আগরতলা, ১৯ আগস্ট (হি. স.) : নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থী সংগঠন এনএলএফটি-র কট্টর সদস্যদের হামলায় এক বিএসএফ জওয়ান শহিদ হয়েছেন। মধ্যপ্রদেশের বাসিন্দা বিএসএফ হেড কনস্টেবল গিরজেশ কুমার উদ্দে (৫৩)-র উগ্রপন্থী হামলায় শহিদ হওয়ার ঘটনায় ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী সহ সমগ্র রাজ্য শোকাহত।
ত্রিপুরা-মিজোরাম-বাংলাদেশ সীমান্তে উগ্রপন্থী হামলায় এক বিএসএফ জওয়ান গুরুতর আহত হয়েছিলেন। উত্তর ত্রিপুরা জেলায় আনন্দবাজার থানাধীন বিএসএফ ১৪৫ নম্বর ব্যাটালিয়ানের সীমানাপুর-২ বিওপি-তে কর্মরত ওই জওয়ানকে চপারে আগরতলায় আনা হয়েছিল। তাঁর শরীরে চারটি গুলি লেগেছিল। কিন্তু, হাসপাতালের আনার পরই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। বিএসএফ ত্রিপুরা ফ্রন্টিয়ারের জনসংযোগ আধিকারিক এমনটাই জানিয়েছেন। ত্রিপুরা পুলিশের আই জি আইন-শৃঙ্খলা ঘটনাস্থলে ছুটে গেছেন।
ত্রিপুরা পুলিশের আইজি আইন-শৃংখলা অরিন্দম নাথ জানিয়েছেন, আজ সকালে সীমানাপুর-২ বিওপির জওয়ানরা রেশন সামগ্রী সংগ্রহে নিউ সেবারাম বিওপি-র উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিলেন। ওই দুইটি বিওপির মধ্যে দূরত্ব প্রায় চার কিলোমিটার। কিন্তু ওই এলাকা দুর্গম হওয়ায় তাঁরা পায়ে হেঁটে রওনা হয়েছিলেন। ১ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটে যাওয়ার পর তাঁদের উপর উগ্রপন্থীরা সীমান্তের ওপারে বাংলাদেশের অংশ থেকে হামলা করেছে। বিএসএফ জওয়ান হেড কনস্টেবল গিরজেশ কুমার উদ্দে সবার প্রথমে ছিলেন। ফলে, উগ্রপন্থীদের ছুড়া গুলি তাঁর শরীরেই লেগেছে। আইজি আইন-শৃংখলা জানিয়েছেন, তাঁর পায়ে তিনটি এবং তলপেটে একটি গুলি লেগেছে।
উগ্রপন্থীদের অতর্কিত হামলায় বিএসএফ জওয়ানরাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলেছেন। ফলে ঘটনাস্থল থেকে উগ্রপন্থীদের দল পালিয়ে গেছে। ঘটনার খবর পেয়ে উত্তর ত্রিপুরা জেলা পুলিশ সুপার বিশাল পুলিশ বাহিনী নিয়ে ছুটে গেছেন। বিএসএফের ডিআইজি হেলিকপ্টারে ঘটনাস্থলে গেছেন। এলাকায় বিএসএফ চিরুনি তল্লাশী শুরু করেছে। আহত বিএসএফ জওয়ানকে চপারে আগরতলায় আনা হয়েছিল। কিন্তু তাঁকে বাঁচানো সম্ভব হয়নি। হাসপাতালে আসার কিছু সময়ের মধ্যেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
উগ্রপন্থী হামলায় বিএসএফ জওয়ানের শহিদ হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী ডা: মানিক সাহা। তিনি সামাজিক মাধ্যমে লেখেছেন, দেশ মাতৃকার সেবা করতে গিয়ে আজ উত্তর ত্রিপুরা জেলার সীমান্ত এলাকায় উগ্রপন্থীদের সাথে লড়াইয়ে সর্বোচ্চ বলিদান দেওয়া বিএসএফের হেড কনস্টেবল শহিদ গিরিশ কুমারকে অভিবাদন জানাই। শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি আমার সমবেদনা ও সহমর্মিতা রইলো। এই দুঃখজনক সময়ে ত্রিপুরার আপামর জনসাধারণ শহিদ জওয়ানের পরিবারের পাশে রয়েছে।
বিএসএফ জওয়ানের শহিদ হওয়ার ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিরোধী দলনেতা মানিক সরকার। তিনি ত্রিপুরার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা থেকে প্রত্যাহৃত সমস্ত টিএসআর ক্যাম্প পুণরায় চালু করার দাবি জানিয়েছেন। ত্রিপুরা পুলিশও ওই ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেছেন।
প্রসঙ্গত, ২০২১ সালের ৩ আগস্ট ধলাই জেলার ছামনু থানা এলাকার আরসি নাথ বিওপির দুই জওয়ান এসআই ভুরু সিং এবং কনস্টেবল রাজ কুমার উগ্রপন্থী হামলায় শহিদ হয়েছিলেন। ওই ঘটনায় ন্যাশানাল লিবারেশন ফ্রন্ট অব তুইপ্রা এবং চাকমাদের পার্বত্য চট্টগ্রাম জন সংহতি মোর্চা নিষিদ্ধ জঙ্গী গোষ্ঠী জড়িত ছিল বলে অনুমান করা হয়েছিল। আজকের ঘটনায় নিষিদ্ধ ঘোষিত উগ্রপন্থী সংগঠন এনএলএফটি জড়িত বলে অনুমান করা হচ্ছে।