টেট পরীক্ষায় ১০ বছরের শিক্ষক নিয়োগের তথ্য সঙ্কলনে হিমসিম শিক্ষকরা

কলকাতা, ১ সেপ্টেম্বর (হি. স.) : প্রাথমিক স্কুলে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় মাত্র দু’দিনের নোটিসে ইডি-কে গত দশ বছরের তথ্য জোগাতে হবে। এতে হিমশিম খাচ্ছেন বহু শিক্ষক।

২০১২ সালের টেট পরীক্ষা থেকে এখন পর্যন্ত যত শিক্ষক নিয়োগ হয়েছে, তার তথ্য বৃহস্পতিবারের মধ্যে ইন্টারনেট মারফত জমা দিতে জেলাগুলিকে দিন দুই আগে নির্দেশ দিয়েছে রাজ্য প্রাথমিক শিক্ষা সংসদ। ফলে তথ্য একত্রিত করতে উঠে পড়ে লেগেছিলেন জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের কর্তারা। অধিকাংশ জেলাই অনেকটা প্রস্তুত। বিশেষত শিক্ষকদের বদলি বা অনুপস্থিতির দরুন গোল বেধেছে।

মঙ্গলবার রাত জেগে অনেকে নথিপত্র বার করে তথ্য অনলাইনে জমা দিয়েছেন। কোনও কোনও চক্র নথিপত্র জমা নিয়েছে। ফলে সরাসরি চক্র অফিসে গিয়ে শিক্ষকদের নথি জমা দিতে হয়েছে। কেউ কেউ ছুটিতে বা বাইরে থাকার কারণে এত অল্প সময়ের মধ্যে নথিপত্র জমা দিতে হিমশিম খেয়েছেন।

কলকাতার বেসরকারি হাসপাতালে স্ত্রীর জরুরি অস্ত্রোপচার ছিল রানাঘাটের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুজয় বিশ্বাসের। ওই রাতেই বাড়ি ফিরে এসে ফাইল ঘেঁটে তাঁকে তথ্য পাঠাতে হয়েছে। শিক্ষকদের অনেকেরই বক্তব্য, ২০১৪ সালের টেটের পর থেকে এ পর্যন্ত যত নিয়োগ হয়েছে, তার নথিপত্র এক বার জমা নেওয়া হয়েছে। তার পরে এ বার ফের ২০১২ সালের টেট থেকে সমস্ত তথ্য চাওয়া হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে পূর্ব বর্ধমান জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান মধুসূদন ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘আমরা আগেও কিছু তথ্য পাঠিয়েছিলাম। দু’দিনের মধ্যে যতটা সম্ভব, ততটা তথ্য আমরা দিয়ে দেব। কিছু তথ্য রাজ্য প্রাথমিক কাউন্সিলের কাছেই রয়েছে।’’

বাঁকুড়া, বীরভূম, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া, দুই মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম, মুর্শিদাবাদ— প্রায় সর্বত্র বুধবার রাত, এমনকি বৃহস্পতিবার সকালেও ব্যাপক তৎপরতা চলে। প্রায় সব জেলাই জানিয়েছে, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তথ্য দেওয়ার চেষ্টা চলছে। শিলিগুড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদের চেয়ারম্যান দিলীপ রায় বলেন, ‘‘এক দিনের মধ্যে তথ্য দিতে অনেকের সমস্যা হচ্ছে জেনেছি। এখন কেউ তথ্য পুরো দিতে না পারলে, সেই মতোই পাঠাতে হবে।’’

নির্দেশিকায় যে সব তথ্য চাওয়া হয়েছে, তার অন্যতম টেট পরীক্ষার রোল নম্বর। রাতারাতি পুরনো নথি বা অ্যাডমিট কার্ড খুঁজে তা দিতে অনেক শিক্ষকই বিপাকে পড়ছেন। মালদহের একটি প্রাথমিক স্কুলে সম্প্রতি বদলি নিয়ে গিয়েছেন এক শিক্ষিকা। তাঁর যাবতীয় নথি রয়েছে জলপাইগুড়ির বাড়ির আলমারিতে। বাড়িতে বর্তমানে কেউ থাকেন না। সম্প্রতি পূর্ব বর্ধমান থেকে নদিয়ার কৃষ্ণনগরে বদলি হয়ে এসেছেন কামনাশিস মিত্র। কাকে তথ্য পাঠাবেন তা নিয়ে তিনিও দোলাচলে। উত্তর দিনাজপুর থেকে নদিয়ার নাইকুড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি হয়ে আসা অমিতকুমার বিশ্বাস বলেন, “এ ক্ষেত্রে কী করতে হবে, তার স্পষ্ট নির্দেশিকা না থাকায় আমি দুই জেলাতেই তথ্য পাঠিয়ে দিয়েছি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *