দুর্গাপুর, ৩০ সেপ্টেম্বর (হি. স.) আকাশে পেঁজা তুলোর মত মেঘ। তার সঙ্গে কাশফুল হিমেল হাওয়া, বাতাসে শিউলি ফুলের ম ম গন্ধ জানান দেয় মা দুর্গা আসছেন। আকাশে পেঁজা তুলোর মত মেঘ, কাশফুল ফুটলেও দেবীপক্ষের সূচনায় এখনও দেখা নেই শিউলি ফুলের। আর তাতেই মানুষের মধ্যে কৌতুহল জেগেছে। এমনকি কৌতুহলি খোদ দুর্গাপুর -বর্ধমান লোকসভার সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়ার। তবে আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকে দায়ী করছে বিজ্ঞানীমহল।
শিউলি ফুল হচ্ছে নিক্টান্থেস প্রজাতির একটি ফুল। মুলত দক্ষিণ এশিয়ার দক্ষিণ-পূর্ব থাইল্যান্ড থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশ, ভারত, উত্তরে নেপাল, ও পূর্বে পাকিস্তান পর্যন্ত এলাকা জুড়ে দেখতে পাওয়া যায়। এটি শেফালি নামেও পরিচিত। এই ফুল ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য ফুল ও থাইল্যান্ডের কাঞ্চনাবুরি প্রদেশের জাতীয় ফুল।
শিউলি গাছ নরম ধূসর ছাল বা বাকল বিশিষ্ট হয় এবং ১০ মিটারের মত লম্বা হয়। গাছের পাতা গুলো ৬-৭ সেন্টিমিটার লম্বা ও সমান্তরাল প্রান্তের বিপরীতমুখী থাকে। সুগন্ধি জাতীয় এই ফুলে রয়েছে পাঁচ থেকে সাতটি সাদা বৃত্তি ও মাঝে লালচে-কমলা টিউবের মত বৃন্ত। এর ফল চ্যাপ্টা ও বাদামী হৃদপিণ্ডাকৃতির। ফলের ব্যাস ২ সেন্টিমিটার এবং এটি দুই ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগে একটি করে বীজ থাকে। এই ফুল শরৎকালে ফোটে। এর ফুলগুলি রাতে ফোটে এবং সকালে ঝরে যায়। শরৎ ও হেমন্ত কালের শিশির ভেজা সকালে ঝরে থাকা শিউলি অসম্ভব সুন্দর দৃশ্য তৈরি করে। বাঙালীর জীবনের সঙ্গে শিউলি ফুলের এক আলাদাই সম্পর্ক। শিউলি ফুল ফোটার সাথে সাথে বাঙালীরাও মেতে ওঠে উৎসবের আনন্দে। শিউলির আগমন, তার সুগন্ধই বলে দেয় খুশির সময় আগত। শিউলি গাছ ও পাতার মধ্যে আছে বহু ঔষধি গুণাগুণ, পাশাপাশি ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ রয়েছে। পুজো-পাঠের জন্য পড়ে থাকা শিউলি ফুলগুলিকে ব্যবহার করা যায়। পুজোর জন্য শিউলি গাছ থেকে ফুল তোলা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এই কারণেই একে রাতের রানী বলা হয়। শিউলি গাছে রাত্রিবেলায় প্রচুর ফুল ফোটে। দিনের বেলা এই গাছ থেকে যতই ফুল তোলা হোক না কেন, পরের দিন আবার গাছটিতে প্রচুর পরিমাণে ফুল দেখা যায়। শিউলির আরেক নাম পারিজাত। হিন্দু পৌরাণিক কাহিনীতে অনেক বার এসেছে শিউলি ফুল বা পারিজাত এর কথা।
দুর্গাপুজোর সঙ্গে শিউলি ফুলের সংযোগ রয়েছে। শিউলি ফুল প্রত্যেক মানুষের কাছে খুব প্রিয়। বিশেষত, বাঙালির কাছে তো খুবই প্রিয়। কারণ, এই ফুল ফুটলে বোঝা যায় শরৎ এসেছে। আর শরৎকাল আসা মানেই দুর্গা পুজো আসা। ছোটো আকারের কমলা সাদার মিশ্রণে এই ফুলের মিষ্টি গন্ধে চারিদিক ম ম করে ওঠে। আর তার সঙ্গে দুর্গা পুজোর আনন্দে প্রত্যেক বাঙালির মন নেচে ওঠে। মহালয়ায় দেবীপক্ষের আগমনে শিউলি ফুলের গন্ধ গোটা পরিবেশকে পুজোর আবহ তৈরী করে। গাছের নীচে পড়ে থাকা শিউলি ফুল যেন সাদা কার্পেট বিছিয়ে রাখা মনে হয়। তবে চলতি বছর শরৎকাল পড়েছে। দেবীপক্ষের সূচনাও হয়েছে। নদীর চরে কাশফুলের দোলা, আকাশে পেঁজা তুলোর মত মেঘ দেখা দিলেও, শিউলি ফুল তেমন ভাবে এখনও ফোটেনি। বাতাসে শিউলি ফুলের গন্ধও ভেসে আসেনি। আর তাতেই কৌতুহল জেগেছে মানুষের মধ্যে।
কৌতুহলি বর্ধমান দুর্গাপুরের সাংসদ সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়া জানান,” দিল্লি ও দুর্গাপুরের বাসভবনে শিউলি গাছ রয়েছে। শিউলি ফুলের সঙ্গে দূর্গাপুজোর সংযোগ থাকে। দেবীপক্ষের সূচনা হয়েছে। পুজো শুরু। অথচ শিউলিফুলের দেখা নেই। স্বাভাবিকভাবেই মনে প্রশ্ন জাগছে।” কি বলছেন বিজ্ঞনীমহল।
বরিষ্ঠ পরিবেশ বিজ্ঞানী ডঃ আশীষ হাজরা বলেন,” বর্ষাকালে তেমন বৃষ্টি হয়নি। শরৎকালে এখনও ভ্যাপসা গরম। মাঝে মধ্যে বৃষ্টি। শিশির পড়েছে না। আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনার জন্য শিউলি ফুল এখনও ফোটেনি।”
বুদবুদ কেন্দ্রীয় কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রের বিজ্ঞানী ডঃ সুব্রত সরকার জানান,” শিউলি ফুল মুলত অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে ফুটতে শুরু করে। হালকা শীতের আমেজ থাকে।পুজো এবছর অনেকটাই এগিয়ে এসেছে। এখনও কুয়াশা পড়ে না। শিশির পড়া শুরু হয়নি। তাপমাত্রা রয়েছে, সঙ্গে বাতাসে আদ্রর্তা রয়েছে। এমন আবহওয়ার কারনে এখনও তেমনভাবে শিউলি ফুল ফোটেনি।”