আগরতলা, ১২ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : আমাদের বাঁচতে দাও। খুবই করুণ এক আর্জি নিয়ে আজ আগরতলার রাজপথে পা মেলালেন এলজিবিটি(Lesbian, Gay, Bi-sexual, Transgender) সমাজের নাগরিকরা। শুধুই কি বাঁচার অধিকার, প্রশ্নের জবাব অবাক করে দিয়ে আরও অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। এলজিবিটি সমাজের নাগরিকদের কল্যাণে ত্রিপুরায় গঠিত সোসাইটি স্বভিমানের সদস্য স্নেহা রায় আজ রাজ্যের আপামর জনগণকে নতুন করে ভাববার তাগিদ অনুভব করিয়েছে। কারণ তাঁর মতে, ত্রিপুরায় ৩৭ শতাংশের অধিক মানুষ ওই সমাজের অন্তর্ভুক্ত। পারিবারিক ও সামাজিক চাপ তাঁদের পর্দার আড়ালে থাকতেই বাধ্য করছে।
আজ আগরতলায় এলজিবিটি কল্যাণে গঠিত সোসাইটি স্বভিমানের উদ্যোগে এক বর্ণাঢ্য রেলির আয়োজন করা হয়েছে। ওই রেলিটি আগরতলার বিভিন্ন পথ পরিক্রমা করেছে। সমাজে সচেতনতার উদ্দেশ্যেই এই রেলির আয়োজন করা হয়েছে বলে দাবি স্নেহা রায়ের।
স্নেহার কথায়, আমরা সবাই মানুষ। মানুষ হিসেবেই বাঁচার অধিকার আমাদের সকলের রয়েছে। আমি যেভাবে আমাকে সেভাবেই গ্রহণ করা হোক। কোন বাধ্যবাধকতা বা জোর জুলুম করে নয়। সকলে যেভাবে বাঁচেন, আমরাও সেভাবে বাঁচতে চাই। দেশের সংবিধান আমাদের সেই অধিকার দিয়েছে, অনুরোধের সুরে বলেন তিনি।
তাঁর দাবি, দেশ-বিদেশে সমকামীদের গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। আমাদের দেশের আইন সমকামীদের আইনী বৈধতা দিয়েছে। কিন্ত, ত্রিপুরা এখনো সেদিক দিয়ে অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। এরাজ্যে এখনো এলজিবিটি-দের গ্রহণযোগ্যতা নেই।
স্নেহার বক্তব্য, কেন্দ্রীয় সরকারের রুলস মেনে দেশের সমস্ত রাজ্যে ট্রান্স বোর্ড গঠন করতে হবে। সে মোতাবেক ত্রিপুরায় ওই বোর্ড গঠন হোক। তাতে, আমাদের সমাজের নাগরিকরা বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা পাবেন। তিনি বলেন, এলজিবিটি সমাজের নাগরিকদের সরকারের তরফে ট্রান্স কার্ড দেওয়া হয়। তাতে, তাঁরা স্টাইপেন্ড থেকে শুরু করে স্কলারশীপ, লিঙ্গ পরিবর্তনে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত আর্থিক সহায়তা, উজ্জলা যোজনায় বিনামূল্যে সিলিন্ডার, ২ টাকা কেজি দরে চাল পাবেন। শুধু তাই নয়, যাঁরা বাড়ি থেকে বিতাড়িত তাঁদের জন্য থাকার জায়গাও ব্যবস্থা করবে সরকার। তাঁর দাবি, এ-বিষয়ে ত্রিপুরার সমাজ কল্যাণ ও সমাজ শিক্ষা মন্ত্রী সান্তনা চাকমার সাথে আলোচনা হয়েছে। শীঘ্রই ওই ব্যবস্থা করা হবে বলে তিনি আশ্বাস দিয়েছেন।
স্নেহার বক্তব্য, লিঙ্গের অধিকার শুধুই আমাদের। সংবিধান আমাদের সেই অধিকার দিয়েছে। তবে, কেন আমরা সেই অধিকার থেকে বঞ্চিত হবো। তাঁর দাবি, ত্রিপুরায় অনেকেই প্রকাশ্যে আসতে চাইছে না। পারিবারিক এবং সামাজিক চাপে নিজেদের গুটিয়ে রাখতে বাধ্য হচ্ছেন। কিন্তু, এই অন্যায় মেনে নেওয়া উচিত নয়।
তাঁর যুক্তি, পরিবারের চাপে একজন সমকামী ছেলে কোন মেয়েকে বিয়েতে রাজি হচ্ছেন। তাঁদের হয়তো সন্তানও হচ্ছে। কিন্তু, তাঁরা সুখী দাম্পত্য জীবন কাটাতে পারছেন না। নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে পারছেন না। তাতে, অশান্তি এবং পরিণতি হিসেবে বিবাহ বিচ্ছেদ হচ্ছে।তিনি বলেন, একটি রিপোর্ট থেকে জানতে পেরেছি, ত্রিপুরায় ৩৭ শতাংশের অধিক মানুষ এলজিবিটি সমাজভূক্ত। কিন্তু, পারিবারিক চাপ এবং সামাজিক প্রতিবন্ধকতা তাঁদের প্রকাশ্যে আসতে দিচ্ছে না। তাঁদের সকলের বাঁচার অধিকার আদায়েই এই লড়াই আমাদের, বিনয়ের সাথে বলেন তিনি।