Vote : পুর ও নগর নির্বাচনেও বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া ভোট শান্তিতেই সম্পন্ন

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ২৫ নভেম্বর৷৷ চড়িলাম / মেলাঘর / সোনামুড়া/ বিলোনীয়া/ খোয়াই/ কৈলাসহর/ তেলিয়ামুড়া/ ধর্মনগর, ২৫ নভেম্বর৷৷ কয়েকটি ছোটখাটো বিক্ষিপ্ত ঘটনা ছাড়া শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে রাজ্যের চৌদ্দটি পুর ও নগর সংস্থায়৷ যদিও এর আগেই বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজেপি ছয়টি নগর ও পুর সংস্থায় জয়ী হয়ে গিয়েছে৷
সোনামুড়া নগর পঞ্চায়েত এবং মেলাঘর পুর পরিষদের ভোট গ্রহণ পর্ব৷ সোনামুড়া নগর পঞ্চায়েত এর ১৩ টি আসনে এবং মেলাঘর পুর পরিষদের ১১ টি আসনে সকাল সাতটায় ভোট গ্রহণ শুরু হয়৷ মেলাঘর পুর পরিষদ এর ৪ নম্বর ওয়ার্ডে সকাল দশটায় ঝামেলা বাধেঁ৷ এই ওয়ার্ডের সিপিএম প্রার্থী ভোটগ্রহণ কেন্দ্রের ভেতরে ঢুকে ভোটারদের প্রভাবিত করার অভিযোগে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়৷ পরবর্তী সময়ে পুলিশ এবং নির্বাচনে যুক্ত আধিকারিকরা ছুটে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন৷ ৬ নম্বর আসনের ভোট হয় মেলাঘর পাবলিক লাইব্রেরীতে৷ এই আসেন মোট ভোটার ১০৩৬ জন৷ দুপুর ১২ টা পর্যন্ত ৪৬০ জন ভোটার ভোট দেন৷ বিজেপি প্রার্থী লিপিকা সাহা জানান সকাল থেকে মানুষ ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য লাইনে দাঁড়ান৷ বিরোধী প্রার্থীদেরও কোন অভিযোগ নেই৷ সোনামুড়া নগর পঞ্চায়েতের ১৩ টি আসনেই শাসক এবং বিরোধীদের এজেন্ট ছিল৷ ৬ নং আসনে দুপুর একটায় ৪৯২ টি ভোট পড়ে৷ ৯ নং আসনে বেরিপাড়া অঙ্গনওয়াড়ি সেন্টারে দেখা গিয়েছে সম্প্রতির ছবি৷ বিজেপি কংগ্রেস, সিপিএম, তৃণমূল এই চার প্রার্থী এবং কর্মী সমর্থকেরা মিলে মিশে একাকার৷ কারোরই কোন অভিযোগ নেই৷ রিটার্নিং অফিসার রতন ভৌমিক বেলা একটায় সাংবাদিকদের জানান এ পর্যন্ত সোনামুড়া নগর পঞ্চায়েতে ভোট পড়েছে ৭১ শতাংশ৷


মেলাঘর পুর পরিষদে ভোট পড়েছে ৬০ শতাংশ৷ সোনামুড়ার পাঁচ নং আসনের ভোট হয় কবি নজরুল মহাবিদ্যালয়ে৷ ৫৭৬ এর মধ্যে ৪৬০ টি ভোট কাস্টিং হওয়ার পর সেখানে ঝামেলা সৃষ্টি হয়৷ সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ পাঠিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে মহকুমা শাসক৷ রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমা শাসক রতন ভৌমিক জানান বিকাল পর্যন্ত রক্তপাতহীন ভোট গ্রহণ চলেছে৷ ছোট খাটো অভিযোগ এলে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে৷ মেলাঘর পুর পরিষদের ৪ নং আসনে নির্ধারিত সময়ের পরেও ভোটারের দীর্ঘ লাইন ছিল৷ সকলের ভোট গ্রহণ করেন প্রিসাইডিং অফিসার৷ সব মিলিয়ে পুলিশ টিএসআর বাহিনী মোতায়েন করে সোনামুড়া নগর পঞ্চায়েত এবং মেলাঘর পুর পরিষদের নির্বাচন প্রক্রিয়া সুষ্ঠু ভাবে সম্পন্ন করতে পেরেছে প্রশাসন৷ সর্বশেষে সোনামুড়া নগর পঞ্চায়েতে ভোট পড়েছে ৮৮.৯০ শতাংশ৷ মেলাঘর পুর পরিষদে ভোট পড়েছে ৮৫ শতাংশ৷ বিধায়ক সুভাষ চন্দ্র দাস, জেলা সভাধিপতি সুপ্রিয়া দাস দত্ত, বিজেপির প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক কিশোর বর্মণ, জেলা সভাপতি দেবব্রত ভট্টাচার্য, সহসভাপতি তফাজ্জল হোসেন, সংখ্যালঘু মোর্চার প্রদেশ সহসভাপতি শাহ আলম সহ বিজেপির নেতৃত্ব দলীয় অফিসে বসে ভোটের সার্বিক খবরাখবর রেখেছেন৷ তৃণমূল নেতা ধ্রুব রঞ্জুন চৌধুরী, রাকেশ দাসকেও বুথের বাইরে দেখা গিয়েছে৷


বিলোনিয়া পৌর পরিষদের মোট সতেরোটি ওয়ার্ডে নির্বাচন চলছে, এরমধ্যে পোলিং স্টেশনের সংখ্যা ১৮ টি৷ সকাল থেকেই শান্তিপূর্ণভাবে ভোট চলছিল ঠিক সকাল দশটার সময় সিপিআইএমের ওয়ার্ড প্রার্থীরা শাসকদলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে বিলোনিয়া মহকুমা শাসকের কার্যালয়ের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শনে মিলিত হয়৷ প্রায় এক থেকে দুই ঘন্টা চলে বিক্ষোভ৷ তাদের দাবি বিলোনিয়া পৌর পরিষদের বিভিন্ন ওয়ার্ডে সিপিআইএম প্রার্থীদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না, তাদেরকে বাড়ি ফেরত যেতে বলা হচ্ছে৷ এই অভিযোগ এনে সিপিআইএম বিলোনিয়া মহকুমা কমিটির নেতৃবৃন্দরা ও বিক্ষোভ কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন৷ এতে উপস্থিত ছিলেন সিপিআইএমের প্রাক্তন বিধায়ক বাসুদেব মজুমদার মহকুমা সম্পাদক তাপস দত্ত, সহ অসংখ্য কর্মী সমর্থকরা৷ এনিয়ে বিলোনিয়া মহকুমা শাসকের কার্যালয়ের সামনে জোরদার নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে৷ তাদের একটাই দাবী পুনরায় নির্বাচন প্রক্রিয়া করতে হবে৷ এরপর ট্টঞ্জ এর কাছ থেকে বিষয়টিকে দেখা হবে বলে আশ্বাস পেয়ে তারা বিক্ষোভ প্রদর্শন মুক্ত করেন৷ শাসক দলের পাল্টা অভিযোগ আজ দুপুরে বিলোনিয়া বিজেপি মন্ডল কার্যালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করা হয় সেখানে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে বিলোনিয়ার বিধায়ক অরুণ চন্দ্র ভৌমিক এবং বিজেপির মন্ডল সভাপতি গৌতম সরকার, বলেন এটি পুরো পরিকল্পিত ভাবে সাজানো নাটক সিপিআইএমের৷ বিজেপি কার্যকর্তাদের ধরনের কোন ঘটনার সাথে যুক্ত নয়৷ বিলোনিয়া পৌর পরিষদের সবকটি ওয়ার্ডে শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন চলছে৷ ভোটাররা আনন্দের সহিত এসে যার যার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিয়ে যাচ্ছেন৷ এতে বিজেপির কার্যকর্তা আরো তাদেরকে সহযোগিতা করছেন৷ সিপিআইএম প্রার্থীরা হেরে যাবে বলেই এই ধরনের নাটক শুরু করেছে আজকের এই শান্তিপূর্ণ নির্বাচনের দিনে৷ এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়৷ পরবর্তী সময়ে রিটার্নিং অফিসার তথা মহকুমা শাসক মানিক লাল দাস সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন সব কয়টি প্রশাসনিক আধিকারিকরা রয়েছেন এখন পর্যন্ত তেমন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনার খবর আসেনি৷


খোয়াই পুর পরিষদে ব্যাপকহারে ছাপ্পা ভোট ও বুথ দখলের অভিযোগ করেছে সিপিআইএম৷ খোয়াই পুর পরিষদে পুনঃনির্বাচনের দাবি জানিয়েছে দল৷ শাসকদল দল বহিরাগতদের এনে নির্বাচনে ছাপ্পা ভোটের উৎসব করল খোয়াই পরিষদ নির্বাচনে৷খোয়াইতে ভোটের নামে প্রহসন হয়েছে৷ এটা নির্বাচনের নামে এক প্রকার গনতন্ত্রকে গলাটিপে হত্যা করেছে শাসক দল বিজেপি৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্বাচন নিয়ে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে গিয়ে সংবাদ মাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে এমনটাই বললেন খোয়াইয়ের বাম বিধায়ক নির্মল বিশ্বাস৷ তিনি আরো বলেন, সকাল থেকে বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রের সামনে যারা ভোট দিতে আসছিলেন তাদের মধ্য থেকে বামপন্থী ভোটারদের চিহ্ণিত করে ফিরিয়ে দেওয়া হয় এবং শারীরিক নিগ্রহ করা হয়৷ ভোটারদের এমনই অভিযোগ৷ রাজ্যের শাসক দল এবং প্রশাসনের এক নগ্ণরূপ পরিলক্ষিত হয় খোয়াইতে৷ সুষ্ঠুভাবে নির্বাচন করার জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করেনি প্রশাসন৷ গতকাল থেকে বহিরাগতদের দখলে চলে যায় খোয়াইর পুরো এলাকা৷ বিভিন্ন গ্রামীণ এলাকা থেকে শত শত মানুষকে এনে খোয়াই পুরভোটে ছাপ্পা ভোটের উৎসব করছে শাসক দল৷ এমনই অভিযোগ করলেন বিধায়ক৷ পাশাপাশি আটটি আসনের সিপিআইএমের প্রার্থীরাও ভোট দিতে পারেনি৷ সিপিআইএম এই নির্বাচনকে বাতিল করে অবিলম্বে সুষ্ঠু পরিবেশে পুনর্নির্বাচন করার দাবি তুলেছে৷এদিন প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন সিপিএমের মহকুমা সম্পাদক পদ্ধকুমার দেববর্মা, যুব নেতা পলাশ ভৌমিক প্রমূখ৷


কঠোর নিরাপত্তা বলয়ের মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণভাবেই সকাল ৭টা থেকে ভোট শুরু হলো গোটা রাজ্যের সাথে তেলিয়ামুড়া পৌর পরিষদ নির্বাচন৷ এই নির্বাচনে মোট ১৫ টি আসনে হবে ভোটদান প্রক্রিয়া৷ সকাল সকাল তেলিয়ামুড়া পৌর পরিষদের ১,২,৫ নং ওয়ার্ড গুলিতে স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে উৎসবের মেজাজে জনগণ ভোট দিতে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে প্রত্যক্ষ করা গেল৷ শান্তিপূর্ণভাবে নির্বিঘ্নে ভোটদান পর্ব শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন পৌর পরিষদের প্রার্থীরা৷ তবে নির্বিঘ্নে এবং শান্তিপূর্ণভাবে যাতে নির্বাচন সাঙ্গ হয় তার জন্য ত্রিপুরা স্টেট রাইফেলস, ত্রিপুরা পুলিশ মোতায়ন করা হয়েছে মোট ২২ টি পোলিং স্টেশন গুলিতে৷ তবে স্পর্শকাতর’’ পোলিং স্টেশন যথাক্রমে ১৩,১৪,১৫ এই সকল ওয়ার্ড গুলিতে কেন্দ্রীয় আধা সামরিক বাহিনী মোতায়ন করা রয়েছে৷ যদিও কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি তেলিয়ামুড়া পৌর পরিষদ নির্বাচনে৷ তেলিয়ামুড়া পৌর পরিষদের নির্বাচনে গণদেবতা ঘটিয়েছেন প্রায় ৮৫.৬৭ শতাংশ ভোট দিয়েছেন৷ কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে দিয়ে ভোট গ্রহণ পর্ব শেষ হয়েছে তেলিয়ামুড়া পৌর এলাকায়৷


গোটা রাজ্যের সাথে উত্তর জেলার ধর্মনগর পুর পরিষদের পঁচিশটি ওয়ার্ডের মধ্যে চবিবশটি ওয়ার্ডের ভোট শান্তি পূর্ন ভাবে শেষ হয়েছে৷ তিন নং ওয়ার্ডে শাসক বিজেপি দল বিনা প্রতিধন্ধিতায় জয় লাভ করাতে এই ওয়ার্ডে নির্বাচন করা হয়নি৷ বৃহস্পতিবার সকাল সাতটা থেকেই ভোট সেন্টার গুলিতে ভোটাররা লাইন ধরে ভোট দেন৷ ধর্মনগর পুর পরিষদের পাঁচটি ভোট কেন্দ্রে সন্ধ্যা ছয়টা ত্রিশ মিনিট পর্যন্ত ভোট গ্রহন চলে৷ সকালের দিকে ভোট কেন্দ্র গুলিতে ভোটারদের লাইন থাকলেও দুপুরে ভোট কেন্দ্র গুলি ছিল ফাঁকা৷কিন্ত পরন্ত বিকালে ভোটাররা ভোট কেন্দ্রে এক সাথে আসর ফলে ভোট কেন্দ্র গুলিতে ভোট গ্রহনে দেরি হয়৷এদিন বয়স্ক পুরুষ মহিলারা পরিবারের লোকজনের সাথে ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে দেখা যায়৷ ভোট গ্রহনকে কেন্দ্র করে কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি৷ কংগ্রেস নেতা মহাম্মদ বদরুজ জমান অভিযোগ করে বলেন ধর্মনগর পুর পরিষদের পাঁচ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী অভিজিৎ করকে শাসক বিজেপি দলের কর্মীরা ভোট দিতে দেয়নি বলে অভিযোগ৷ তবে কংগ্রেস প্রার্থীর সাথে যোগাযোগ করা যায়নি৷ধর্মনগর পুর পরিষদ এলাকাতে শতকরা ৭৭.৮২ শতাংশ ভোট পড়েছে৷ এদিকে পানিসাগর নগর পঞ্চায়েত এলাকাতে ও শান্তিপূর্ন ভাবে ভোট গ্রহন পর্ব সম্পন্ন হয়েছে৷ পানিসাগরে ৮১.৫৫ শতাংশ ভোট পড়েছে৷
উৎসবের মেজাজে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে কৈলাসহর পুর পরিষদের কুড়িটি বুথে৷ সতেরটি আসনের জন্য ভোট গ্রহণ করা হয়েছে৷ মোটা ভোটারের ৭৯ শতাংশ ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছেন৷ যথা সময়ে ভোট শুরু এবং সম্পন্ন হয়েছে৷ কোথাও কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার খবর নেই৷ সংবাদ লেখা পর্যন্ত জানা গিয়েছে নির্বিঘ্নেই স্ট্রং রুমে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ইভিএম৷ মোট ৫৬ জন প্রার্থীর ভাগ্য এখন ইভিএমে বন্দী হয়ে আছে৷ এদিকে, ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার দুইটি জায়গায় ইভিএমে গোলযোগ দেখা দেয়৷ পরবর্তি সময়ে ইভিএম পরিবর্তন করে ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু হয়৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *