আগরতলা, ১০ মে : জনসাধারণের মনের ভাব প্রকাশ করার অধিকারকে সুনিশ্চিত করেছে বর্তমান রাজ্য সরকার। শুধু মনের ভাব প্রকাশ নয় রাজ্যের জনসাধারণকে যথার্থ সম্মানও দিয়েছে এই সরকার। সরকার জনগণের আর্থসামাজিক মানোন্নয়নে বদ্ধপরিকর। আজ মোহনপুর মহকুমার তারাপুর হাই স্কুল মাঠে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকারের জনকল্যাণমুখী বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের নিয়ে আয়োজিত এক মতবিনিময় অনুষ্ঠানে একথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। মুখ্যমন্ত্রী আজ প্রাকৃতিক দুর্যোগকে উপেক্ষা করেও অনুষ্ঠানে সমবেত অগণিত মানুষের কাছে পৌঁছে গিয়ে তাদের সুবিধা অসুবিধার কথা শুনেন। মোহনপুরে কিষাণ সম্মান নিধির সুবিধাভোগী ও প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা-গ্রামীণ প্রকল্পের সুবিধাভোগীদের নিয়ে মতবিনিময় অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার জনতার সরকার। জনগণের সার্বিক কল্যাণ্যে গুচ্ছ প্রকল্প রূপায়ণ করছে এই সরকার। তিনি বলেন, বর্তমানে বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে জনসাধারণ যেসকল সুবিধা ভোগ করছেন, তা মনে রাখার পাশাপাশি বিগত দিনে যেসব অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়েছে সেটাকেও মনে রাখা দরকার। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রদর্শিত পথেই বর্তমান রাজ্য সরকার বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচি বাস্তবায়িত করছে। করোনা অতিমারীর সময়ে প্রধানমন্ত্রী বিনামুল্যে টিকাকরণের মাধ্যমে মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী মানুষের জীবনমান উন্নয়নে বিভিন্নভাবে সুবিধা প্রদান করছেন। প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ঘর, জলজীবন মিশনের মাধ্যমে পানীয়জলের সংযোগ, উজ্জ্বলা যোজনায় গ্যাস সংযোগ, সৌভাগ্য যোজনায় বিদ্যুৎ, গরীবদের জন্য বিনামূল্যে চাল, রাস্তাঘাট সহ জনকল্যাণে বিভিন্ন কর্মসূচি রূপায়িত হচ্ছে। এছাড়াও জাতীয় সড়ক উন্নয়ন, এমবিবি বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল ভবন চালু করা, বিদ্যাজ্যোতি প্রকল্পে স্কুলকে সিবিএসসি’র আওতায় আনা সহ পরিকাঠামো উন্নয়নে সর্বক্ষেত্রে সুবিধা প্রদান করছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় মোহনপুর বিধানসভা এলাকায় ৮ হাজারের বেশী সুবিধাভোগী পরিবার ঘর পেয়েছেন। ২০২১-২২ অর্থবছরেই প্রায় ৪৫০০ ঘর এই এলাকায় মঞ্জুর হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ২০১৯ সালে জলজীবন মিশন শুরু হয়েছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রত্যেকটি বাড়িতে পানীয়জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়া হবে। তবে বর্তমান রাজ্য সরকার প্রতিটি বাড়িতে বিনামূল্যে পানীয় জলের সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে ২০১৮ সালে অনুরূপ একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছিল। এক্ষেত্রে তিনি গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প সমূহের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া যেমন সরকারের দায়িত্ব তেমনি এই প্রকল্পগুলি রক্ষণাবেক্ষণের ক্ষেত্রে জনগণকে এগিয়ে আসতে হবে।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মাননিধি প্রকল্পের মাধ্যমে প্রতি বছর কৃষকদের ব্যাংক একাউন্টে ৬০০০ টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। মোহনপুর অঞ্চলে প্রায় ২৫০০ জন কৃষক প্রধানমন্ত্রী কিযাণ সম্মাননিধি প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন। এছাড়াও বর্গাদারদের সুবিধার্থেও প্রকল্প রূপায়িত করছে রাজ্য সরকার।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বর্তমান সরকার রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর সামাজিক ভাতা বৃদ্ধি করেছে এবং আগামী দুর্গাপূজার আগে তা ২০০০ টাকা করে দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তিনি আরও বলেন, হোমগার্ডদের বেতন ৬ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ১৮ হাজার টাকা করা হয়েছে। টিএসআরদের চাকরির অবসরের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৬০ বছর করা সহ সরকারি কর্মচারিদের এডহক ভিত্তিতে পদন্নোতি দেওয়ার ব্যবস্থা করেছে বর্তমান রাজ্য সরকার। রাজ্যে গুণগত শিক্ষার প্রসারে রাজ্য সরকার কর্তৃক রূপায়িত বিভিন্ন শিক্ষামূলক প্রকল্পসমূহের ফলে শিক্ষার্থীরা যেসব সুবিধা পাচ্ছে সেই বিষয়েও মুখ্যমন্ত্রী তার বক্তব্যে তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী রতনলাল নাথ, কৃষি ও কৃষক কল্যাণ মন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায় উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার জেলাশাসক দেবপ্রিয় বর্ধন। ধন্যবাদসূচক বক্তব্য রাখেন কৃষি ও কৃষক কল্যাণ দপ্তরের সচিব অপূর্ব রায়। মতবিনিময় অনুষ্ঠানপর্ব শেষে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ৩ জন সুবিধাভোগীর বাড়ি পরিদর্শন করেন। মুখ্যমন্ত্রী তাদের সাথে মতবিনিময় করেন এবং প্রকল্পের বাস্তবায়ণ প্রত্যক্ষ করেন। মুখ্যমন্ত্রী এদিন একটি অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রও পরিদর্শন করেন।
2022-05-10