Rejects plea : দুই আইনজীবী ও সাংবাদিকের বিরুদ্ধে ইউএপিএ বলে পুলিশের দায়েরকৃত মামলা বাতিলের আবেদন না-মঞ্জুর সুপ্রিম কোর্টে

নিজস্ব প্রতিনিধি, আগরতলা, ১৭ নভেম্বর৷৷ দুই আইনজীবী এবং এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন-১৯৬৭ (ইউএপিএ)-এর বলে ত্রিপুরা পুলিশের দায়েরকৃত মামলা বাতিলের আবেদন মঞ্জুর করেনি সুপ্রিম কোর্ট৷ তবে তাঁদের গ্রেফতারিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে দেশের সবর্োচ্চ আদালত৷ কিন্তু তদন্তকাজ বন্ধ করার জন্য আদেশ দেয়নি প্রধান বিচারপতি এনভি রামান্নার নেতৃত্বে গঠিত তিন বিচারপতির বেঞ্চ৷ প্রধান বিচারপতি রামান্না, বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চ ওই আবেদনের শুনানি শেষে ত্রিপুরা সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ পাঠিয়েছে৷


প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে হিন্দুদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ত্রিপুরায় বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ প্রদর্শন হয়েছিল৷ বিশ্বহিন্দু পরিষদ সহ বিভিন্ন সংগঠন প্রতিবাদে সোচ্চার হয়৷ এমনই এক বিক্ষোভ কর্মসূচিকে ঘিরে উত্তর ত্রিপুরা জেলা পানিসাগর থানাধীন রোয়াবাজার এলাকায় উত্তেজনার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল৷ ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়ানো হয়৷
নেটিজেনদের একাংশ ত্রিপুরার বাইরের হিংসার ছবি এনে রাজ্যের ঘটনা উল্লেখ করে প্রচারে নিয়েছিলে৷ এতে মসজিদে অগ্ণিকাণ্ড এবং ভাঙচুরের ঘটনা দেখানো হয়৷ ত্রিপুরা পুলিশ তদন্তে নেমে এ ধরনের কোনও ঘটনার প্রমাণ পায়নি৷ কিন্তু গুজব সারা দেশে এতটাই ছড়িয়ে পড়েছিল যে বিভিন্ন সংগঠন ত্রিপুরার পরিস্থিতির খোঁজ নেওয়ার জন্য ছুটে আসে৷


সত্য অনুসন্ধানের নামে দিল্লি ভিত্তিক আইনজীবীদের এক প্রতিনিধি ত্রিপুরায় এসে বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে৷ বহু সাংবাদিকও ত্রিপুরায় ওই গুজবের সত্যতা যাচাই করতে আসেন৷ কিন্তু দেখা গেছে, ত্রিপুরায় সত্যের খোঁজে এসে অনেকেই উল্টে গুজব ছড়িয়েছেন৷ এমনই আইনজীবী মুকেশ, আইনজীবী আনসারুল হক আনসারী এবং সাংবাদিক শ্যাম মীরা সিং ত্রিপুরার ঘটনা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন৷ সত্যের সাথে মিল না রেখে তাঁরা ওই সমস্ত পোস্ট দিয়েছেন অভিযোগ এনে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে৷ ত্রিপুরা পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে গত ৩ নভেম্বর ইউএপিএ বলে মামলা রুজু করে নোটিশ পাঠিয়েছিল৷


শুধু ওই তিনজন নয়, ত্রিপুরা সম্পর্কে সামাজিক মাধ্যমে গুজব রটানোর অভিযোগে পুলিশ ১৪০ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছে৷ বহু টুইটার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করার জন্য নোটিশ পাঠিয়েছে৷ পুলিশ জানিয়েছে, সামাজিক মাধ্যমে গুজব ছড়িয়েছে এমন ১২৮টি পোস্ট চিহ্ণিত হয়েছে৷ তাতে ৯৪টি টুইটার পোস্ট, ৩২টি ফেসবুক পোস্ট এবং দুটি ইউটিউব পোস্ট রয়েছে৷ ত্রিপুরা পুলিশের দাবি, এখন পর্যন্ত ১২৪ জন সাক্ষীর জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে৷ যা প্রমাণ করেছে, ত্রিপুরায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়ার মতো কোনও ঘটনাই ঘটেনি৷


এদিকে, ওই দুই আইনজীবী এবং এক সাংবাদিক ত্রিপুরা পুলিশের দায়েরকৃত এজাহার বাতিল করার আবেদন নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন৷ তাঁদের বক্তব্য, পুলিশের ওই এজাহারে সংবিধান প্রদত্ত বাকস্বাধীনতা হরণ করা হচ্ছে৷ এজাহারে তাঁদের বিরুদ্ধে পুলিশ ইউএপিএ-তে মামলা রুজু করেছে৷ আজ সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি এনভি রামান্না, বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড় এবং বিচারপতি সূর্য কান্তের বেঞ্চে শুনানি হয়েছে৷ আদালত ত্রিপুরা পুলিশের এজাহার বাতিলের আবেদন মঞ্জুর করেনি৷ তবে, আবেদনকারীদের গ্রেফতারিতে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে৷ সাথে পুলিশের তদন্ত কাজ বন্ধ করারও নির্দেশ দেয়নি আদালত৷ তবে ত্রিপুরা সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারকে নোটিশ পাঠিয়েছে আদালত৷ ধারণা করা হচ্ছে, আগামী ৩ জানুয়ারি ওই আবেদনের ওপর পুনরায় শুনানি হবে৷

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *