আগরতলা, ২৯ জুন : গর্ভবতী মহিলা ও গর্ভজাত শিশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা সুনিশ্চিত করতে ১ জুলাই থেকে রাজ্যব্যাপী আদর্শ মাতৃত্ব অভিযান-র সুচনা হতে চলেছে। চলবে ১৪ জুলাই পর্যন্ত। ২০২২-২৩ অর্থবছরে সারা রাজ্যে গর্ভবতী মহিলার সংখ্যা প্রায় ৫৯ হাজার ৮৭০ জন চিহ্নিত হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে আদর্শ মাতৃত্ব অভিযান-এ সারা রাজ্যে প্রায় ২৯ হাজার ৯৩৭ জন গর্ভবর্তী মহিলাদের চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া হবে। আজ সাংবাদিক সম্মেলনে জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের ত্রিপুরা মিশন অধিকর্তা এই সংবাদ দিয়েছেন।
তিনি জানান, এই অভিযানের প্রথম ৫ দিন আশাকর্মীরা বাড়ি বাড়ি গিয়ে এলাকার প্রজননক্ষম দম্পতি এবং গর্ভবর্তী মহিলাদের তালিকা তৈরি করবেন। প্রজননক্ষম দম্পতিদের পরিবার পরিকল্পনা সম্বন্ধিত তথ্য যেমন কোন জন্ম নিরোধক পদ্ধতি অবলম্বন করেন কিনা ইত্যাদি বিষয়ে আলোচনা করবেন। যদি কোনও মহিলার তাঁর সর্বশেষ মাসিক ঋতুচক্র না হয় তাহলে আশাকর্মী সেই মহিলার গর্ভাবস্থার পরীক্ষা করবেন। গর্ভবস্থা পজিটিভ হলে সেই রিপোর্ট এ এন এম কে দেওয়া হবে। সেইসঙ্গে সাব-সেন্টারে গর্ভবর্তী মহিলার প্রাথমিক রেজিস্ট্রেশন সুনিশ্চিত করা হবে। অভিযান চলাকালীন সকল গর্ভবতী মহিলার প্রাক-প্রাথমিক পরীক্ষা এবং টি ডি টিকা সুনিশ্চিত করা হবে।
তিনি আরো বলেন, উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রস্তরে বয়ঃসন্ধিকালীন দম্পতিদের আলাদা তালিকা তৈরী করা হবে। বয়ঃসন্ধিকালীন গর্ভধারণ রোধ করতে পরিবার পরিকল্পনার সমস্ত আধুনিক পদ্ধতি অবলম্বন করতে পরামর্শ দেওয়া হবে। তাঁর দাবি, প্রতিটি গর্ভবর্তী মহিলার স্বাস্থ্য দেখভালের জন্য একজন কমিউনিটি হেলথ অফিসার, এ এন এম থাকবেন। আশাকর্মী ও অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীরা গর্ভবতী মহিলাদের স্বাস্থ্যের পর্যবেক্ষন করবেন। যেকোনও জরুরী পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরাও গর্ভবর্তী মহিলাদের পাশে থাকবেন এবং প্রতিষ্ঠানিক প্রসবের জন্য গর্ভবর্তী মহিলাদের উৎসাহিত করবেন।
তিনি জানান, এই অভিযান চলাকালীন বেশ কিছু পরিষেবা বিনামূল্যে সুনিশ্চিত করা হবে। তাতে রয়েছে, একজন অভিজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে প্রতিটি গর্ভবর্তী মহিলার স্বাস্থ্য পরীক্ষা সুনিশ্চিত করা হবে এবং যেসব গর্ভবতী মহিলারা উচ্চ ঝুঁকিপুর্ণ বলে চিহ্নিত হবে, পরবর্তী সময়ে তাদের অতিরিক্ত যত্ন নেওয়া হবে। প্রতিটি গর্ভবতী মহিলার সমস্ত ধরণের প্রাক-প্রসবকালীন পরীক্ষা করা হবে। এমনকি প্রয়োজনে আল্ট্রা সনোগ্রাফিও করা হবে। প্রতিটি গর্ভবতী মহিলাকে আয়রন ফলিক অ্যাসিড এবং ক্যালসিয়ামের ট্যাবলেট দেওয়া হবে।
এছাড়া, প্রতিটি গর্ভবতী মহিলাকে বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের মাধ্যমে আর্থিক সহায়তা পাওয়ার জন্য নাম নথিভুক্ত করা হবে। তাতে, জননী সুরক্ষা যোজনার মাধ্যমে তপশিলী জাতি, তপশিলী উপজাতি এবং সাধারন ক্যাটাগরির বি পি এলভুক্ত গর্ভবর্তী মহিলাদের হাসপাতালে প্রসব হলে গ্রামাঞ্চলে ৭০০ টাকা, শহরাঞ্চলে ৬০০ টাকা এবং কোনও কারনে বাড়িতে প্রসব হলে ৫০০ টাকা দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী মাতৃবন্দনা যোজনার মাধ্যমে প্রথম সন্তানের জন্য বিভিন্ন কিস্তিতে ৫০০০ টাকা দেওয়া হয়। মুখ্যমন্ত্রী মাতৃ পুষ্টি উপহার রাজ্য সরকারের এই প্রকল্পের মাধ্যমে গর্ভবর্তী মহিলার প্রতিটি প্রাক প্রসবকালীন চিকিৎসকের দ্বারা পরীক্ষার জন্য ৫০০ টাকা করে মোট ২০০০ টাকা ৪ বার পরীক্ষার জন্য দেওয়া হয়।
তিনি বলেন, জননী শিশু সুরক্ষা যোজনার মাধ্যমে বিনামূল্যে প্রসব সুনিশ্চিত করা হয়। এমনকি সিজারও বিনামূল্যে করা হয়। এই যোজনার মাধ্যমে প্রসবের সময় বাড়ি থেকে হাসপাতালে, প্রয়োজনে এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে এবং প্রসবের পর হাসপাতাল থেকে বাড়িতে পৌঁছানোর জন্য গাড়ি ভাড়া দেওয়া হয়।
2022-06-29