আগরতলা, ২০ জানুয়ারি (হি. স.) : করোনা মোকাবিলায় ত্রিপুরায় ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সীদের বিশেষ টিকাকরণ অভিযান শুরু হয়েছে। সেই অভিযানের অন্তর্গত টিকাকরণ কেন্দ্র সরেজমিনে পরিদর্শন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব সহ ত্রিপুরা মন্ত্রিসভার সদস্যগণ।
তিনদিনব্যাপী কোভিড-১৯ টিকাকরণ বিশেষ অভিযানের অঙ্গ হিসেবে আজ গোমতী জেলার বিভিন্ন টিকাকরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। এই কেন্দ্রগুলি পরিদর্শনকালে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯-২১ জানুয়ারি এই বিশেষ টিকাকরণ কর্মসূচির মাধ্যমে ১৫-১৮ বছরের ছেলেমেয়েদের দ্রুততার সঙ্গে টিকাকরণের আওতায় নিয়ে আসা হবে। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে আয়োজিত টিকাকরণ কর্মসূচির পাশাপাশি স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলিতেও যে টিকাকরণ হচ্ছে তাতে সংশ্লিষ্ট বয়সের ছেলেমেয়েদের টিকাকরণ করানোর লক্ষ্যে অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।
মুখ্যমন্ত্রী আজ গোমতী জেলার তিনটি টিকাকরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। এগুলি হলো ভগিনী নিবেদিতা বালিকা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়, কিরীট বিক্রম ইনস্টিটিউট ও মাতাবাড়ি উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়। উল্লেখ্য, কোভিড টিকাকরণের তিনদিনব্যাপী বিশেষ কর্মসূচির সহায়তায় মাতাবাড়ি বালিকা উচ্চমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ১৫-১৮ বছরের সমস্ত ছাত্রছাত্রীর টিকাকরণ সম্পন্ন হয়ে গেছে। কোভিড টিকাকরণ কেন্দ্র পরিদর্শনের সময় মুখ্যমন্ত্রী বিভিন্ন শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। জাতীয় শিক্ষানীতির সংশোধনী, পঠন পাঠন, শিক্ষামূলক বিভিন্ন বিষয়ের পাশাপাশি প্রবহমান ঘটনাবলি সম্পর্কে মতবিনিময় করেন।
এদিন বিদ্যালয়ের শিক্ষক শিক্ষিকাদের সঙ্গেও কথা বলেন মুখ্যমন্ত্রী। এই বয়সসীমার ছাত্রছাত্রীদের জন্য কোভিড টিকার ব্যবস্থা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী ও মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানান ছাত্রছাত্রীরা। এরপর মুখ্যমন্ত্রী ত্রিপুরেশ্বরী মন্দির দর্শন করেন। কোভিড টিকাকরণ কর্মসূচি পরিদর্শনকালে মুখ্যমন্ত্রীর সাথে উপস্থিত ছিলেন পর্যটনমন্ত্রী প্রণজিৎ সিংহরায়, বিধায়ক বিপ্লব কুমার ঘোষ, বিদ্যালয় শিক্ষা দপ্তরের অধিকর্তা চান্দনি চন্দ্রন, গোমতী জেলার জেলাশাসক আর এইচ কুমার প্রমুখ।
এদিন উপমুখ্যমন্ত্রী জিষ্ণু দেববর্মা সিপাহীজলা জেলায় বিশালগড় মহকুমার বিভিন্ন কোভিড টিকাকরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন। তিনি বলেন, কোভিড নিয়ে অযথা আতঙ্কের কিছু নেই। স্বাস্থ্যবিধিগুলি যথাযথভাবে মেনে চললে এবং সময় মতো টিকা নেওয়া হলে কোভিডের মতো অতিমারীকে মোকাবিলা করা যায়। তিনি ছাত্রছাত্রীদের সবাইকে কোভিডের টিকা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেন, শুধু নিজে টিকা নিলেই হবে না, অন্যরা যারা আছে তাদেরও টিকা নেওয়ার জন্য উৎসাহিত করতে হবে। ছাত্রছাত্রীদের বুঝতে হবে টিকা নেওয়ার মানে নিজেকে সুস্থ ও সুরক্ষিত রাখা, পরিবারকে সুস্থ রাখা।
তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার মানোন্নয়নে রাজ্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। তারা যাতে জীবনে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে এজন্য ইতিমধ্যেই নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। তাঁর কথায়, বর্তমানে ত্রিপুরায় কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। তাই ছাত্রছাত্রীদের সাবধান থাকতে হবে। ত্রিপুরা সরকার ১৫-১৮ বছরের ছাত্রছাত্রীদের টিকাকরণের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এতে সামিল হয়ে সবাইকে দ্রুত টিকা নিয়ে নিতে হবে। তবেই নিজে শুধু সুরক্ষিত থাকবে না অন্যকেও সুরক্ষিত রাখা যাবে। উপমুখ্যমন্ত্রী আজ বিশালগড় ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল, চড়িলাম দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় এবং বিশ্রামগঞ্জ দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের টিকাকরণ কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
এদিকে, ঊনকোটি জেলায় ১৫ থেকে ১৮ বছর বয়সের ছাত্রছাত্রীদের কোভিড-১৯ টিকাকরণ অভিযানের দ্বিতীয় দিনে আজ সমাজকল্যাণ ও সমাজশিক্ষা মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা কৈলাসহরের ৩টি স্কুল পরিদর্শন করেন। প্রথমে তিনি আরকেআইতে আসেন। সেখানে তিনি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শ্যামল দাসও ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলেন। এরপরে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শ্রীমতি চাকমা নেতাজী বিদ্যাপীঠ ও শ্রীরামপুর সূর্যমণিনগর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে কোভিড-১৯ টিকাকরণের বিষয়ে খোঁজখবর নেন। তিনি নেতাজী বিদ্যাপীঠের প্রধান শিক্ষক অসিত দত্ত এবং শ্রীরামপুর সূর্যমণিনগর দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অরিন্দম সরকারের সাথে কথা বলেন ও স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের সঙ্গে টিকাকরণের বিষয়ে মতবিনিময় করেন। টিকাকরণের অগ্রগতিতে সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সান্ত্বনা চাকমা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।
সোনামুড়া মহকুমার কুলুবাড়ি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে আজ ১৫-১৮ বছরের ছাত্রছাত্রীদের কোভিড-১৯ টিকাকরণ কর্মসূচি পরিদর্শন করেন সমবায় মন্ত্রী রামপ্রসাদ পাল। সমবায় মন্ত্রী শ্রীপাল আজ সোনামুড়া মহকুমার কুলুবাড়ি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় ছাড়াও সোনামুড়া দ্বাদশ শ্রেণী বালিকা বিদ্যালয়ে কোভিড টিকাকরণ কর্মসূচি পরিদর্শন করেন ও ছাত্রছাত্রীদের কোভিড টিকা গ্রহণে উৎসাহিত করেন। পরিদর্শনের সময় সমবায় মন্ত্রী শ্রীপাল বলেন, রাজ্য সরকার ১৫-১৮ বছরের ছাত্রছাত্রীদের কোভিড টিকাকরণে বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছে। এজন্য গতকাল থেকে শুরু হয়েছে বিশেষ কোভিড টিকাকরণ অভিযান। এই অভিযান সফল করে তুলতে তিনি অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ছাত্রছাত্রীরাই দেশ ও রাজ্যের ভবিষ্যৎ। তাদের সুরক্ষার কথা ভেবেই সরকার এই বিশেষ অভিযানের উদ্যোগ নিয়েছে।
জনজাতি কল্যাণমন্ত্রী মেবার কুমার জমাতিয়া আজ খোয়াই জেলার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে বিশেষ কোভিড টিকাকরণ অভিযান কর্মসূচি পরিদর্শন করেন। তিনি আজ প্রথমে খোয়াই সরকারি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের কোভিড টিকাকরণ কর্মসূচি পরিদর্শন করেন। এরপর তিনি গণকি দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় ও শরৎচন্দ্র দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে কোভিড টিকাকরণ কর্মসূচি পরিদর্শন করেন এবং ছাত্রছাত্রীদের কোভিড টিকা গ্রহণে উৎসাহিত করেন।
এদিকে, বিলোনীয়া মহকুমার বিদ্যাপীঠ দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে আজ ১৫-১৮ বছরের ছাত্রছাত্রীদের কোভিড-১৯ টিকাকরণ কর্মসূচি পরিদর্শন করেন তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরী। তিনি আজ বিলোনীয়া সফরে গিয়ে বিদ্যাপীঠ দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয় ছাড়াও বিলোনীয়া দ্বাদশ শ্রেণী বালিকা বিদ্যালয় ও আর্য কলোনী দ্বাদশ শ্রেণী বিদ্যালয়ে কোভিড-১৯ টিকাকরণ অভিযান কর্মসূচি পরিদর্শন করেন ও টিকা গ্রহণে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহিত করেন। পরিদর্শনের সময় তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী বলেন, ইতিমধ্যেই ৪২ শতাংশ টিকাকরণ সম্পন্ন হয়েছে।

