নিজের জীবন বাজি রেখে দেশ রক্ষা করছেন বীর সেনারা, কারগিল বিজয় দিবসে বলেছেন মন্ত্রী পীযূষ

দিঘলিপুখুরির অনুষ্ঠানে অসমের তিন সহ সমূহ শহিদ জওয়ানদের শ্রদ্ধাঞ্জলি মন্ত্রীর

গুয়াহাটি, ২৬ জুলাই (হি.স.) : নিজের জীবন বাজি রেখে দেশ রক্ষা করছেন ভারতের বীর সেনারা। যে কোনও সময় তাঁদের জীবন সংকটে পড়তে পারে, তা জেনেও দেশমাতৃকার সেবা করে চলেছে ভারতীয় তিন সেনা বাহিনী। কারগিল বিজয় দিবসে দিঘলিপুখুরিতে আয়োজিত শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানে বলেছেন রাজ্যের জলসম্পদ, তথ্য ও জনসংযোগ ইত্যাদি দফতরের মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা। এদিন তিনি কারগিল যুদ্ধে অসমের তিন সহ সকল বীর শহিদ জওয়ানদের শ্রদ্ধাঞ্জলি জানিয়েছেন।

গুয়াহাটির দিঘলিপুখুরিতে অবস্থিত ‘স্টেট ওয়ার মেমোরিয়াল’-এ সৈনিক ওয়েলফেয়ার অসমের উদ্যোগে আয়োজিত কারগিল বিজয় দিবসে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য পেশ করছিলেন মন্ত্রী হাজরিকা। এদিন তিনি কারগিল যুদ্ধে শহিদ বীর জওয়ানদের স্মরণ করে ‘অমর জওয়ান’ স্মারকস্তম্ভে পুষ্পাঞ্জলি অৰ্পণ করেছেন| ১৯৯৯ সালে কারগিল যুদ্ধে শহিদ সেনানিদের স্মৃতিচারণ করে মন্ত্ৰী বলেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর অপরিসীম ত্যাগ, কষ্ট এবং দেশপ্ৰেমকে তিনি আন্তরিকভাবে শ্ৰদ্ধা জানান| আজ কারগিল বিজয় দিবসে অংশগ্রহণ করতে পেরে যথেষ্ট সুখি অনুভব করছেন|

মন্ত্ৰী বলেন, পৃথিবীর বৃহত্তম গণতান্ত্ৰিক দেশ ভারতবৰ্ষের সেনাবাহিনীর সবচেয়ে বড় বিশেষত্ব হচ্ছে, তাঁরা কখনও রাজনৈতিক ক্ষেত্ৰে প্ৰভাব খাটানোর প্ৰচেষ্টা করেননি| ভারতের প্রতিবেশী অন্যান্য দেশের মতো, স্বাধীনতার ৭৫ বছরের ইতিহাসে একদিনের জন্যও ভারতীয় সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার চেষ্টা করেনি| এই বৈশিষ্ট্যের জন্য ভারতীয় সেনাবাহিনী সবসময়ই অনন্য| ভারত সাধারণত প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সাথে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান, যদিও সময় সময় ওই সব রাষ্ট্রের কিছু উসকানিমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য এবং দেশের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে তাঁদের লড়াই করতে হয়েছে এবং হচ্ছেও| মন্ত্রী স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে তাঁদের আত্মত্যাগের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, এ ক্ষেত্রে দেশের অখণ্ডতা রক্ষায় সেনাবাহিনীকে অপরিসীম ত্যাগ স্বীকার করতে হচ্ছে|
অন্যদিকে, বন্যা, ভূমিকম্প বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় সেনাবাহিনী সাধারণ মানুষের সুরক্ষায় সেবা প্রদান করে থাকে বলেও মন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে উল্লেখ করেন| তিনি উপস্থিত সেনাবাবিনীর বর্তমান ও প্রাক্তন জওয়ানদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘নিজের জীবন বিপন্ন হতে পারে জেনেও আপনারা সেনাবাহিনীতে যোগ দিয়েছেন। এমন-কি যখন আমরা রাতে বিছানায় ঘুমাই, তখন আপনারা মাতৃভূমির সীমানা রক্ষার স্বার্থে সীমান্তে নিজেদের দায়িত্ব পালন করছেন। এর জন্য আমি আপনাদের শ্রদ্ধা সহকারে প্রণাম জানাই|’ পাশাপাশি তিনি কারগিল যুদ্ধ সহ অন্যান্য সময় দেশরক্ষায় নিজেদের প্ৰাণাহুতি প্রদানকারী সকল বীর জওয়ানদেরও তিনি আজ এই মঞ্চ থেকে শ্ৰদ্ধা সহকারে স্মরণ করে প্রণাম জানান|
এদিন কারগিল বিজয় দিবস উদযাপনের শুরুতে কারগিল যুদ্ধে অসমের শহিদ জওয়ান উদ্ধব দাসের সাহসী মা খর্গেশ্বর দেবী এবং কারগিল যুদ্ধে পরাক্রম প্রদর্শনকারী অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ডিকে বরাকে অভিনন্দন ও সংবর্ধনা জানান মন্ত্রী পীযূষ হাজরিকা|
উল্লেখ্য, কারগিল যুদ্ধে অসমের তিন বীর জওয়ান প্ৰাণাহুতি দিয়েছেন| তাঁরা ক্যাপ্টেন জিন্টু গগৈ, উদ্ধব দাস এবং হাবিলদার নারায়ণ সিনহা| ১৯৯৯ সালে কারগিলে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সংগঠিত ৬৭ দিনের যুদ্ধে অসমের তিনজন সহ দেশের মোট ৬৭৬ জন জওয়ান শহিদ হয়েছিলেন| অসমের সৈনিক ওয়েলফেয়ার অধিকরণের উদ্যোগে ২০১৮ সাল থেকে গুয়াহাটির দিঘলিপুখুরি পাড়ে কারগিল বিজয় দিবস উদযাপন হচ্ছে|

আজকের অনুষ্ঠানে মন্ত্ৰী পীযূষ হাজরিকা ছাড়াও ছিলেন শহিদ জওয়ান উদ্ধব দাসের মা খৰ্গেশ্বরী দেবী, কারগিল যুদ্ধে পরাক্ৰম প্রদর্শনকারী অবসরপ্ৰাপ্ত কর্নেল ডিকে বরা, সৈনিক ওয়েলফেয়ার অসমের অধিকর্তা অবসরপ্ৰাপ্ত ব্ৰিগ্ৰেডিয়ার জোশি নারায়ণ দত্ত, গুয়াহাটি লায়ন্স ক্লাবের বিভিন্ন স্তরের পদাধিকারী, বেশ কয়েকজন অবসরপ্ৰাপ্ত ও বর্তমান সেনা আধিকারিক ও জওয়ান সহ বিশিষ্ট নাগরিকগণ|

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *