শুধু বক্সনগর নয়, ইদানিং রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে৷বক্সনগরেও ব্যতিক্রম নয়৷এ ব্যাপারে বিভিন্ন গ্রাম পঞ্চায়েতের সহযোগিতা নিয়ে এলাকার সমস্ত দাগী চোরদের তালিকা তৈরি করে প্রয়াস সহ কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো৷ এলাকার মানুষের সহযোগিতা পেলে আগামী দিনে আরো বড় ধরনের সাফল্য অর্জন করতে পারবে বলে ওসি বিষ্ণুপদ ভৌমিক অভিমত ব্যক্ত করেন৷
2022-10-06