Dr. Syama Prasad Mukherjee :ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী দেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন: ত্রিপুরার উপমুখ্যমন্ত্রী

আগরতলা, ৬ জুলাই (হি. স.) : ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী চেয়েছিলেন আত্মনির্ভর ভারত। যে ভারতে প্রত্যেক মানুষের উন্নতি হবে। তিনি চেয়েছিলেন ভারত যাতে অবিচ্ছেদ্য থাকে। ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী দেশের অখন্ডতা ও সার্বভৌমত্বকে সর্বাধিক অগ্রাধিকার দিয়েছিলেন। আজ আগরতলার রবীন্দ্র শতবার্ষিকী ভবনে ভারত কেশরী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর ১২২তম জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত শ্রদ্ধাঞ্জলি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে একথা বলেন ত্রিপুরার উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা। তাঁর কথায়, ঐক্যবদ্ধ ভারত গড়ার জন্য লড়াই করেছিলেন ডঃ মুখার্জী। দেশের সব মানুষ যাতে ন্যায় বিচার পান সেই চেষ্টাও তিনি করেছিলেন। তিনি সবকিছুর ঊর্ধ্বে দেশের জন্য চিন্তা করতেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন অতিথিগণ। তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে উপমুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের স্বপ্ন, চিন্তা ভাবনাতেই নতুন ভারতের অর্থ নিহিত রয়েছে। প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ী এক বার্তায় একথাই বলেছিলেন। আর এটাই বাস্তব। যারা ইতিহাস থেকে কিছুই শেখে না, তারা বঞ্চিত থেকে যায়। সবকা সাথ সবকা বিকাশ, সবকা বিশ্বাস ও সবকা প্রয়াস- এটা শুধু কোনও রাজনৈতিক দলের শ্লোগান নয়। এই শ্লোগানের সাথে ভারতবর্ষের সংস্কৃতির সম্পর্ক রয়েছে। প্রাচীন ভারতের ঋক বেদেও এর সারবত্তা বলা হয়েছে। বাম নয়, ডান নয়- একটাই নীতি জাতীয়তাবাদ বা রাষ্ট্রবাদ। আর এই নীতিতেই বিশ্বাসী ছিলেন ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী।

অনুষ্ঠানে উপমুখ্যমন্ত্রী আরও বলেন, অনেকে হয়তো অবগত নন যে ত্রিপুরার সাথেও একটা নিবিড় সম্পর্ক ছিল ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর। একটা সময় ত্রিপুরাকে পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করার গভীর চক্রান্ত হয়েছিল। তখন ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ত্রিপুরার মহারাজা বীর বিক্রম মাণিক্যকে নিয়ে গিয়ে হিন্দু মহাসভার বৈঠকে সভাপতি করেছিলেন। এ সম্পর্কে বেশকিছু নথিপত্রও রয়েছে। লন্ডনে প্রথম হিন্দু মন্দির বানিয়েছিলেন ত্রিপুরার রাজা। উপমুখ্যমন্ত্রী যীষ্ণু দেববর্মা বলেন, রাষ্ট্রধর্ম পালনের মাধ্যমেই প্রকৃত ধর্ম পালন করা সম্ভব। নবীন প্রজন্মকে ভারতবর্ষের প্রকৃত ইতিহাস জানাতে হবে।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী বলেন, ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী ভারতের সার্বভৌমত্ব ও অখন্ডতা রক্ষায় আত্মবলিদান দিয়েছিলেন। সারা দেশে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর জন্মজয়ন্তী পালন করা হচ্ছে। তথ্য ও সংস্কৃতি মন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা সংগ্রামে যারা দিশা দেখিয়েছিলেন তাদের দেশবাসী চিরকাল মনে রাখবেন। সূর্য, চন্দ্র, তারা, গ্রহ যতদিন থাকবে ততদিন তাদের স্মরণ করবেন মানুষ। তিনি বলেন, দেশের অখন্ডতা, সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে প্রাণ বলিদান দিয়েছেন ভারত কেশরী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী। তাঁর অবদান অন্যান্য মনীষীদের চাইতে কোনও অংশে কম হতে পারে না। কাশ্মীরকে ভারতের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে রাখতে দীর্ঘ লড়াই চালিয়ে গিয়েছেন তিনি। আজ কাশ্মীর থেকে ৩৭০ ধারা তুলে নেওয়া ডঃ মুখার্জীর লড়াইয়েরই ফসল। আর সেটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের তৎপরতায়। দেশকে এক নতুন দিশা দেখিয়ে গেছেন তিনি।

অনুষ্ঠানে মুখ্য আলোচক হিসেবে পশ্চিমবঙ্গের বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ডঃ কল্যাণ চক্রবর্তী ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর জীবনের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি বলেন, ডঃ মুখার্জী ছিলেন বরাবরই একজন অসাধারণ মেধাবী ব্যক্তিত্ব। যথার্থ গুণী ও প্রাজ্ঞ ব্যক্তিত্ব। তিনি প্রকৃত অর্থেই ছিলেন একজন সমাজসেবী। এর পাশাপাশি বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের স্রষ্টা ছিলেন ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জী। তাঁর জীবনের অন্যতম লক্ষ্যই ছিল জনসেবা।

অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তরের অধিকর্তা রতন বিশ্বাস বলেন, দেশের বীর সন্তানদের নিয়ে সারা বছর ধরে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে থাকে তথ্য ও সংস্কৃতি দপ্তর। ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর জন্মজয়ন্তী পালন একটা বড় উদ্যোগ। বিভিন্ন জেলায় এই কর্মসূচি পালন করা হয়। কেন্দ্রীয়ভাবে আগরতলাতে করা হয়েছে। ডঃ মুখার্জী দেশের উন্নয়নে তাঁর চিন্তাধারা ও ভাবধারা রেখে গিয়েছিলেন। তিনি দেশের কল্যাণে স্বপ্ন দেখেছিলেন।

অনুষ্ঠানে বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আগরতলা পুরনিগমের মেয়র দীপক মজুমদার, রাজ্য উচ্চশিক্ষা পর্ষদের চেয়ারম্যান ডঃ অরুণোদয় সাহা, কালচারাল এডভাইজারি কমিটির চেয়ারম্যান কমল দেব। শ্রদ্ধাঞ্জলি জ্ঞাপন অনুষ্ঠানে ডঃ শ্যামাপ্রসাদ মুখার্জীর জীবন ও কর্মের উপর একটি স্বল্প দৈর্ঘ্যের চলচ্চিত্র প্রদর্শন করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *