দূষণ থেকে বাঁচবে দেশ, ভারতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পুরোপুরি নিষিদ্ধ

নয়াদিল্লি, ১ জুলাই (হি.স.): দেশ জুড়ে পুরোপুরি নিষিদ্ধ হয়ে গেল সিঙ্গল ইউজ অর্থাৎ এক বার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক অথবা তা দিয়ে তৈরি সামগ্রীর ব্যবহার। গত বছরের আগস্ট মাসেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিল কেন্দ্রীয় পরিবেশ মন্ত্রক। সেই নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়েছে আগামী ১ জুলাই থেকে, এবার থেকে আর ব্যবহার করা যাবে না একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক অথবা তা দিয়ে তৈরি সামগ্রী।

পরিবেশ মন্ত্রকের জারি করা নির্দেশিকা অনুযায়ী, এক্সপ্যান্ডেড পলিস্টিরিন, পলিস্টিরিন-সহ যে কোনও সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিকের উৎপাদন, বিক্রি, আমদানি, বিতরণ নিষিদ্ধ করা হয়েছে দেশে। শ্যাম্পু, সাবানের বোতল থেকে মাস্ক, ময়লা ফেলার প্যাকেট, চিপ্‌সের প্যাকেট— সবই তৈরি হয় এই ধরনের প্লাস্টিক দিয়ে। মিষ্টি ও সিগারেটের বাক্সেও থাকে এই ধরনের প্লাস্টিক।
এই জাতীয় প্লাস্টিক ধীরে ধীরে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র খণ্ডে ভেঙে গিয়ে পরিবেশে মারাত্মক দূষণ ঘটায়। তাছাড়া পরিবেশ বিজ্ঞানীদের দাবি, দেশ জুড়ে প্রায় ৪০ শতাংশ প্লাস্টিক বর্জ্য সংগ্রহ করাই হয় না। ওই বর্জ্য পুড়িয়ে তা নষ্ট করতে গেলেও তাতে বায়ুদূষণের মাত্রা বাড়ে। আবার প্লাস্টিক বর্জ্য জমেও তা পরিবেশের ভয়াবহ ক্ষতি করছে। এমনকি, নদী বা সমুদ্রদূষণ বা নিকাশি ব্যবস্থা বুজিয়ে দেওয়ার পিছনেও রয়েছে প্লাস্টিক বর্জ্য। সিঙ্গল ইউজ প্লাস্টিক ব্যবহার নিষিদ্ধ করলে তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে বলে মনে করছেন পরিবেশবিদরা।

কেন নিষিদ্ধ করা হচ্ছে এই ধরনের জিনিস?

সামগ্রিক স্বাস্থ্যের কথা ভেবেই এই সিদ্ধান্ত। সাধারণত নিচু মাইক্রনের কোনও প্লাস্টিকের জিনিস ব্যবহার নিয়ে যত না সমস্যা, তা পুনর্ব্যবহার নিয়ে আশঙ্কা অনেক বেশি। এই সব প্লাস্টিক পুনর্ব্যবহার করা যায় না। তাই ফেলে দেওয়ার পর ধীরে ধীরে ভাঙতে থাকে। এতই ছোট ছোট ভাগে ভেঙে যায় যে, তা আর আলাদা করে সরানো সম্ভব হয় না। সময়ের সঙ্গে মিশে যায় বিভিন্ন খাদ্যবস্তুতে। তার মাধ্যমে শরীরে ঢুকে যেতে পারে। একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের ক্ষতিকর প্রভাব জলজ বাস্তুতন্ত্রের ওপর পড়ে। এছাড়া সারা বিশ্বের সামুদ্রিক পরিবেশও নষ্ট হয়। বিশ্বের সব দেশগুলির পরিবেশের দূষণ রোধে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক এখন একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে অন্য কিছু প্রস্তুতিতে কারিগরি সহায়তা প্রদানের জন্য এমএসএমই ইউনিটগুলিতে বিভিন্ন রকম কর্মশালার আয়োজন করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র, অতিক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পোদ্যোগ মন্ত্রক এবং পেট্রো-কেমিক্যালস ইঞ্জিনিয়ারিং-এর কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান এতে সহায়তা করছে। ভারত সরকার একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের বিকল্প যাতে সারা দেশে মজুত থাকে, সে বিষয়টির দিকেও নজর রেখেছে। আন্তঃরাজ্য স্তরে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পদার্থের আমদানি-রফতানি বন্ধ করতে সীমান্তে নজরদারি ব্যবস্থা চালু করার জন্য রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলিকে বলা হয়েছে। প্লাস্টিকের ব্যবহার বন্ধ করতে চালু হচ্ছে অভিযোগ জানানোর জন্য বিশেষ অ্যাপ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *