খুলে যাবে এলপি, এমই, হাইস্কুল, কলেজ; বিহু আয়োজকদের কোনও ‘চাঁদা’ গ্রহণ থেকে দূরে থাকার অনুরোধ
গুয়াহাটি, ৭ ফেব্রুয়ারি (হি.স.) : গত সপ্তাহ-খানেক থেকে অসমে কোভিড-১৯-এর তৃতীয় ঢেউ দুর্বল হয়ে পড়েছে, সক্রমণের সংখ্যাও দ্রুত কমছে। তাই পরিস্থিতি বিবেচনায় আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে নাইট কারফিউ থেকে শুরু করে কোভিড সংক্রান্ত অন্যান্য বিধি-নিষেধ শিথিল হবে। খুলে যাবে এলপি, এমই, হাইস্কুল, কলেজ, জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। এছাড়া এ বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষা যথাসময়েই অুনুষ্ঠিত হবে।
দিল্লি যাত্রার আগে আজ সোমবার সকালে জনতা ভবনে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে এই ঘোষণার পাশাপাশি আরও কয়েকটি বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘোষণা করেছেন ড. হিমন্তবিশ্ব শর্মা। তিনি বলেন, আগামী এপ্রিলের মধ্যে বেশ কয়েকটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে রাজ্যে। এর মধ্যে মাজুলি আসনে উপনির্বাচন, পুর ও নগর সংস্থার নির্বাচন উল্লেখযোগ্য। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এবং কোভিড পরিস্থিতির যথেষ্ট উন্নতি হওয়ায় রাতের কারফিউ সহ সমস্ত বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হবে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, আগামী ১৫ ফেব্ৰুয়ারি থেকে খুলে যাবে এলপি, এমই, হাইস্কুল, কলেজ। এছাড়া এ বছরের মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকের চূড়ান্ত পরীক্ষা যথাসময়েই অুনুষ্ঠিত হবে। তাই সংশ্লিষ্ট সব ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাকে যথাশীঘ্র ভ্যাকসিন নিতে আহ্বান জানান তিনি। যে সব ছাত্র বা ছাত্রী ভ্যাকসিন নেবে না, তাদের পরীক্ষায় বসতে দেওয়া হবে না।
তিনি আরও জানান, সিনেমা হল, জিম, সুইমিং পুল, সব ধরনের সামাজিক প্রতিষ্ঠান তথা সামাজিক পর্ব ইত্যাদি পুর্ণোদ্যমে চলবে। তবে মুখে মাস্ক পরা এবং স্যানিটাইজার ব্যবহার করা পূর্ববৎ বাধ্যতামূলক থাকবে। এছাড়া কোনও মিটিং বা সমাবেশে অংশগ্রহণকারী এবং সিনেমা হলে প্রবেশকারীদের অবশ্যই টিকার ডাবল ডোজ-প্রাপ্ত হতে হবে।
রঙালি তথা বহাগ বিহু উদযাপন প্রসঙ্গেও বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বলেন, অতিমারির কবলে পড়ে রাজ্যের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্র ব্যাহত হওয়ায় এবার বিহু উদযাপনে কোনও বিধিনিষেধ থাকবে না। তবে বিহু উদযাপনের জন্য কোনও ধরনের ‘চাঁদা’ বা দান গ্রহণ থেকে দূরে থাকতে সংশ্লিষ্ট আয়োজকদের প্রতি আবেদন জানিয়েছেন তিনি। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা, বিহু আয়োজক কমিটিগুলিকে সরকারের পক্ষ থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা করে প্রদান করা হবে। তবে কমিটিগুলির বয়স কমপক্ষে ১০ বছর বা তার বেশি হতে হবে। কোভিড-১৯-এর প্রভাবে বাধাগ্রস্ত সমস্ত উদ্যোগকে উৎসাহিত করতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে রঙালি বিহু উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী ড. শর্মা।
রাজ্যে অনুষ্ঠেয় নির্বাচন প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচন কমিশন আগামী ১০ ফেব্রুয়ারির আগে পুরসভা ও নগর সংস্থার নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবে। গুয়াহাটি পুরনিগমের নির্বাচন এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হবে, জানান ড. শর্মা। যোগ করেন, কারবি স্বশাসিত পরিষদের নির্বাচনও এপ্রিলে অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি আরও বলেন, নগর উন্নয়ন একটি উন্নত রাজ্যের চাবিকাঠি। প্রতিটি শহরের সমস্ত অফিস এক জায়গায় থাকবে। সে অনুযায়ী সরকারি বিভিন্ন অফিস এখন জেলাশাসকের কার্যালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে। উন্নয়নের পরিকল্পনা তুলে ধরে তিনি আরও বলেন, যোরহাটে জেলাশাসকের কার্যালয় আমিনগাঁওয়ের মতো হবে। সব জেলায় স্টেডিয়াম ও অডিটোরিয়াম তৈরি করা হবে। এছাড়া ছোট শহরগুলি পাবে ৫০০ আসন-বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম। এছাড়া শহরের প্রাণকেন্দ্র থেকে কারাগারগুলিকে অন্যত্র স্থানান্তরের ঘোষণাও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনকে কর্মক্ষম করে তুলতে ইঞ্জিনিয়ার সহ বিভিন্ন বিভাগের আধিকারিকদের রাজ্য ক্যাডারের অধীনে আনা হবে, জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, তাঁদের পারিশ্রমিক সরকার প্রদান করবে এবং সময় সময় তাঁদের বদলিও করা হবে।
সরকার-গৃহীত আরও পরিকল্পনার ব্যাখ্যা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে কোনও প্রতীক না দেওয়ার ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে। অবশ্য এর আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। স্বচ্ছ ভাবমূর্তি সম্পন্ন ও কর্মঠ প্রার্থীদের পুর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। এ প্রসঙ্গে তিনি বিজেপি, কংগ্রেস, অগপ সহ সমস্ত রাজনৈতিক দলকে পুর নির্বাচনের জন্য যোগ্য প্রার্থীদের টিকিট দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
ড. শর্মা বলেন, পিএম আরবান স্কিম অসমকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করছে। সরকার-নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে কম দামে সবাই জমি কিনতে পারবেন। এতে সরকার ক্ষুণ্ণ হবে না বলে তিনি বলেন, সরকার সরকারি মূল্যে রাজস্ব নিতে পারবে। সরকার কর্তৃক অধিগ্রহণকৃত জমির জন্য সাধারণ মানুষ যাতে সঠিক মূল্য পেতে পারেন তার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, বলেন মুখ্যমন্ত্রী।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী আরও জানান, অসম রাজ্য পরিবহণ এবং বিদ্যুৎ বিভাগ লাভের মুখ দেখছে। তিনি বলেন, স্মার্ট সিটির ট্রাফিক ব্যবস্থাপনাও খুব শিগগির উন্নত হবে।