আগরতলা, ১৯ জানুয়ারি (হি. স.) : খুমুলুঙয়ে ককবরক লাইব্রেরী গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্ত ককবরক পাঠক এখানে এসে বই পড়েন না। বুধবার ককবরক দিবস উপলক্ষ্যে নুউাই অডিটোরিয়ামে ককবরক ভাষা বিষয়ক এক আলোচনাচক্রে আক্ষেপ করে একথা বলেন টিটিএএডিসি-র মুখ্য কার্যনির্বাহী সদস্য পূর্ণ চন্দ্র জমাতিয়া। তাঁর কথায়, ককবরক ভাষাকে আরও উন্নত করতে যুব সমাজকে বেশি করে এগিয়ে আসার প্রয়োজন রয়েছে।
প্রসঙ্গত, ককবরক দিবস উপলক্ষ্যে কোভিড-১৯ বিধি মেনে ককবরক দপ্তরের উদ্যোগে দুইদিন ব্যাপী ককবরক সাহিত্য সভার আজ ছিল অন্তিম দিন। এই উপলক্ষ্যে নুউাই অডিটোরিয়ামে ককবরক ভাষা বিষয়ক এক আলোচনাচক্রের আয়োজন করা হয়েছিল । এই আলোচনাচক্রের উদ্বোধন করেন মুখ্যনির্বাহী সদস্য পূর্ণচন্দ্র জমাতিয়া। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্বাহী সদস্য কমল কলই। সন্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য দপ্তরের নির্বাহী সদস্য রাজেশ ত্রিপুরা, মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক সি. কে. জমাতিয়া। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শিক্ষা দপ্তরের নির্বাহী সদস্য চিত্তরঞ্জন দেববর্মা। স্বাগত ভাষণ রাখেন শিক্ষা দপ্তরের প্রধান আধিকারিক অমরদ্বীপ দেববর্মা। ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন ককবরক দপ্তরের প্রধান আধিকারিক বিনয় দেববর্মা।
আজকের অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশন করেন ফোক মিউজিক কলেজের ছাত্রছাত্রীবৃন্দ। ককবরক ভাষায় সাহিত্য, সঙ্গীত, নাটক রচনায় বিশেষ অবদানের জন্য ২০২১ রাধামোহন ঠাকুর স্মৃতি পুরস্কার দেয়া হয়েছে অমূল্যরতন জমাতিয়া এবং অলিন্দ্র ত্রিপুরা স্মৃতি পুরস্কার দেয়া হয়েছে জয়ন্তী কলইকে। অমূল্যরতন জমাতিয়ার হাতে পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যনির্বাহী সদস্য পূর্নচন্দ্ৰ জমাতিয়া। জয়ন্তী কলইর হাতে পুরস্কার তুলে দেন শিক্ষা দপ্তরের নির্বাহী সদস্য চিত্তরঞ্জন দেববর্মা। পুরস্কার হিসেবে মানপত্র এবং ১০ হাজার টাকার চেক এডিসি প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাদেরকে দেয়া হয়েছে।
এডিসির মুখ্যনির্বাহী সদস্য পূর্ণচন্দ্র জমাতিয়া বলেন, আর্থিক সংকটের কারণে ককবরক ভাষা একাডেমী এবং ককবরক দপ্তরের উন্নয়নে কাজ করা যাচ্ছে না। ককবরক লাইব্রেরী গড়ে তোলা হয়েছে। কিন্তু ককবরক পাঠক এখানে এসে বই পড়ে না। তাঁর কথায়, ককবরক ভাষাকে উন্নত করতে যুব সমাজকে আরও বেশি করে এগিয়ে আসার প্রয়োজন। নব প্রজন্মকে লেখালেখিতে এগিয়ে আসতে হবে। তাঁর আক্ষেপ, ককবরক ব্লগ, ইউটিউব, সংবাদপত্র, ম্যাগাজিন এখনও ব্যাপকতা লাভ করতে পারেনি। সরকারি কাজে ককবরক ভাষায় কাজকর্ম আরও বাড়াতে হবে, বলেন তিনি। দীর্ঘ ৪৪ বছর পরও ককবরক ভাষা উন্নয়ন দিশাহীন ভাবে অগ্রসর হচ্ছে বলে তিনি তীব্র ভাষায় সমালোচনা করেন।
এদিন শিক্ষা দপ্তরের নির্বাহী সদস্য চিত্তরঞ্জন দেববর্মা, ককবরক ভাষাকে রাজ্যের দ্বিতীয় ভাষা বলা হয়। সরকারি স্বীকৃতি লাভ করেছে। তার জন্য দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা কেন পাবে, প্রশ্ন তুলেন তিনি। তাঁর বক্তব্য, দেশের অন্যান্য রাজ্যে বিভিন্ন জনজাতিদের মাতৃভাষা সরকারি স্বীকৃতি লাভ করেছে। কিন্ত সেখানে জনজাতিদের ভাষা দ্বিতীয় ভাষার মর্যাদা পাচ্ছে না বলে তিনি দাবি করেন। সরকারি কাজে ককবরক ভাষাকে আরও বেশি করে প্রয়োগ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। এডিসি প্রশাসনে ককবরক ভাষায় আবেদনকারীদের অধিক গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।
আজ স্বাস্থ্য দপ্তরের নির্বাহী সদস্য কমল কলই ভাষা লিপি বিতর্ক মিটিয়ে নেয়ার জন্য তিনি উপস্থিত সকলের কাছে আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ককবরক সরকারি স্বীকৃতি পেয়েছে, পাঠ্যক্রমে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। কিন্তু ভাষা লিপি নিয়ে আজও দ্বন্দ্ব চলছে। তাতে ভাষার উন্নয়ন অসম্ভব, দৃঢ়তার সাথে বলেন তিনি। মুখ্য কার্যনির্বাহী আধিকারিক সি. কে. জমাতিয়া বলেন, এডিসিতে চাকুরি প্রার্থীদের অবশ্যই ককবরক ভাষা জানতে হবে। ককবরক ভাষা সরকারি কর্মচারিদের শেখানোর জন্য স্বল্প সময়ের কোর্স চালু করার উদ্যোগ নেয়া হবে। সাথে তিনি যোগ করেন, ককবরক মাতৃভাষার সাথে সাথে হিন্দী, বাংলা, ইংরেজী ভাষা আমাদের চাকুরি সহ বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়। তার জন্য এই ভাষা শেখারও প্রয়োজন রয়েছে।

