Sheikh Hasina:কী পেয়েছি আর কী দিয়েছি সে  সম্পর্ক  ভারতের  সঙ্গে নয় : শেখ হাসিনা

ঢাকা, ১৪ সেপ্টেম্বর (হি.স.) : ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের শুধু চাওয়া পাওয়ার সম্পর্ক নয়। কী পেয়েছি আর কী দিয়েছি সে সম্পর্ক ভারতের সঙ্গে নয়। ভারত থেকে শূন্য হাতে ফেরেননি জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারত থেকে শূন্য হাতে নয়, বরং বাংলাদেশ অনেক কিছু পেয়েছে। ভারত আমাদের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশি রাষ্ট্র। ১৯৭১ সাল থেকে সব সময়ই তারা আমাদের পাশে আছে।

বুধবার বিকেল ৪টার কিছু পর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ভারত সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য দেওয়ার পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সরকার প্রধান একথা বলেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘৭১ সালে সব দলমত নির্বিশেষে এক হয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে  সমর্থন  দিয়েছিল। আবার যখন স্থল সীমানা চুক্তি বাস্তবায়ন করি। ছিটমহল বিনিময়কালে ভারতের পার্লামেন্টে যখন আইনটা পাস হয় তখন কিন্তু সব দল এক হয়ে স্থল সীমানা  চুক্তি আইনটা তারা পাস করেছিল। সেদিক থেকে বিবেচনা করতে পারেন বন্ধুপ্রতীম দেশ তাদের সঙ্গে অবশ্যই একটা সুসম্পর্ক থাকবে। হ্যা, এটা বাস্তব। একটা দেশের সঙ্গে নানা সমস্যা থাকতে পারে।আমি সব সময় মনে করি সমস্যাগুলো আলাপ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা যায়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সাশ্রয়ী মূল্যে জ্বালানি তেল আমদানি করতে ভারতের ইন্ডিয়ান অয়েল  কর্পোরেশন লিমিটেডকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এর ফলে তুলনামূলক স্বল্প সময়ে ও সাশ্রয়ী মূল্যে ডিজেল, অকটেন, ফার্নেস তেল, এভিয়েশন ফুয়েল আমদানি রা সম্ভব হবে। আইওসিএলের অন্তর্ভুক্তির ফলে তুলনামূলক স্বল্প সময়ে ও সাশ্রয়ী মূল্যে ডিজেল, অকটেন, ফার্নেস তেল,  এভিয়েশন ফুয়েল আমদানি করা সম্ভব হবে। এতে দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত সহ বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয় হবে। প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে উত্তরাঞ্চলে জ্বালানী তেল পৌঁছাতে সমস্যা হয়। অনেক সময় ডিজেলের অভাবে কৃষকদের সেচ পাম্প চালাতে সমস্যা হয়। এচুক্তির ফলে সে-সমস্যার সমাধান হয়েছে। এলএনজি নিয়েও আলোচনা হয়েছে। ভারত যে এলএনজি নিয়ে আসছে সেখান থেকে যাতে আমরা পাই। খুলনার ওই অংশটা যাতে আমরা আনতে পারি। ওই দিকে যাতে গ্যাসের সমস্যা.. এরকমভাবে যদি চিন্তা করেন, অনেক কিছু পেয়েছি।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘কুশিয়ারা নদীর পানিবণ্টনে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর, যার মাধ্যমে ১৫৩ কিউসেক পানি বন্টন সিদ্ধান্ত। ভুটানের সঙ্গে রেল যোগাযোগ ও অন্যান্য আন্তসীমান্ত রেলসংযোগে বিধিনিষেধ প্রত্যাহার করা হবে।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভারতীয় নেতৃত্বের শীর্ষ পর্যায়ে, সংবাদমাধ্যমে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে আমি বাংলাদেশের জন্য যে প্রীতি ও সৌহার্দ্য লক্ষ্য করেছি, তা সত্যিই অসাধারণ। এই প্রীতির সম্পর্ককে সুসংহত করে আমরা আরও এগিয়ে যেতে চাই। এই সফরে সহযোগিতার যেসব ক্ষেত্র চিহ্নিত হয়েছে এবং বিদ্যমান সমস্যা সমাধানে যেসব সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা বাস্তবায়ন করলে উভয় দেশের জনগণ উপকৃত হবে বলে আমি মনে করি।’

ভারত সফরের সময় রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সম্পদ নষ্ট করছে। নিজেদের মধ্যে অস্ত্রবাজি ও সংঘাত করছে। পরিবেশকে তারা আরও নষ্ট করছে। ভারতকে আমরা এ বিষয়টি বলেছি। ভারত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ইতিবাচক। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে মিয়ানমারকে নিয়ে। এরা দ্বন্দ্ব ও সংঘাতে লিপ্ত থাকে। ভারত মনে করে এটার সমাধান হওয়া উচিত। তবে আমরা কোনো যুদ্ধ চাই না, শান্তি চাই।

বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ভারত সব সময় আন্তরিকতার সঙ্গে দেখে বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই সফরে যার সঙ্গেই আমার কথা হয়েছে তাদের আন্তরিকতা সত্যি সব সময় ছিল, আছে এবং একটা বিষয় বাংলাদেশের ব্যাপারে ভারতের সব দলমত এক থাকে। এটা হলো বড় কথা।

তিনি বলেন, আমাদের নিজেদের জন্যই দরকার। ১৯৬৫ সালে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ হয়েছিল। সেই যুদ্ধে আমাদের অনেক রেল সড়ক যোগাযোগ বন্ধ ছিল। আমি একে একে সেগুলো উন্মুক্ত করে দিচ্ছি। যেন ওই সব অঞ্চলে আমাদের জেলা উপজেলাগুলোর আর্থ সামাজিক উন্নয়ন গতিশীল হয়।

শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনি নিজে ভালো বন্ধু হলে সবাই ভালো থাকবে। আর যদি নিজে একটু এদিক ওদিক হন তাহলে তখন তো কেউ ভালো থাকে না। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি আছে সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে বৈরিতা নয়। আমরা সেই নীতি নিয়েই চলছি। কারো সঙ্গে বিশেষ বন্ধুত্ব কারো সঙ্গে কম বন্ধুত্ব এটা না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *