করিমগঞ্জ (অসম), ২০ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : সারা ভারত কৃষক সভার চতুর্দশ করিমগঞ্জ জেলা আঞ্চলিক সম্মেলন সুপ্রাকান্দির স্বরূপানন্দ ইনস্টিটিউটে অনুষ্ঠিত হয়েছে। জেলার বিভিন্ন অঞ্চল থেকে শতাধিক কৃষক প্রতিনিধি এই চতুর্দশ আঞ্চলিক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করেন। সম্মেলনের নির্ধারিত কৰ্মসূচি অনুযায়ী আজ মঙ্গলবার সকালে সংগঠনের রক্তপতাকা উত্তোলন করেন আঞ্চলিক সম্পাদক কালিকুমার দে। শহিদ বেদিতে মাল্যদান করেন সংগঠনের উপ-সভাপতি হুমায়ুন কবির এবং অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি সন্তোষ দত্ত।
রাজেন্দ্র দেব, হুমায়ুন কবির, কালিপদ নাথকে নিয়ে গঠিত সভাপতি মণ্ডলি সম্মেলনের কাজ পরিচালনা করেন। সম্মেলনের শুরুতেই শোক প্রস্তাব পাঠ করেন কালিপদ নাথ। বিগত সম্মেলনের পরবর্তী সময়ের শহিদ কৃষকদের উদ্দেশ্যে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
উদ্বোধনী ভাষণে কালিকুমার দে বলেন, বিজেপি সরকারের আমলে দেশের কৃষকদের ভয়ানক সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। কৃষিক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়া অঞ্চলের কৃষকদের অস্তিত্ব আজ গভীর সঙ্কটের মুখে দাঁড়িয়ে। কৃষক নেতা কালিকুমার আরও বলেন, করিমগঞ্জ জেলার সিংহভাগ অঞ্চলে জলসেচের ব্যবস্থা নেই, বিদ্যুৎ নেই, সস্তায় সার, বীজ, কীটনাশক পাওয়ার ব্যবস্থা নেই। সরকারি কৃষি, জলসেচ, পশুপালন বিভাগ কৃষকদের প্রয়োজনে আসছে না। এবারের বন্যায় প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা ক্ষতিপূরণ পাননি। ক্ষতিপূরণ নিয়ে দলবাজি ও দুর্নীতি সংগঠিত হওয়ার ও অভিযোগ তুলেন কৃষক নেতা। দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, কৃষক আইন প্রত্যাহারের সঙ্গে স্থানীয় সমস্যাগুলির বিরুদ্ধে কৃষকদের রাস্তায় নেমে আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
অভ্যর্থনা সমিতির পক্ষে স্বাগত ভাষণে সন্তোষ দত্ত সুপ্রাকান্দি অঞ্চলের কৃষক সহ এই অঞ্চলের পানীয় জল, রাস্তাঘাট ইত্যাদি সমস্যার কথা তুলে ধরেন। আঞ্চলিক কমিটির পক্ষে সম্পাদকীয় প্রতিবেদন পেশ করেন কালিপদ নাথ। এদিনের আঞ্চলিক সম্মেলনে সিআইটিইউ, মহিলা সমিতি, এসএফআই-এর পক্ষে সম্মেলনকে সম্বোধন করেন যথাক্রমে অমল দে, মীরা চক্রবর্তী, সোমা সূত্রধর।
উপস্থিত প্রতিনিধিদের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনের উপর আলোচনার পর তা সর্বসসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। কৃষক নেতা নির্মল দে তাঁর ভাষণে বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাধীনতার ৭৫ বছর উপলক্ষ্যে ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’-এর নামে দেশের বৃহৎ বিত্তশালী শ্রেণিকে স্বাধীনতার অমৃত পান করাচ্ছেন। আর গরিব মেহনতি মানুষরা বিষ পান করছেন। কেন্দ্র থেকে পঞ্চায়েত, সব সরকারগুলি সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী অবস্থান গ্রহণ করছে বলেও এদিনের আঞ্চলিক সম্মেলনে অভিযোগ তুলেন কৃষক নেতা নির্মল দে। সার্বিক পরিস্থিতিতে গ্রামের সব মানুষকে কৃষক সভার সদস্য করতে হবে। সাধারণ মানুষের দাবিদাওয়ার ভিত্তিতে চলতি মাসের ২৪ তারিখ জেলা কেন্দ্রে মিছিলে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানান নির্মল দে।
এদিনের চতুর্দশ জেলা আঞ্চলিক সম্মেলনে বিগত বছরগুলির আয়-ব্যয়ের হিসাব পেশ করেন কালিপদ নাথ। সম্মেলন থেকে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, এনরেগায় দুর্নীতি, রাস্তাঘাট সংস্কার, নদীভাঙন, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, পানীয়জল ও স্বাস্থ্য পরিষেবা সহ বেশ কিছু প্রস্তাব গৃহীত হয়। সম্মেলনে রাজেন্দ্র দেবকে সভাপতি, কালিপদ রায়কে সম্পাদক, কালিপদ নাথকে কোষাধ্যক্ষ করে ১৯ জনের নতুন একটি জেলা কমিটি নির্বাচিত করা হয়। সম্মেলন থেকে ১৫-১৬ অক্টোবর আনিপুরে জেলা সম্মেলনের জন্য ৩০ জন প্রতিনিধি নির্বাচন করা হয়। সবশেষে সভাপতি মণ্ডলির পক্ষে হুমায়ুন কবিরের ধন্যবাদ সূচক ভাষণের মাধ্যমে সম্মেলনের পরিসমাপ্তি ঘটে।
আগামী ১৫ অক্টোবর আনিপুরে অনুষ্ঠেয় জেলা কৃষক সম্মেলনের কৃষক জমায়েতে যোগ দেওয়ার জন্য উপস্থিত কৃষক প্রতিনিধি সহ অঞ্চলের কৃষকদের আহ্বান জানান হুমায়ূন কবীর।